লামায় চেয়ারম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ৩৭৭শিক্ষার্থীর পাঠদান

0

IMG_3754উথোয়াই মারমা,বান্দরবান প্রতিনিধি: বান্দরবানের লামায় পৌরসভায় ৪নং ওয়ার্ডে চেয়ারম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃষ্টিতে ভিজে জরাজীর্ণ স্যাঁতস্যাঁতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে দীর্ঘদিন ধরে পাঠ নিচ্ছে এলাকার ৩৭৭জন কোমলমতি শিক্ষার্থী। যার ফলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরাও প্রতিনিয়ত ভয়ে এবং আতঙ্কে থাকেন। রোদ-বৃষ্টির কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও দিন দিন কমতে শুরু করেছে।

পৌর এলাকার অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে নতুন কিছু শেখার জন্য পাড়ি জমাই চেয়ারম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর গরীব ঘরের সন্তান। তাদের অনেকের একটি ছাতা কেনার মত পর্যন্ত সামর্থ নেই বললে চলে। বর্ষা মৌসুমও শুরু হয়ে গেছে। অন্যদিকে বান্দরবান জেলা বৃষ্টি প্রবণ এলাকা। বর্ষা মৌসুম আসলে বৃষ্টির পানি শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে, যার ফলে জরাজীর্ণ স্যাঁতস্যাঁতে পরিণত হয় শ্রেণি কক্ষ আর অন্যদিকে ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পড়ালেখা করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতায় সম্মুখীন হতে হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরকেও।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে ভবন রয়েছে তিনটি। উত্তর পাশে ভবটি পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ, ভবনের পূর্ব পাশের পাহাড় ভবনের দেওয়ালের উপর ঠেসেই পড়াই শ্রেণি কক্ষের ভিতর অন্ধকারাছন্ন আর পূর্ব পাশে ভবনটির ছাদেও দেখা দিয়েছে ফাঁটল। জীর্ণদশা ভবণটির প্লাস্টার খসে পড়ে কঙ্কাল হয়ে আছে। পিলারের ইটগুলো ও খসে পড়েছে। দরজা-জানালা গুলো ভেঙ্গে গেছে। চেয়ার-টেবিল ও বেঞ্চ সংকট তীব্র, যা আছে তাও অত্যন্ত নাজুক অবস্থায়। তারপরও এ বিদ্যালয়টি দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর ধরে নিরলসভাবে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বিশেষ অবদান রাখছে। বর্তমানে অনেক কষ্ট করে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করাচ্ছে।

এসব সমস্যা ও সংকটের কারণে স্কুলের পাঠদান দিন দিন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের এ সকল সমস্যার সমাধান নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। অবকাঠামো উন্নয়ন বা সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ আর এলজিইডি ২০০৭ থেকে জায়গা মেপে নিয়ে যাচ্ছে, অনেক স্বপ্নও দেখাচ্ছে কিন্তু আজো পর্যন্ত বিদ্যালয়ে কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি বলে অভিযোগ করেন অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দ।

জানা যায়, ১৯৮১ সালে ২০শতক জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় স্কুলটি। ১৯৮৯ সালে ৩টি শ্রেণি কক্ষ ও একটি ছোট অফিস রুম বিশিষ্ট একটি আধা পাঁকা ভবণ নির্মাণ করা হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে ৩টি শ্রেণি কক্ষ বিশিষ্ট আরেকটি ভবন নির্মিত হয়। দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে আরো একটি ৪ শ্রেণি কক্ষ বিশিষ্ট ভবন নিমাণ করেন এলইজিডি। IMG_7234

প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম জানান, স্কুলের ভবনসহ নানা সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অনেকবার অবগত করা হলেও এখন পর্যন্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিদ্যালয়ে দুইটি ভবনে বড় ফাঁটল থাকায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহ বোধ করছে না। বান্দরবান অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ, এ রকম জরাজীর্ণ ভবনে পাঠদানে বিপদের ঝুঁকিও রয়েছে,তাছাড়া রোদে পুড়ে,বৃষ্টিতে ভিজে পাঠ নেওযা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য শারীরিকভাবেও ক্ষতিকর। বিদ্যালয়ে কয়েকজন সহকারী শিক্ষকরা বলেন, ২০০৭ সাল থেকে দেখে আসছি এলজিইডি ভবনের জায়গা মেপে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু স্কুলে আজো পর্যন্ত কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগতে দেখছি না। অনেকবার শুনে আসছি বিদ্যালয়ের নামে না কি বেশ কয়েকবার বরাদ্ধ এসেছে কিন্তু সে বরাদ্ধ কোথায় চলে যায়? তা বলতে পারছি না!

উত্তর পাশে নির্মিত এই প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি ৫-৬ ধরে আজও শুরু হয়নি সংস্কার বা পূর্ণনির্মানে কাজ। পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনের দুইটি শ্রেণী কক্ষ তালা মেরে রাখা হয়েছে। এদিকে শ্রেণি কক্ষের স্বল্পতা,দীর্ঘ কয়েক বছরে ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল সংস্কার না হওয়ায় রোদ-বৃষ্টির মাঝে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপকালে তারা বলে, আমাদের ক্লাস চলাকালিন কখন যে বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পাহাড়টি ধসে পরবে জানিনা। এর কারণে শ্রেণী কক্ষে বসে ক্লাস করতে আমাদের অনেক ভয় লাগছে। এ সময় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে ওঠে, প্রধান সড়কের দুই পাশে রয়েছে আমাদের বিদ্যালয়ের ভবন। নেই কোন ওভার ব্রীজ, যার কারণে আমাদের অনেককে গাড়ির সম্মুখীন আর রিক্সা নিচে পড়তে হয়েছে।

কোমলমতি শিশুদের অসহায়ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে পাঠ নেওয়া কি আসলে মানবিক? এই প্রশ্ন সকল অভিভাবকের। শিক্ষার্থী অভিভাবকদের দাবি অনতিবিলম্বে স্কুল ভবন গুলো পূর্ণাঙ্গভাবে নির্মাণ করা। এ জন্য তারা বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
—————-

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More