নান্যাচরে ইউপি সদস্যকে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে পিসিপি-যুব ফোরামের বিক্ষোভ

0

চট্টগ্রাম : রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলায় তৈচাকমা দজর পাড়ায় (১৮ মাইল) সেনা-সৃষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্তৃক সাবেক ইউপি সদস্য অনাদি রঞ্জন চাকমাকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)।

আজ মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর ২০১৭)বিকাল সাড়ে ৩টার সময় চট্টগ্রামস্থ ডিসি হিল হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব হয়ে চেরাগী পাহাড়ে এসে একটি প্রতিবাদী সমাবেশে মিলিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুবফোরামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ-সভাপতি উচিংশৈ চাক (শুভ)। ত্রিরত্ন চাকমা’র সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পিসিপি চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রূপন চাকমা ও মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জিকো চাকমা প্রমুখ।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, আজ সকাল ১০টার সময় সেনাসৃষ্ট গুপ্তহত্যাকারী (নব্য মুখোশ বাহিনী) সন্ত্রাসীরা সাবেক ইউপি সদস্য অনাদি রঞ্জন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতকে উস্কে দিতেই সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে এই হত্যাকা- সংঘটিত করা হয়েছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।

বক্তারা আরো বলেন,বিজয় মাসে যেখানে সমতলে মানুষরা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিজয় উল্লাসে মেতে উঠে, সেখানে পাহাড়িরা বেদনা অশ্রু নিয়ে লাশের মিছিল করে। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে পাহাড়ে হয় পাহাড়ি গ্রামগুলোকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, নয়ত বা নিরীহ পাহাড়িদেরকে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর, ১৯৭২ সাল হতে রক্ষী বাহিনীর দ্বারা সর্বপ্রথম পাহাড়ে পাহাড়িদের উপর হত্যা, নির্যাতন ও অগ্নি সংযোগের মাধ্যমে নয়া উপনিবেশিকতা ন্যায় শাসন ও শোষণের যাত্রা শুরু হয়, যা এখনো পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি জিইয়ে রেখে কায়েমী স্বার্থ উদ্ধারে নব্য মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করে তাদেরকে দিয়েই খুন-খারাবি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম চালানো হচ্ছে।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তি মিশনে গিয়ে সুনাম কুড়াচ্ছে, অথচ সে সেনাবাহিনীই পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগের পর যুগ ধরে উপনিবেশিক মানসিকতা নিয়ে পাহাড়ে নিরীহ পাহাড়িদেরকে শাসন, শোষণ ও নির্যাতন করে যাচ্ছে। দিনের পর দিন বুটের তলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে পিষ্ট করে রেখেছে। তারা পাহাড়ে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লংঘন করে চলছে, অথচ এর কোন বিচার হয় না। জাতিসংঘের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ করাটাকে মূলত ভাওতাবাজী ও লোক দেখানো মিশন বলে বক্তারা অভিহিত করেন।

বক্তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে কড়া সমালোচনা করে বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে দেশব্যাপী তাদের দ্বারা মিছিল মিটিং ও সরব দেখালেও চোখের সামনে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের উপর অব্যাহত নির্যাতন ও নিপীড়নকে দেখেও উট পাখির মত মুখ বুজে রয়েছে। এতে একটা জিনিস পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনা শাসনকে তারাও ন্যায্যতা চোখে দেখে থাকে। তার মানে তারাও পার্বত্য চট্টগ্রামকে “উপনিবেশিক” মনে করে থাকেন।

বক্তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে সকল অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার ও সেনা শাসনের অবসানের দাবি জানিয়ে নব্য মুখোশ বাহিনীকে নিষিদ্ধ ও সমাজসেবক সাবেক ইউপি সদস্য অনাদি রঞ্জন চাকমার হত্যার বিচার ও হত্যার সাথে জড়িত মুখোশ বাহিনীর সদস্য রনয় চাকমা গংদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।     

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More