শিক্ষাথীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার দাবিতে
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে তিন দিনের ক্লাস বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার দাবিতে এবং কলেজে অধ্যয়নরত পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের উপর দফায় দফায় সন্ত্রাসী কায়দায় বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ কর্তৃক অতর্কিত হামলা, মারধর, হুমকি এবং পাহাড়ি ছাত্রীদের উপর ইভটিজিং করার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে ৪ অক্টোবর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত তিন দিনের ক্লাস বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (০২ অক্টোবর’১৬) বিকাল ৫টায় খাগড়াছড়ি টং রেস্টুরেন্ট এন্ড কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র তপন চাকমা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের বিএসএস ২য় বর্ষের ছাত্র সুজেশ চাকমা, অনার্স ইতিহাস বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র অংহ্লাউ মারমা ও কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র সুব্রত ত্রিপুরা প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, আমরা উদ্বেগের সাথে সাথে লক্ষ্য করছি যে একটি কলেজে শিক্ষা গ্রহণের জন্য যে পরিবেশ, নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কাঠামো থাকা দরকার সেই পরিবেশ কলেজে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কে ভুগছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে কোন গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। কলেজ ক্যাম্পাস আজ যেন বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের মৃগয়া ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদ নামধারী বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য। তারা প্রতিনিয়ত পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের উপর চালাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের হয়রানি মূলক কর্মকান্ড। এতে শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় পাঠ্যে মনোনিবেশ করা অস্বস্তিকর হয়ে পড়েছে।
এতে তারা আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা কলেজে স্টাডি সার্কেল করতে পারে না, কলেজে বসে আড্ডা দিতে পারে না। প্রতিবারেই বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা বাধাগ্রস্থ করছে ছায়া প্রশাসনের মতো। প্রতিবাদ করলে নেমে আসে হুমকিসহ শারিরিক নির্যাতন। আমাদের শিক্ষকরাও তাদের এহেন ক্রিয়াকলাপ থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
এছাড়াও বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ নেতা- এসএম মাসুম রানা (বর্তমান ২ নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর) অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন নকল করার সময় ধরা পড়লে দর্শন বিভাগের শিক্ষক জেবিন চাকমাকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অপদস্থ ও হুমকি দিয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ কর্তৃক সংঘটিত কিছু ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়-
– ২৪ জুলাই ২০১৬ মাঈনউদ্দিন এর নেতৃতে বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মী বহিরাগতরা ক্লাশে ঢুকে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়া হয়।
– ২০ আগষ্ট ২০১৬ মো: আরমান ভূইয়া এক পাহাড়ি ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় এবং প্রস্তাবে রাজি না হলে জোরপূর্বক ছবি তুলে ফেইসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
– ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ একাদশ শ্রেণীর ছাত্র শিষ্ট চাকমা ও তার সহপাটি রিপ রিপ চাকমা বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ কর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হন।
– ০১ অক্টোবর ২০১৬ অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র অংহ্লা মারমাকে মারধর করে বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা।
– ০২ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ১১ টার দিকে বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি মাঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রায় ২০-৩০ জন নেতাকর্মী পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের হুমকি দেয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো: ১. খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে শিক্ষার গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; ২.জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; ৩. আইন- শৃঙ্খলা রক্ষার নামে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে; ৪. পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের উপর চিহ্নিত হামলাকরী এসএম মাসুম রানা ও মাঈনউদ্দিনসহ সংঘটিত ঘটনার সাথে জড়িতদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তপন চাকমা বলেন, সরকারি কলেজের বাঙালী ছাত্র পরিষদের নেতা এসএম মাসুম রানা ও মাঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে বহিরাগত লোক নিয়ে বিভিন্ন সময়ের কলেজের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ি ছাত্রদের উপর অতর্কিত হামলা, মারধর, হুমকি ও পাহাড়ি ছাত্রীদেরকে ইভটিজিংয়ের মত ঘটনা ঘটালে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজ প্রশাসনকে পর্যায়ক্রমের বার বার অবগত করলেও কলেজ প্রশাসন বাঙালী ছাত্র পরিষদে চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে সে বিষয়ের কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি অবিলম্বে বাঙালী ছাত্র পরিষদ কর্তৃক এযাবৎকালে কলেজের পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা, মারধর, হুমকি ও পাহাড়ি ছাত্রীদেরকে ইভটিজিংয়ের মত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করে চিহ্নিত অপরাধীদেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও কলেজের পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ কলেজে গণতান্ত্রিক ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কলেজ প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ৪ অক্টোবর ২০১৬ থেকে ৬ অক্টোবর ২০১৬ পর্যন্ত তিন দিন খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের শ্রেণী কার্যক্রম বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এবং দাবি আদায়ের জন্য সর্বাত্মকভাবে কর্মসূচি সফল করতে কলেজের সকল পাহাড়ি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।