লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা’র নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে স্ত্রী ননা চাকমা

0

Pic-1খাগড়াছড়ি: লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে সুপার জ্যোতি চাকমার সহধর্মিনী(স্ত্রী) ননা চাকমা। তাঁর অপর দাবিগুলো হচ্ছে- সুপার জ্যোতি চাকমার মত যাতে আর অন্য কোন নিরীহ ব্যক্তিকে ‘অস্ত্র নাটক’ সাজিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানির শিকার হতে না হয় তার নিশ্চয়তা এবং  সেনাবাহিনীর অন্যায় খবরদারি ও তল্লাশীর নামে হয়রানি, গ্রেফতার, নির্যাতন বন্ধ করা।

আজ শনিবার (১৪ জানুয়ারি ২০১৭) সকালে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমাকে ‘নাটক সাজিয়ে’ অস্ত্র মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি সদরের টঙ রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুপার জ্যোতি চাকমাকে গ্রেফতারের প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে ননা চাকমা বলেন, ‘আমার স্বামী সুপার জ্যোতি চাকমা লক্ষীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে থাকতেন এবং এখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার দিন রাত ১টার দিকে লক্ষ্মীছড়ি জোনের মেজর রাসেলের নেতৃত্বে চারটি আর্মি গাড়ি আমাদের বাসভবনের সামনে এসে থামে। এ সময় আমি ও আমার স্বামী ঘুমিয়ে ছিলাম। সেনাবাহিনী প্রথমে আমার স্বামীকে তার মোবাইলে ফোন দেয়। তবে আমার স্বামী ঘুমিয়ে থাকায় তিনি মোবাইল কল রিসিভ করতে পারেননি। পরে আর্মিরা বাইরে থেকে ডাকাডাকি শুরু করে দেয় এবং দরজায় জোরে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। এই অবস্থায় আমার স্বামী বাইরের অবস্থা জানার জন্য এবং কী কারণে এত ডাকাডাকি করা হচ্ছে তা জানার জন্য লক্ষীছড়ি উপজেলার ওসি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন দেন। এ সময় তিনি জানতে পারেন যে, তাকে আর্মিরা ঘিরে রয়েছে। তিনি লক্ষীছড়ি উপজেলার ওসি আরিফ ইকবালের কাছ থেকে এ বিষয়ে সহায়তা কামনা করেন। পরে সুপার জ্যোতি চাকমা খাগড়াছড়ি জেলার এমপি কুজেন্দ্র লাল চাকমাকেও ফোন করেন। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা সুপার জ্যোতি চাকমাকে কোন কিছু হবে না এমন আশ্বস্ত করে চুপচাপ ঘুমিয়ে থাকতে পরামর্শ দেন। প্রয়োজন হলে তারা অর্থাৎ আর্মিরা পরদিন সকালে দেখা করতে আসবে বলে তিনি তাকে জানান।
এমপি কুজেন বাবুর পরামর্শমত আমরা দরজা খুলে না দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু আর্মিরা বিল্ডিং-এর দ্বোতলায় উঠে বাড়ির দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। তারপর তারা সারা ঘরে কোন অনুমতি ছাড়াই তল্লাশী চালায়। এ সময় তারা আমাদের সবাইকে তটস্থ করে রাখে।
আর্মিরা যখন সারা ঘর তল্লাশী করছিল তখন তাদের পাশে পাশে ছিলাম যাতে তারা আমার অজান্তে কোন কিছু রেখে দিয়ে আমার স্বামীকে ফাঁসাতে না পারে। কিন্তু তারপরও আমি স্বামীকে রক্ষা করতে পারিনি। আমি যখন তাদের সাথে ঘুরছিলাম তখন আরো কয়েকজন সেনা সদস্য একটি পলিথিন ব্যাগের ভিতরে করে একটি পিস্তল নিয়ে এসে আমার স্বামীর সামনে উপস্থাপন করে। তারা দাবি করে এ পিস্তলটি তারা ঘরের দেয়ালের বাইরে সানশেডের উপর পেয়েছে। আমাদের ধারণা তারা ব্যাগে ভরে পিস্তলটি সেখানে আগেই রেখে দিয়েছিল।’

