দীঘিনালায় শহীদ ভরতদ্বাজ মণির ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

0

সিএইচটিনিউজ.কম
Dighinala,13.10.2014দীঘিনালা প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রামের ৮ সংগঠনের কনভেনিং কমিটির উদ্যোগে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ভরতদ্বাজ মণি চাকমার ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১৩ অক্টোবর সোমবার দীঘিনালায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে।

রক্তাক্ত ১৩ অক্টোবর ভুলি নাই, ভুলবো না, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না; পিতৃভূমি রক্ষার্থে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন, বাঁচার তাগিদে এক হোন, আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ুন” এইসব শ্লোগানে সকাল ৯টায় নবনির্মিত শহীদ ভরতদ্বাজ মণি চাকমার স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন ও শহীদের স্মরণে শহীদ পরিবারবর্গ, ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফভুক্ত সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পন শেষে সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি ও ৮ সংগঠনের কনভেনিং কমিটির সদস্য জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা এতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

এরপর বেলা ২টায় বাবু পাড়া মাঠে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ৮সংগঠনের কনভেনিং কমিটির আহ্বায়ক সোনালী চাকমা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইউপিডিএফ সদস্য কিশোর চাকমা। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সদস্য দেবন্ত ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরুপা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক রিটন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক এসিংমং মারমা ও বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুগত প্রিয় চাকমা প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শাসকশ্রেণি জাতিগত দমন-পীড়ন অব্যহত রেখেছে। সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণ, বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দফতর স্থাপন, পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের নামে একের পর এক ভূমি দখল অব্যাহত রেখেছে শাসক শ্রেণি। এমন অবস্থায় সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ব্যাটালিয়ন নামে নতুন্ একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েনের ষড়যন্ত্র করছে।

বক্তারা শহীদ ভরতদ্বাজ মণির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সামিল হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশ থেকে বক্তারা শহীদ ভরতদ্বাজ মণি চাকমার খুনিদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তি, বাবুছড়ায় স্থাপিত বিজিবি ব্যাটেলিয়ন সদর দফতর প্রত্যাহার করে উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারের স্ব স্ব বাস্তুভিটা ফেরৎ, সেনা-বিজিবি ক্যাম্প সম্প্রসারণের নামে ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন এবং পাহাড়ি ব্যাটালিয়ন এর নামে খুনি সংস্থা র‌্যাব মোতায়েনের ষড়যন্ত্র বন্ধ করার দাবি জানান।

ভরতদ্বাজ মণির স্মরণে সংগীত পরিবেশন করেন প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ডের সদস্য জ্ঞানকীর্তি চাকমা।

সন্ধ্যায় হাজার বাতি প্রজ্বলন ও ফানুস উত্তোলন করা হয়।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের উপর শাসক শ্রেণী তথা সেনাবাহিনীর অবর্ণনীয় অত্যাচার ও নিপীড়ন-নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৯৯২ সালের ১৩ অক্টোবর তৎকালীন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও পাহাড়ি গণপরিষদ দীঘিনালায় এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে। ৭০ বছরের বৃদ্ধ ভরতদ্বাজ মণি চাকমাও এ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে এসেছিলেন। শান্তিপূর্ণ এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ ইন্ধনে সেটলাররা পরিকল্পিতভাবে অতর্কিতে হামলা চালায়। সেনা ও সেটলারদের এ হামলায় অর্ধ শতাধিক নারী-পুরুষ গুরুতর আহত হয় ও ৭০ বছরের বৃদ্ধ ভরতদ্বাজ মণি চাকমা ঘটনাস্থলেই নির্মমভাবে শহীদ হন।
——————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More