সিএইচটি কমিশনের সাথে ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দের বৈঠক : ১৪ দফা সুপারিশ পেশ

0

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রামে সফররত পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশন (সিএইচটি কমিশন)-এর সাথে ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছেবৈঠকে ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন এবং এলাকায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারের কাছে পেশের জন্য কমিশনের নিকট ১৪ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন

গতকাল ২৩ নভেম্বর বুধবার বিকাল ৩টায় স্বনির্ভরস্থ ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিএইচটি কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন এলসা স্টেমাতোপৌলো, এনেকা আরেন্স ও ব্যারিষ্টার সারা হোসেন এবং ইউপিডিএফ-এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড পিপল্‌স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা সমন্বয়ক প্রদীপন খীসা, নিরন চাকমা, রিকো চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি সোনালী চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক কণিকা দেওয়ান

এ সময় খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে সেটলার কর্তৃক খুন হওয়া প্রতিমা চাকমার স্বামী ও পানছড়িতে ধর্ষণের শিকার রোজিনা ত্রিপুরাও উপস্থিত ছিলেনকমিশনের সদস্যরা মনোযোগ সহকারে তাদের বক্তব্য শোনেনএছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিরাপদ তালুকদার, কমলছড়ি গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বী বীরবাহু চাকমা ও পানছড়ি উল্টাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত চাকমা

কমিশনের কো-চেয়ারম্যান এলসা স্টেমাতোপৌলো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আগের চাইতে বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন, সংঘাত বৃদ্ধি পেয়েছেআজ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আমাদের কাছে তা পরিলতি হয়েছেআগের চেয়ে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছেসরকারের কাছ থেকে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার কারণেই এসব ঘটনার বেশি ঘটছে

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতন, ঘর বাড়ি পুড়ে দেয়ার ঘটনা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ায় পাহাড়িরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে রয়েছে

তিনি বলেন, আমরা খুবই উদ্বিগ্ন যে, এখানে ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি হচ্ছেতিনি আশ্বস্ত করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের মধ্যে প্রায় সবাই ঐক্য চাইসিএইচটি কমিশনও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেএ বিষয়ে আমরা জেএসএস-এর সাথেও আলোচনা করবো

ইউপিডিএফ-এর প থেকে থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে আলোচনা করেন ইউনাইটেড পিপল্‌স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলার প্রধান সংগঠক প্রদীপন খীসাতিনি লক্ষ্ণীছড়িতে সেনা-মদদপুষ্ট বোরকা পার্টির সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, ইউপিডিএফের উপর রাজনৈতিক নিপীড়ন বৃদ্ধি, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারী নির্যাতন, খুন, ধর্মীয় নির্যাতন, ভূমি বেদখল, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সাজেকে যানবাহনের ওপর নিয়ন্ত্রণ, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রাখতে সন্তু লারমাকে সেনাবাহিনীর উস্কানিদান ও সন্তু গ্রুপ কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেনএছাড়া ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধে যে কারোর উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হবে বলে তিনি কমিশনকে কথা দেন

কমিশনের সাথে বৈঠকে সরকারের কাছে উত্থাপনের জন্য ইউপিডিএফ-এর প থেকে কমিশনের কাছে ১৪ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়সুপারিশগুলো হলো: ১ভূমি অধিকারসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রদান করা, সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নেয়া, সেটলারদেরকে সমতল অঞ্চলে জীবিকার নিশ্চয়তাসহ পুনর্বাসন করাতাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রতিশ্রুত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক সাহায্য গ্রহণে সম্মত হওয়া, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া, ভূমি বেদখল বন্ধ করা ও বেদখলকৃত জমি অবিলম্বে ফিরিয়ে দেয়া; জিয়াউর রহমান ও স্বৈরাচারী এরশাদ আমলে বেআইনীভাবে সেটলারদের দেয়া ভূমি বন্দোবস্ত বাতিল করা, ভারত প্রত্যাগত পাহাড়ি শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের ক্ষতিপূরণসহ যথাযথভাবে পুনর্বাসন করা, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী কর্তৃক জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমা গ্রুপকে মদদদান বন্ধ করা, ক্ষ্মীছড়িতে সেনা-মদদপুষ্ট বোরকা পার্টিকে ভেঙে দেয়া ও এর সদস্যদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা রয়েছে তাদের বিচার করা, সাজেক, খাগড়াছড়ি, লংগুদু ও রামগড়-মানিকছড়িতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা ও ঘটনার সাথে জড়িত সেনা অফিসার, সদস্য ও সেটলারদের শাস্তি প্রদান করা, ১০ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন বন্ধে কঠোর পদপে গ্রহণ করা; ধর্ষণের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা, ১১পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; মহালছড়ির করল্যাছড়িতে সারনাথ অরণ্য কুটিরে মোতায়েন সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করা; মাইসছড়ি অরণ্য বন কুটিরের বেদখল হওয়া জমি ফিরিয়ে দেয়া; ১৭ এপ্রিল সেটলার হামলায় রামগড়ের উত্তর শণখোলা পাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত দায়মা সুফ বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিহার, গীর্জা ও মন্দির পুনঃনির্মাণ করা, ১২ইউপিডিএফের ওপর রাজনৈতিক দমনপীড়ন বন্ধ করা; সকল রাজনৈতিক দল যাতে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের গণতান্ত্রিক কার্যক্রম চালাতে পারে তার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা; পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে আটক, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা প্রদানসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা, ১৩সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রোধ করতে প্রয়োজনীয় অগ্রিম ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ১৪রাঙামাটি জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের বাঘাইহাটে সেটলারদের দ্বারা যাত্রীবাহী ও মালবাহী যান নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করা

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More