পিসিপি’র মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা উপজেলা শাখার কাউন্সিল সম্পন্ন
মাটিরাংগা (খাগড়াছড়ি) : “দোদুল্যমান, নীতিহীন, অর্পিত দায়িত্ব পালনের অক্ষম ও সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নিজেকে পিসিপি’র যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলুন এবং জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করুন” এই স্লোগানে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার ৮ম ও গুইমারা উপজেলা শাখার ৭ম কাউন্সিল যৌথভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
আজ শনিবার (২৬ মার্চ) সকাল ১০টায় মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর এলাকায় অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে পিসিপি’র দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক রিকো ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন পিসিপি’র মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার সভাপতি অমল ত্রিপুরা ।
কাউন্সিল অধিবেশনে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার সভাপতি অমল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও গুইমারা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উষাঅং মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক রিকো চাকমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য তপন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পলাশ চাকমা, পিসিপি’র গুইমারা উপজেলা শাখার সভাপতি সমর জ্যোতি চাকমা প্রমূখ।
কাউন্সিলে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দিপংকর ত্রিপুরা ও শোক প্রস্তাব পাঠ করেন গুইমারা উপজেলা শাখার সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক উক্রাচিং মারমা।
এ সময় গত ২০১৫ সালে জানুয়ারি – ডিসেম্বর পর্যন্ত সেনাবাহিনী ও পুলিশের মিলিত ষড়যন্ত্রে মিথ্যা মামলায় জড়িত করিয়ে পিসিপি’র মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন শাখা কমিটি’র কারামুক্ত ১১ নেতা-কর্মীকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানান পিসিপি’র মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা উপজেলায় শাখা নেতৃবৃন্দ।
কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তারা বলেন, জাতির ক্রান্তিকালে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে বর্তমান প্রজন্মে ছাত্র সমাজ দেশ, জাতি ও সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে আন্দোলন করা উচিৎ। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ প্রতিরোধের মাধ্যমে নিজেদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে জোরদার করা দরকার। কিন্তু আমরা দেখতে পাই ছাত্ররা শুধু প্রতিষ্ঠানে সীমাবদ্ধতা থেকে নিজেদের সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য অধ্যয়ন করে থাকে সমাজ, জাতি ও দেশ কী হচ্ছে সে বিষয়ে কোন লক্ষ্যই রাখে না। শুধু তাই নয় বর্তমানে অধিকাংশ ছাত্র মাদকদ্রব্য আসক্ত হয়ে বিপথে পা বাড়াচ্ছে এবং ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি ব্যবহার করে সময়ের অপব্যবহার করছে। এর থেকে সবাইকে সতর্ক থেকে সচেতন হতে ছাত্র সমাজের প্রতি আহব্বান জানান বক্তারা।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগামের জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব ধ্বংস করার জন্য গত ২০১৫ সালে জানুয়ারি মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক অগণতান্ত্রিক গণবিরোধী ‘১১ নির্দেশনা ‘ জারি করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনা শসনকে বৈধ্যতা দিয়েছে। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে নামে পাহাড়িদের গ্রামে গ্রামে ঘর বাড়ি তল্লাশি, সাধারণ ছাত্র-যুব-নারীসহ সর্বত্র জনগণের উপর শারিরীক মানসিক নির্যাতন, ধর-পাকড়, মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ ও পাহাড়িদের উপর বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মাধ্যমে অন্যায় অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে চলেছে।
কাউন্সিলে বক্তারা মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা উপজেলা প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট, অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের বেঞ্চের সংকটসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং তা থেকে উত্তরণের জন্য ছাত্র সমাজকে সংগঠিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে জানান।
বক্তারা, সরকারের দমন-পীড়নসহ সকল ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত মোকাবেলা করে, শত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে নিজেদের সকল সীমাবদ্ধতা পরিহার করে সংগঠনকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিতে ও গতিশীল করতে নতুন কমিটির নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান।
পরে কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতি ক্রমে দীপংকর ত্রিপুরাকে সভাপতি, মানিক ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক ও রাজু চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ জনের কার্যকারী সদস্যসহ ২৫ সদস্য বিশিষ্ট মাটিরাঙ্গা উপজেলা কমিটি এবং উষাঅং মারমাকে সভাপতি, সন্তোষ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও উক্রাচিং মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ জনের কার্যকারী সদস্যসহ ২১ সদস্য বিশিষ্ট গুইমারা উপজেলা শাখা যৌথ কাউন্সিল গঠিত হয়।
মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা যৌথ কাউন্সিলে গঠিত নতুন কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তপন চাকমা।
———————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।