কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে নান্যাচর-কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ

0

রাঙামাটি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
B-Rহিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ বিষয়ে সিআইডির দাখিল করা চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে অবিলম্বে চিহিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামআজ ৬ জানুয়ারি রবিবার রাঙামাটির নান্যাচর ও কুদুকছড়িতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বক্তারা এ দাবি জানান
নান্যাচর উপজেলা সদরের বিশ্রামাগারের মাঠ থেকে আজ রবিবার সকাল ১১টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নান্যাচর বাজার প্রদক্ষিণ করে আবার বিশ্রামাগার মাঠে এসে শেষ হয়মিছিল পরবর্তী সেখানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কণিকা দেওয়ানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন নান্যাচর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কুমেন্দু বিকাশ চাকমা, সাবেক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুশীল জীবন চাকমা, নান্যাচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ খীসা ও মেম্বার সেন্টু চাকমা এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নান্যাচর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমাপাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নান্যাচর কলেজ শাখার সভাপতি রিপন আলো চাকমা সভা পরিচালনা করেন
সমাবেশে বক্তারা কল্পনা চাকমা অপহরণ বিষয়ে সিআইডির দাখিল করা চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এ রিপোর্ট প্রহসনমুলকএ রিপোর্টের মাধ্যমে চিহ্নিত অপহরণকারীদের পুরোপুরি আড়াল করা হয়েছেপার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এ রিপোর্ট কিছুতেই মেনে নেবে নাঅবিলম্বে এ রিপোর্ট প্রত্যাহার করে বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপে তদন্তের দাবি জানান বক্তারা
বক্তারা আরো বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এ দেশের শাসকগোষ্ঠী কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের মরিয়া হয়ে রা করে চলেছেএভাবে প্রকৃত অপরাধীদের রা করার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে
বক্তারা অবিলম্বে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনা নিছক নারী নির্যাতন, নারী ধর্ষণের মতো ঘটনা নয়, এই ঘটনা সংখ্যালঘু জাতির জনগণকে ধ্বংস করার সুদূরপ্রসারি সরকারী চক্রান্তআগামী ১৩ জানুয়ারী সিআইডির চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ও প্রহসনমূলক বিচার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যদি অপহরণকারীদের রা করা হয় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ চুপ করে বসে থাকবে নাপ্রয়োজনে আবারো বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বক্তারা সরকারকে হুঁশিয়ার করেন
বক্তারা কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য সকল মানবতাবাদী শক্তি ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান
অপরদিকে দুপুর ১টায় কুদুকছড়িতে এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়মিছলটি বড় মহাপুরম উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে থেকে শুরু হয়ে কুদুকছড়ি বাজার প্রদণি করে ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কাজলী ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি বিলাস চাকমা ও ঘিলাছড়ি নারী সমাজের নেত্রী শান্তি প্রভা চাকমা
বক্তারা কল্পনা অপহরণ বিষয়ে সিআইডির চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেন এবং অবিলম্বে চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার দোসরদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান
উল্লেখ্য, হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন (১১ জুন মধ্যরাত) রাঙামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে কজইছড়ি ক্যাম্পের তৎকালীন কমান্ডার লেঃ ফেরদৌস ও তার সশস্ত্র সহযোগীদের দ্বারা অপহৃত হন২০১০ সালের ২১ মে বাঘাইছড়ি থানার তৎকালীন এস আই ফারুক আহম্মদ কল্পনা চাকমা অপহরণ বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেনরিপোর্টে তিনি অপহরণকারীদের সনাক্ত করতে ও কল্পনা চাকমার অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দিতে ব্যর্থ হনমামলার বাদী কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজী আবেদন জানালে আদালত সিআইডি দ্বারা তদন্ত করানোর নির্দেশ দেন
এরপর সিআইডির মোঃ শহীদুল্লাহ গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর কল্পনা চাকমার অপহরণ বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেনরিপোর্টে তিনি বলেন, “আমার তদন্তকালে উপযুক্ত স্যা ও প্রমাণের অভাবে কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাইএমনকি তাহার সঠিক অবস্থানও নির্ণয় করা সম্ভব হয় নাইভিকটিম কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হইয়াছেএই লে বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ ছাড়াও বাদী পরে এবং এলাকার লোকজনের সহায়তা কামনা করা হইয়াছেএত চেষ্টা চালাইয়াও তাহার সঠিক অবস্থান সম্বন্ধে কোন সংবাদ পাওয়া যায় নাইমামলাটি দীর্ঘ প্রায় ১৬ বৎসর ধরিয়া তদন্ত কার্যক্রম চালাইয়াছিকিন্তু কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের মত কোন ফলপ্রসূ লণ দেখা যাইতেছে নাঅদূর ভবিষ্যতেও যে উদ্ধার হইবে – তাহার কোন লণ দেখা যাইতেছে নাতাই মামলাটির তদন্ত দীর্ঘায়িত না রাখিয়া চূড়ান্ত রিপোর্ট সত্য নং – ০৯ তারিখ ২৬/০৯/২০১২ ইং ধারা ৩৬৪ দঃ বিঃ দাখিল করিলাম।”
এর আগে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালের ১৯ আগষ্ট সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবদুল জলিলকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেতদন্ত কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অনুপম সেন ও চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার সাখাওয়াত হোসেনএই কমিটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দিলেও আজ পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More