সুপার জ্যোতি চাকমাকে নির্যাতনের অভিযোগ করে তিনি বলেন,…আমি থানায় আমার স্বামীর সাথে দেখা করি। তিনি জানান যে, তার উপর নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার চোখ বেঁধে দেয়া হয়। পিছমোড়া করে তার হাত-পা বাঁধা হয়। তারপর তারা তাকে কাপড় দিয়ে পেঁচানো একটি লাঠি দিয়ে মারধর করে। আমার স্বামী আমাকে তার নিতম্ব দেখায়। আমি দেখতে পাই আর্মিরা সেখানে এমন মেরেছে যে, তাতে কালসিঁটে দাগ হয়ে গেছে।

তিনি গ্রেফতারের আগে সুপার জ্যোতি চাকমাকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, গ্রেফতারের বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই আমার স্বামীকে আর্মিরা নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল ও হেনস্তা করছিল। বিশেষ করে গত বছর ৩১ অক্টেবর কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে অংশ নিতে লক্ষ্মীছড়ি আসার সময় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে তল্লাশী করা হলে লক্ষীছড়ি উপজেলার সাধারণ জনগণ খুবই বিক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হয়। তারা উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আমার স্বামী সুপার জ্যোতি চাকমাকে চাপ দেয় তিনি যেন এ বিষয়ে আর্মিদের কাছে প্রতিবাদ করেন এবং ব্যাখ্যা দাবি করেন। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি লক্ষ্মীছড়ি জোনে জনগণের কথাগুলো তুলে ধরেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আর্মিরা জনগণের সংবেদনশীলতার প্রতি কোনরূপ সম্মান প্রদর্শন না করে এবং জনগণের বক্তব্য তাদের কাছে তুলে ধরার জন্য সুপার জ্যোতি চাকমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে উল্টো তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। বাড়ি এসে আমার স্বামী আমাকে জানান যে, আর্মিরা এ সময় তাকে বলে, ‘রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বড়ঋষি চাকমাকে তো দেখেছ। তোমারও সেই পরিণতি হবে।’

প্রতিশোধপরায়ণ হয়েই সুপার জ্যোতি চাকমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অস্ত্র উদ্ধার একটি সাজানো নাটক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সেনা হয়রানির পর ক্ষুদ্ধ জনগণের কথা আর্মিদের কাছে তুলে ধরা এবং লক্ষ্মীছড়ি জোনের আয়োজিত খেলাধূলার অনুষ্ঠান বয়কটের কারণে প্রতিশোধপরায়ণতা বশতঃ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরদিকে গ্রেফতারের সময় সুপার জ্যোতি চাকমার কাছ থেকে অস্ত্র পাওয়ার দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ অস্ত্র আর্মিরা নিজেরাই নিয়ে এসে সেটা সুপার জ্যোতি চাকমার কাছ থেকে পেয়েছে বলে প্রচার করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীছীড় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অংগ্য প্রু মারমা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বেবি রাণী বসু, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিলন চাকমা, লক্ষ্মীছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রবীল চাকমা, দুল্যাতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ত্রিলন চাকমা, বর্মাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হরি মোহন চাকমা, লক্ষ্মীছড়ি সদর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র চাকমা, সুপার জ্যোতি চাকমার ভাতিজা বিপুল চাকমা ও আত্মীয় রমেশ চাকমা।

উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি ২০১৭ দিবাগত রাত ১টায় উপজেলা সদরের সরকারি বাসভবন ঘেরাও’র পর দরজা ভেঙে ঢুকে থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমাকে ‘অস্ত্র উদ্ধার’ নাটক সাজিয়ে গ্রেফতার করে লক্ষ্মীছড়ি জোনের সেনা সদস্যরা। এরপর তাকে থানায় হস্তান্তর করে মিথ্যা অস্ত্র মামলা রুজু করে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি এখনো কারাগারে বন্দী অবস্থায় রয়েছেন।
—————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More