পানছড়িতে পিকনিক ভণ্ডুল করে দিয়েছে সেনাবাহিনী

0

Panchari-2পানছড়ি(খাগড়াছড়ি): মেজর রফিকের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর একটি দল পানছড়িতে স্থানীয় মুরুব্বীদের আয়োজিত গণ পিকনিক ভণ্ডুল করে দিয়েছে। এ সময় তারা ছয় ব্যক্তিকে মারধর করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ ভোর রাত ৪টার দিকে পানছড়ি সাবজোনের সেনাসদস্যরা সহ যৌথ বাহিনীর একটি দল প্রথমে তারাবন্যার পাশের গ্রাম বাঘ্যাপাড়ায় উদঙ্গ মনি চাকমার বাসায় যায়। পরে সেখান থেকে তাকে ও তার বাড়িতে অবস্থানরত (পিননিকের জন্য) লতিবান ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী নেতা শান্তি জীবন চাকমা,  উল্টাছড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সুব্রত চাকমা ও মারমা ঐক্য পরিষদের পানছড়ি থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল মারমাকে নিয়ে সেনারা জগপাড়ার পাশে পিকনিক স্পট ঘেরাও করে এবং রান্নার দায়িত্বে থাকা ছয় জনকে মারধর করে।

শারীরিক নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা হলেন ভাইবোনছড়া ইউপির লাম্বাছড়া গ্রামের কুনেন্দু ত্রিপুরা (৩৮), ৪ নং লতিবান ইউপির নবীন চন্দ্র পাড়ার সোহাগ চাকমা (৫৮), লতিবান ইউপির উগলছড়ি গ্রামের বিমল কান্তি চাকমা (৪৫) এবং ৩ নং পানছড়ি ইউপির গুনু কার্বারী পাড়ার রতন সাঁওতাল (৩৫), মঙ্গল সাঁওতাল (২৮) ও রবি সাঁওতাল (৪৮)।

খবর পেয়ে সকালে পানছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, ১ নং লোগাং ইউপি চেয়ারম্যান প্রত্যুত্তর চাকমা, ২ নং চেঙ্গী ইউপির চেয়ারম্যান কালাচাঁদ চাকমা ও একই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান অনিল চাকমাসহ কয়েক জন স্থানীয় মুরুব্বী অভয়মনি হেডম্যান পাড়ায় গিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান।

তাদের চাপের মুখে যৌথ বাহিনী নির্যাতিত ছয় ব্যক্তিসহ আটককৃতদের সবাইকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি সিএইচটি নিউজ ডটকমকে জানান, শ্যামল কান্তি চাকমা (পীং ইন্দ্র ধন চাকমা বর্তমান ঠিকানা কলাবাগান, ও স্থায়ী ঠিকানা নাবিদা পাড়া, পানছড়ি) নামে সেনাদের এক এজেন্ট আর্মিদের ভুল তথ্য দিয়ে পিকনিক ভণ্ডুল করে দিতে সাহায্য করেছে। ঘটনার আগে সে পানছড়িতে অবস্থান নিয়ে আর্মিদের আপডেট তথ্য দিয়েছে ও কোথায়, কার বাড়িতে যেতে হবে তা বলে দিয়েছে।

জনগণের মধ্যে ক্ষোভ
পিকনিক ভণ্ডুল করে দেয়ায় পানছড়িতে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। একজন প্রাক্তন ইউপি মেম্বার বলেন, ‘পিকনিক ভণ্ডুল করে দেয়া বেশী বাড়াবাড়ি হয়েছে। সেনাদের এমন উৎপীড়ন, একটা পিকনিক পর্যন্ত করা যায় না। কোন দেশে আমরা বাস করছি। কয়েক দিন বাদে তো বিয়ের অনুষ্ঠানেও বাধা দেবে। ‘মেলা মেঝবান সাতদিন্যাও’ আয়োজন করা যাবে না, আর্মিরা বাধা দিয়ে ভণ্ডুল করে দেবে।

তিনি বলেন, একটি  রাজনৈতিক দল আন্দোলনের কথা বলে আর্মিদের সাথে প্রকাশ্যে ফস্টিনস্টি করছে বলে আর্মিরা এতসব করার সুযোগ ও সাহস পাচ্ছে। আর অন্য দল থেকে সুবিধাবাদী ধান্দাবাজরা তাদের তথাকথিত দলে ভিড়ছে। এখন জনগণ জেগে উঠে প্রতিবাদ না করলে পরিস্থিতি আরো বেশী খারাপ হবে।

এদিকে সেনারা সকালে খাগড়াছড়িতে ২ নং প্রকল্প এলাকায় (গাছবান) ও পেরাছড়া ধর্মপুরে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে লোকজনকে তল্লাশী করছে বলে জানা গেছে।

ইউপিডিএফের নিন্দা ও প্রতিবাদ
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক প্রদীপন খীসা এক বিবৃতিতে স্থানীয় মুরুব্বীদের আয়োজিত গণ পিকনিক ভণ্ডুল ও ছয় ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি যৌথ বাহিনী কর্তৃক পিকনিক ভণ্ডুল করে দেয়ার ঘটনাকে নজিরবিহীন ও মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন উল্লেখ করে বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ উন্মুক্ত কারাগার পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন মধ্যযুগ চলছে। জনগণের কোন অধিকার নেই। বাক স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে মিলিত হবার স্বাধীনতা, এমনকি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের মতো স্বাধীনতা পর্যন্ত তাদের নেই।’

তিনি অবিলম্বে অন্যায় দমন পীড়ন বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
—————

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More