শুকিয়ে যাচ্ছে পানির উৎস: রোয়াংছড়ির খুমি আদিবাসী পাড়াগুলো ‘উচ্ছেদের মুখে’
সিএইচটিনিউজ.কম ডেস্ক:
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার খুমি আদিবাসী পাড়াগুলোর পানির উৎস শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
খুমিদের সামাজিক সংগঠন খুমি কুহং-এর সভাপতি সিয়ং খুমি বলেন, রোয়াংছড়ি উপজেলায় পাঁচটি খুমিপাড়ায় প্রায় ১০০ পরিবার খুমির বসবাস। পানির মারাত্মক সংকটে সবগুলো পাড়াই উচ্ছেদের মুখে পড়েছে।
পাড়াবাসী জানান, খুমি নারীরা প্রতিদিন আড়াই-তিন ঘণ্টা ব্যয় করে শুধু দৈনন্দিন রান্নার চাহিদা পূরণের মতো পানি জোগাড় করতে পারছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, জেলা সদর থেকে ৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরে সাংকিংপাড়াবাসী ঝিড়ির (ছোট পাহাড়ি ছড়া) কুয়ায় জমে থাকা পাতা পচা দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে সপ্তাহে একবার অথবা দুই সপ্তাহে একবার গোসল করেন।
সাংকিংপাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) সাংকিং খুমি বলেন, অবাধে প্রাকৃতিক বনভূমি উজাড়, একক প্রজাতির গাছের বাগান সৃজন ও প্রাকৃতিক পাথর আহরণের কারণে পানির উৎসগুলো দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন উৎস সৃষ্টি করা না গেলে পানির সংকটে পাড়াগুলো টিকিয়ে রাখা যাবে না।
গত রোববার সরেজমিনে সাংকিংপাড়ায় দেখা যায়, পাড়া থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে শুকিয়ে যাওয়া একটি ঝরনার নিচু অংশে স্যাঁতসেঁতে কাদায় কুয়া খনন করে পানি সংগ্রহ করছেন লোকজন। সেখানে পানির জন্য অপেক্ষায় থাকা প্রেনং খুমি বলেন, ‘ঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করে কুয়ায় পানি জমলে ভূদুঙে (লাউয়ের শুকনা খোল) ভরে নিয়ে যাই। পানি বিশুদ্ধ কি না, জানি না। পানিতে একধরনের সাদা প্রলেপ দেখা যায়। সেই প্রলেপ প্রথমে ছেঁকে ফেলে দিতে হয়।’
প্রেনংয়ের মতো আরও অনেক নারীকে সেখানে পানির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
পাড়ার ষাটোর্ধ্ব নারী এংপা খুমি মরা ঝিড়ির খাদে জমে থাকা দুর্গন্ধযুক্ত লালচে রঙের পানি দেখিয়ে বলেন, ‘অনেক দিন গোসল ছাড়া থাকলে গরমে গা জ্বলে। তখন এই পানিতে গোসল না করে উপায় থাকে না। গোসলের পর শরীর থেকেও দুর্গন্ধ বের হয়। কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
পাড়াগুলো ‘টিকিয়ে রাখার জন্য’ পানির নতুন উৎস সন্ধান ও সরবরাহের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খুমি কুহংয়ের সভাপতি সিয়ং খুমি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সোহ্রাব হোসেন বলেন, পাহাড়চূড়ায় বসবাসকারী খুমি ও ম্রো জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি পানিসংকটের শিকার হচ্ছে।
সৌজন্যে: প্রথম আলো