প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুকলেট প্রকাশ করেছে ইউপিডিএফ
খাগড়াছড়ি : প্রতিষ্ঠার ১৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে ৮ পৃষ্ঠার একটি বুকলেট প্রকাশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এতে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ হতে ২৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত উক্ত বুকলেটে বেঈমানী ও প্রতারণাই শাসকচক্রের বৈশিষ্ট্য অংশে পার্বত্য চুক্তি সম্পর্কে বলা হয় “… পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হয় শুধু টিভি অনুষ্ঠান-প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় আর স্টেডিয়ামে কনসার্টে, বাস্তবে হয় না। ২০ বছরেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘পার্বত্য চুক্তি’ পুরোপুরি বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, ‘মৌলিক’ ‘অমৌলিক’ বিষয়ে বিভাজন দেখিয়ে ‘পার্বত্য চুক্তিকে’ আওয়ামীলীগ জটিল প্যাঁচের মধ্যে ফেলেছে। ‘এক কেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক’ ‘সংবিধান বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে খোদ ‘পার্বত্য চুক্তি’টি-ই হাইকোর্টের এক রায়ে “অবৈধ” ঘোষিত হয়েছে। তার সাত বছর আগেই রাঙ্গামাটির এসপি হুমায়ূন কবীর ‘পার্বত্য চুক্তি’কে মুলা আখ্যা দিয়ে তা বাস্তবায়নের আশা ছেড়ে দিতে এবং জনসংহতি সমিতির নেতৃত্ব সম্পর্কেও বিদ্রুপাত্মক কথা বলেন। এভাবে নানা কারসাজিতে ‘চুক্তি বাস্তবায়ন’ ঝুলে আছে, এখন খোদ ‘চুক্তির’ ভবিষ্যতই নিক্ষিপ্ত হয়েছে অনিশ্চয়তার এক অতল গহ্বরে। অথচ ২০ বর্ষপূর্তিতে সরকার কর্তৃক আয়োজিত হয়েছে দৃষ্টিকটু রকমের আনন্দ উৎসব কনসার্ট আর রঙ তামাশা, যা অধিকারহারা সাধারণ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করেছে।”
বুকলেটে আন্দোলন ধ্বংসের লক্ষ্যে সরকারের সকল শক্তি নিয়োজিত অংশে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলা হয়, “প্রতিবারই নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে ও নানা মুখোরচক প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতাসীন হয়, কিন্তু গদিতে বসে ধারণ করে ভিন্ন মূর্তি। ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামীলীগের গৃহীত পদক্ষেপ ইশতেহারে ঘোষিত প্রতিশ্রুতির সাথে তুলনা করলে গুরুতর অসঙ্গতি ধরা পড়ে। ‘পার্বত্য চুক্তির’ পূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামীলীগ বিতর্কিত ‘পঞ্চদশ সংশোধনী আইন’ পাস করে “বাঙালি জাতীয়তা” চাপিয়ে দেয়, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তা জনগোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলসমূহের প্রবল আপত্তি বিরোধিতা লীগ সরকার আমলে নেয়নি। তার আগে সশস্ত্রবাহিনী বোর্ডের মিটিঙে ইউপিডিএফ’কে মাঠ লেভেলে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে গোপন সার্কুলার জারি করে; ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কারসাজির মাধ্যমে পুনরায় সরকার গঠনের মাধ্যমে জারি করে দমনমূলক ‘১১দফা নির্দেশনা’, যা পার্বত্য চট্টগ্রামে ফৌজী শাসনকেআইনী বৈধতা দেয়ার সামিল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখন নিজ নিজ জাতিসত্তার স্বীকৃতি লাভের জন্যও আন্দোলন করতে হচ্ছে।”
বুকলেটে বলা হয়, “এটা আমাদের বুঝতে হবে যে, শাসকগোষ্ঠী শক্তিশালী, আমরা দুর্বল পক্ষ। আমাদের শক্তি বিভক্ত এবং আমাদের মধ্যে সমঝোতার অভাব রয়েছে। শাসকগোষ্ঠী তার পূর্ণ সুযোগ নিয়ে দমন-পীড়ন জারি রেখেছে। সমাজের সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে জুটিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। তার পাল্টা হিসেবে সমাজের সকল শক্তির সমন্বয়ে আন্দোলন গড়ে তুলে এ দুর্বলতা কাটিয়ে তোলা সম্ভব। এককভাবে কোন দলের পক্ষে আন্দোলন জোরদার করা সহজ হবে না, তা অনুধাবনে যেন আমাদের ভুল না হয়।”
জাতিসত্তার স্বীকৃতি, ভূমি অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে বুকলেটে।
এতে জনগণের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়,
জুম্মো দিয়ে জুম্মো ধ্বংসের’ নীলনক্সা নস্যাৎ করে দিতে ঐক্যবদ্ধ হোন!
শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম জোরদার করুন!
সংগ্রামী ঐক্যে ফাটল ধরানোর অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন!
লড়াই সংগ্রামে বিভ্রান্তি ও বিভেদ সৃষ্টিকারী সকল অপতৎপরতা ভেস্তে দিন!
সমাজ-জাতির অনিষ্টকারী ছারপোকা সদৃশ দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দেবেন না।
জাতির ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় লিপ্ত গণশত্রুদের সমাজে স্থান দেবেন না।
নীচে পুরো বুকলেটটির স্ক্যান কপি তুলে দেওয়া হলো: