খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ : পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবি

0

খাগড়াছড়ি : সংবিধানের বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিল করে সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

আজ শনিবার (৩০ জুন ২০১৮) সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরে স্বনির্ভরে ইউপিডিএফ-এর কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তারা এই দাবি জানান।

‘পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল কর, সংবিধানে স্ব স্ব জাতিসত্তার স্বীকৃতি দাও’ ‘সেনা ক্যম্প সম্প্রসারণ, ভূমি বেদখল, যৌথ অভিযানের নামে ধরপাকড়, হয়রানি, লুটপাট, নারী নির্যাতন, খুন-গুম-অপহরণ বন্ধ কর এবং ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা তুলে নাও; এসব বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন দেড় হাজার ছাত্র-যুব-নারী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেন।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি পলাশ চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক অবনিকা চাকমা প্রমুখ।

 সমাবেশ অংগ্য মারমা বলেন, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন হওয়ার পর থেকে এদেশের শাসকচক্র তথা আওয়ামী লীগ এদেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর উপর উগ্রবাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ৭৩ সালে শেখ মুজিবুর রহমান রাঙামাটিতে সফরে গিয়ে এক জনসভায় পাহাড়িদের বাঙালি হতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারই ধরাবাহিকতায় জনগণের মতকে উপেক্ষা করে ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাসের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার সরকার এদেশের ৪৫টির অধিক সংখ্যালঘু জাতিসত্তার জনগণের ওপর উগ্রবাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে বহাল রেখে ধর্র্মনিরপেক্ষতাকে পদদলিত করেছে।

তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা ৪৭ বছর পরও দেশে পাকিস্তানপন্থী একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রটি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে নিপীড়ন-নির্যাতন করছে, হত্যা-গুম-অপহরণের মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের অস্তিত্ব ধ্বংস করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। নব্য মুখোশ বাহিনী গঠন করে ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমাসহ ১৫ জন নেতা-কর্মী ও সমর্থককে হত্যা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রীকে অপহরণ করেছে। এই পাকিস্তানপন্থী সেনা চক্রটি পার্বত্য চট্টগ্রামে কৃত্রিম সংঘাত সৃষ্টি করে সেনাশাসন জারি রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণ বন্ধ ও সেনাবাহিনী প্রত্যাহার,  ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমাসহ ১৫ নেতা-কর্মী, সমর্থকের খুনী নব্য মুখোশ-সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার, কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার দাবি করেন।

সমাবেশ থেকে বক্তারা বিতর্কিত ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ আইন বাতিলপূর্বক সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণার জোর দাবি জানান।

এছাড়া বক্তারা যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে অন্যায় ধরপাকড়-নির্যাতন, খুন-গুম-অপহরণ বন্ধ করা, রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, ইউপিডিএফ-এর সভাপতিসহ দলের নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধি-হেডম্যান কার্বারীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা কিশোরী ও বিলাইছড়ি-লামায় মারমা তরুনী ধর্ষকদের সাজার দাবি জানিয়েছেন।

সমাবেশের শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি স্বনির্ভর বাজার থেকে জেলা পরিষদ, নারাঙহিয়া রেড স্কোয়ার হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ারে যেতে চাইলে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা প্রায় আধ ঘন্টা ব্যাপী পুলিশের সাাথে মুখোমুখি অবস্থানে থেকে বিভিন্ন শ্লোগানের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায়। পরে সেখান থেকে মিছিলটি ফিরে এসে রেডস্কোয়ারের রাস্তা দিয়ে উপালী পাড়া, মধ্য খবংপুজ্জে-দশবল হয়ে আবার স্বনির্ভরে বাজারে গিয়ে শেষ হয়।

এদিকে, মহালছড়ি থেকে সমাবেশে অংশগ্রহণকারী লোকজন সমাবেশ শেষে গাড়িযোগে ফিরে যাবার পথে বদনালা এলাকায় পৌঁছলে সংস্কারবাদী জেএসএস সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ত্রাসীরা প্রথমে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে এবং পরে একটি গাড়ির চাকার উপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। তবে এ এতে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে তারা জানান।

—————
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More