প্রশাসন তাইন্দং-এ সেটলার হামলার দায় এড়াতে পারে না: ইউপিডিএফ

0
ডেস্ক রিপোর্ট
সিএইচটিনিউজ.কম
 
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং-এ পাহাড়ি গ্রামে সেটলারদের হামলা, লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও খুনের দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট( ইউপিডিএফ)।
ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক প্রদীপন খীসা আজ ৪ আগস্ট রবিবার এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন।বিবৃতিতে তিনি বলেন,  ৩১ জুলাই বুধবার গভীর রাতে তাইন্দং বাজারে সেটলারদের পাহাড়ি-বিরোধী মিছিল ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক শ্লোগানের পর ইউপিডিএফের দাবি মোতাবেক প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ৩ আগস্টের ভয়াবহ হামলা ও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যেতো।

তিনি হামলার সময় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর নীরব ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আরো বলেন, সেটলাররা তাইন্দং বাজার থেকে বহু দূরে পাহাড়ি গ্রামে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হামলা চালালেও এবং এমনকি দিনের মধ্যে মূল হামলা শেষ হওয়ার পর গতকাল গভীর রাত ১১টার দিকে পাহাড়ি গ্রাম তালুকদার পাড়ায় আগুন দেয়ার সময়ও পুলিশ, সেনাবাহিনী কিংবা বিজিবি হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং হামলার সময় বিজিবি সদস্যরা পাহাড়িদের গ্রামের কাছাকাছি জঙ্গলে অবস্থান নিয়ে সেটলারদের সহায়তা দেয়।

ইউপিডিএফ নেতা পাহাড়িদেরকে সশস্ত্র গ্রাম প্রতিরক্ষা দল বা ভিডিপি গঠনের অনুমতি দেয়ার দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, যেহেতু পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি তথা নিরাপত্তা বাহিনী পাহাড়িদের নিরাপত্তা দানে বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, তাই পাহাড়িদের জন্য এ ধরনের আত্মরক্ষামুলক ব্যবস্থা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত, ন্যায্য ও প্রয়োজনীয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, হামলাকারী সেটলারদের যদি ভিডিপি গঠনের অনুমতি দেয়া হয়, পাহাড়িদের কেন দেয়া হবে না? এটা কি বৈষম্যমূলক নয়? বরং একের পর এক সেটলার হামলা ও প্রশাসনের নিরাপত্তাদানে ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে পাহাড়িদের ভিডিপি থাকা সবচেয়ে বেশী যুক্তিযুক্ত।

ইউপিডিএফ নেতা জনৈক বাঙালি অপহৃত হওয়া ও পরে তাকে ‘উদ্ধার’ করার ঘটনাকে বানোয়াট ও সাজানো নাটক আখ্যায়িত করে বলেন, পাহাড়িদের গ্রামে হামলার অজুহাত সৃষ্টির জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এ ঘটনা সাজানো হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা অনুসন্ধান করে পরিস্কার জেনেছি ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক কামাল হোসেনকে কেউ অপহরণ করেনি; সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে তদন্ত করা হলে এই সত্য সবার কাছে উন্মোচিত হবে।” তিনি প্রশ্ন করেন কামাল হোসেন আহত হলে কেন তাকে কথিত ‘উদ্ধারের’ পর হাসপাতালে ভর্তি না করে পুলিশ ‘হেফাজতে’ রাখা হয়েছে?

