স্ব স্ব বসতভিটায় পুনর্বাসনের দাবিতে

দীঘিনালায় বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

0

21 family press conferenceদীঘিনালা: দীঘিনালায় বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিপুরণসহ স্ব স্ব বসত ভিটায় পুনর্বাসনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে।

আজ শুক্রবার (২৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় দীঘিনালা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ২১ পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কিরণ চাকমা। এতে উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা ক্ষতিপূরণসহ স্ব স্ব জায়গায় পুনর্বাসন, বিজিবি কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ৩ দফা দাবি জানান।

নীচে সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য হুবহু দেয়া হলো:

সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ,
আপনারা আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আপনারা জানেন ১৪ই মে ২০১৪ সালে রাতের অন্ধকারে বিজিবি ৫১নং ব্যাটালিয়নের সদস্যরা যত্ন মোহন ও শশী মোহন কার্বারী পাড়ায় জোর পূর্বক আমাদের বাস্তুভিটা বেদখল করে নেয়। ১৪ জুন ২০১৪ইং তারিখে আমাদের উপর অতর্কিতে হামলা করে তাড়িয়ে দেয়। সেই থেকেই আমরা পরিত্যাক্ত কৃষি অফিসে গাদাগাদি ভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছি। ১০ জুনের পর থেকে দীঘিনালার সর্বস্তরের জনগণ, দীঘিনালার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও এলাকার মুরুব্বীগণ ৫১নং বিজিবি সদর দপ্ততর স্থাপনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। আমরা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পার্বত্যমন্ত্রণালয় সহ অনেক জায়গায় সৃষ্ট সমস্যার প্রতিকার চেয়ে স্বারকলিপি দিয়েছি। আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের দুদর্শার সংবাদ সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় সংসদের একটি কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন সহ বিভিন্ন সংস্থার মানবতাবাদী মানুষ আমাদের দুঃখ দুর্দশা স্বচক্ষে দেখে গেছেন এবং বিভিন্ন আশ্বাস ও সহযোগিতার বাণী শুনিয়েছেন। কিন্তু আজও কোন আশার বাণী বাস্তব রুপ লাভ করেনি।

সম্মানিত সাংবাদিক বৃন্দ,
২৯৮নং খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনের সাংসদ বাবু কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ২১ পরিবারের সমস্যা সমাধানের জন্য দীঘিনালা উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বীদের সাথে আলোচনা করেন। মাননীয় এমপি’র আশ্বাসের ভিত্তিতে জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বীরা সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা উত্থাপন করেন এবং ৭(সাত) সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন।

কমিটির সুনির্দিষ্টি কর্মপরিকল্পনা গুলো হল:
১. মাননীয় সাংসদের নির্দ্দেশে দীঘিনালার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় হেডম্যানের সমন্বয়ে গঠিত ৭ সদস্যর একটি ‘জমি নির্বাচন কমিটি’ গত ২০ নভেম্বর ২০১৫ইং তারিখে ২১ পরিবারের জন্য মাথাপিছু ১(এক) একর দখলীয় খাস জমি নির্বাচন হয়। এই জমি বর্তমানে যাদের দখলে রয়েছে তাদের সবার সাথেও সন্তোষজনক বোঝাপড়া করে হয়। দখলে থাকা জমির মালিকরাও নি¤েœাল্লেখিত মূল্যে জমি প্রদানে সম্মত হয়েছে। ২১ পরিবারের পক্ষ থেকেও জমি নির্বাচন কমিটিকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, তাদের কোন আপত্তি নেই, মুরুব্বীদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। প্রতি একর জমির আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩,০০,০০০/-(তিন লক্ষ) টাকা। সুতরাং প্রতি একরজমির নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ পূর্বক অনতিবিলম্বে যে কোন সুবিধজনক সময়ে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে। ২১ পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত মোট ২১ একর খাস জমি প্রত্যেক পরিবার প্রধানের নামে সরকারী রেকর্ডভূক্ত করা ।

২. বরাদ্দকৃত এক একর জমির উপর প্রতি পরিবারের জন্য ৪(চার) কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা টিনশেড বাড়ি নির্মাণ করা। বাড়ির আয়তন হবে ২৪ ফুট বাই ২১ ফুট। মূল বাড়ির সাথে সংযুক্ত হবে রান্নাঘর ১টি, ল্যাট্রীন ১টি ও পানীয় জলের জন্য নলকূপ ১টি। স্বীয় বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার ২১ পরিবার যাতে ভবিষ্যতে স্বাবলম্বী হতে পারে সেজন্য পরিবার পিছু নগদ ৩,৫০,০০০/-(তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা প্রদান করা ।

৩. বিজিবি সদর দপ্তর স্থাপনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে সৃষ্ট সমস্যার কারণে যে সমস্ত ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছিল সেই সমস্ত মামলাসমূহ অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা।

৪. শশী মোহন কার্বারী পাড়ায় অবস্থিত ‘জেতবন বৌদ্ধ বিহার’টি পূনঃনির্মান করা।

৫. বাবুছড়া-দীঘিনালা সড়ক থেকে ২১ পরিবারের জন্য সৃষ্ট পাড়া পর্যন্ত কাঁচা রাস্তাটি ব্রিকসোলিং করা এবং ২১ পরিবারের জন্য সৃষ্ট পাড়াটি বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা।

৬. ২১ পরিবার ব্যতীত বিজিবি সদর দপ্তরের সীমানার মধ্যে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও জমি দখল হয়ে যাওয়া ১০(দশ) পরিবারের জমির মালিকদেরকেও এককালীন অর্থ সহায়তা প্রদান করা।

মাননীয় সংসদ সদস্য জনপ্রতিনিধিদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক আছে বলে আশ্বস্থ করলেও পরবর্তীতে কোন কারণ ছাড়াই এই উদ্যেগ থেকে সরে যায়।

মাননীয় সাংবাদিকবৃন্দ,
মাননীয় সংসদ সদস্য ছাড়াও দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জোন কমান্ডার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সরেজমিনে জায়গা পরিদর্শন করার কথা থাকলেও পরিদর্শনে আসেননি। সর্বশেষ গত ২২ মার্চ ২০১৬ খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক দীঘিনালায় আসলে আমরা ২১ পরিবারের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়। মাননীয় জেলা প্রশাসক অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমাদের সাথে কথা বলেন এবং সমাধানের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দ্রুত রিপোর্ট প্রদানের জন্য নির্দেশ দেন এবং দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। তাই, সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি:-

দাবী সমূহ:
১. স্ব-স্ব জায়গায় ক্ষতি পূরণসহ পুনর্বাসন করতে হবে।
২. বিজিবি কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. স্ব-স্ব জায়গা ফেরত দেওয়া হবে কি হবে না কিংবা পূণর্বাসন করা হবে কি হবে না তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে।

সাংবাদিক বন্ধুরা,
আপনাদের প্রতি একান্ত অনুরোধ আপনারা আমাদের এই বক্তব্য ও দাবী প্রকাশ করে দিয়ে আমাদের সাহায্য করবেন। অনেকক্ষন ধরে আমাদের বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
————–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More