তাইন্দং সেটলার হামলার ১ বছর
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গার তাইন্দংয়ে ভয়াবহ সেটলার হামলার ১ বছর পূর্ণ হল আজ। গতবছর এই দিনে কামাল হোসেন নামের এক মোটর সাইকেল চালককে দিয়ে অপহরণ নাটক সাজিয়ে সেটলার বাঙালিরা পরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের গ্রামে হামলা চালায় এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক লুটপাট সংঘটিত করে। সেটলাররা ১২জন পাহাড়িকে বেদম মারধর করে এবং বগাপাড়া, সর্বেশ্বর পাড়া, বান্দরশিং পাড়া, মনুদাস পাড়া ও তালুকদার পাড়ায় ৩৪টি বাড়ি, বৌদ্ধ বিহারের একটি দেশনা ঘর ও একটি দোকান পুড়ে ছাই করে দেয়।
সেটলারদের হামলার কারণে তাইন্দং এলাকার ১২টি গ্রামের তিন সহস্রাধিক পাহাড়ি নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ বাড়িঘর ছেড়ে নো ম্যান্স ল্যান্ডে, আশে-পাশের জঙ্গলে ও পানছড়ি উপজেলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। হামলার ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ২ মাস বয়সী শিশু আশামনি চাকমা মারা যায়।
পরে ওইদিন রাতে কামাল হোসেন লুকানো অবস্থা থেকে বের হয়ে আসলে ঘটনার আসল রহস্য জানা যায়।
হামলার পর তৎকালীন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার নানা প্রতিশ্রতি দিয়ে পালিয়ে যাওয়া লোকজনকে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এরপর সংসদীয় প্রতিনিধি দল ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ হামলার প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে।
এ ঘটনার পর ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে অনিল বরণ চাকমা বাদী হয়ে মাটিরাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশ অপহরণের অভিনয়কারী কামাল হোসেন, হামলার মুল পরিকল্পনাকারী সিরাজুল ইসলাম সিরাজী, আবেদ আলী মেম্বার, ইধন সর্দার সহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি। বর্তমানে তারা সবাই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এজাহারভূক্ত ৮ নং আসামী মো: মনির হোসেন ও ১৪ নং আসামী মো: চান মিয়াকে আসামীর তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গত ১৫ জুলাই পুলিশ মামলার চূড়ান্ত চার্জশীট দাখিল করে। এর বিরুদ্ধে বাদী পক্ষ নারাজি আবেদন জানালে খাগড়াছড়ি জেলা আমলি আদালত মামলাটি সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে, হামলাকারীরা জামিনে মুক্ত থাকায় যে কোন সময় তারা আাবরো সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা করতে পারে বলে পাহাড়িরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
গত ২৩ জুলাই বুধবার দিবাগত রাতে তঙ্গ মহাজন পাড়ায় জ্যোতি বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা ও তার স্ত্রীকে সেটলার কর্তৃক গুলি করার ঘটনায় পাহাড়িদেরকে আরো আশঙ্কিত করেছে বলে জানিয়েছেন তাইন্দং এলাকার বাসিন্দা ও ত্রাণ বিতরণ কমিটির আহ্বায়ক বকুল কান্তি চাকমা।
অন্যদিকে, সরকারের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আশ্রায়ন প্রকল্পের আওতায় পুড়ে দেয়া বাড়িগুলো পুনঃনির্মাণ করা হলেও মানসম্মত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন পাহাড়িরা।
———–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।