তাইন্দং বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৩১ জুলাই বুধবার রাতে ফটকাবাজি ফুটিয়ে ‘সন্ত্রাসী এসেছে সন্ত্রাসী এসেছে’ বলে মাইকে চিকার দিয়ে তাইন্দং বাজারে জড়ো হয়ে সেটলারদের পাহাড়ি-বিরোধী মিছিল, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি ও এর ফলশ্রুতিতে ভয়ে ৫টি গ্রামের ২৫৭টি পাহাড়ি পরিবারের ভারত সীমান্তে পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ জানিয়ে ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে পরদিন বিবৃতি দেয়া হলেও তা বেমালুম চেপে যাওয়া হয়। এমনকি ৩ আগস্ট হামলার খবর পরিবেশনের সময়ও ৩১ জুলাই রাতের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি ও পাহাড়িদের ভারত সীমান্তে আশ্রয় নেয়ার ঘটনাকে ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। এর ফলে সেটলারদের হামলার পরিকল্পিত রূপ ও মোটিভ আড়াল থেকে যাচ্ছে।

ইউপিডিএফ নেতা বলেন, “সর্বশেষ তথ্য মতে সেটলারদের হামলায় ৭০ বছরের এক বৃদ্ধসহ ৭ জন পাহাড়ি নিহত ও ৪ জন গুরুতর জখমসহ ৫০ জন আহত হয়েছেন, আর ১০টি পাহাড়ি গ্রামের ৫ শতাধিক বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়া তারা ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। হামলা থেকে বাঁচার জন্য এ সব গ্রামের আনুমানিক ৫ হাজার পাহাড়ি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়া তাইন্দং, পোড়াবাড়ি ও বগাপাড়া গ্রামের ১৬০ পরিবার পানছড়ির উল্টাছড়ি নবরতœ পাড়ায় (৬ নং ওয়ার্ড) আশ্রয় নিয়েছে। যে সব গ্রাম হামলার শিকার হয় সেগুলো হলো দেওয়ান পাড়া, তাইন্দং, আজলং, সর্বেশ্বর পাড়া, মনদাস পাড়া, বগা পাড়া, ডেনো ছড়া, ভগবান টিলা, বান্দরসিং পাড়া ও তালুকদার পাড়া। এই শেষোক্ত পাড়ায় দিনের মূল হামলার পর রাত ১১টার দিকে আগুন দেয়া হয়।

মাছ পাড়া, বান্দরসিং পাড়া, বড়তলি ও আটলংসহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে ৪-৫ হাজার সেটলার এই হামলায় অংশ নেয়।

হামলায় নিহত পাহাড়িদের মধ্যে চার জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন মনদাস পাড়ার অরুণ মোহন চাকমা (৭০), ডেনো ছড়া গ্রামের কালাধন চাকমা এবং সর্বেশ্বর পাড়ার সুরেশ ধন তালুকদার ও তার মা (নাম জানা যায়নি)। শেষোক্ত দু’জন অসুস্থ ছিলেন বলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হননি। অপরদিকে অরুণ মোহন চাকমাকে তার ছেলে জ্যোতিষ বরণ চাকমা পিঠে তুলে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেটলাররা দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। সেটলাররা নিহতদের লাশ গুম করেছে।

এছাড়া হামলায় কমপক্ষে ৫ জন পাহাড়ি গুরুতর আহত হয়েছেন। এরা হলেন তাইন্দং ইউপির ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার ফনি ভূষণ চাকমা, কালাকাজি চাকমা, অমৃত চাকমা, সুপায়ন চাকমা ও ডেনোছড়া গ্রামের সুকু চাকমা। সেটলাররা মারধরের পর ফণিভূষণ চাকমাসহ ১১ জনকে বিজিবির হাতে তুলে দেয়। বর্তমানে তারা তাদের কাছে আটক রয়েছেন।”

প্রদীপন খীসা হামলার সাথে জড়িত সেটলারদের গ্রেফতার ও শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন, ঘটনা তদন্তে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, ভারতে আশ্রয় নেয়া পাহাড়িদের জানমালের নিরাপত্তার গ্যারান্টিসহ ফিরিয়ে আনা এবং আত্মরক্ষার জন্য পাহাড়িদের সশস্ত্র গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী বা ভিডিপি গঠনের অনুমতি প্রদানের দাবি জানান।

এছাড়া তিনি অপহৃত না হয়েও অপহৃত হওয়ার খবর প্রচার করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি ও হামলায় প্ররোচিত করার দায়ে কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায়া দাঁড় করানোর দাবি জানান।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More