ইউপিডিএফের মানবাধিকার পরীবিক্ষণ সেলের তথ্য :

২০১৭ সালে ইউপিডিএফ’র ৩ জন নিহত, ৯৫ জন গ্রেফতার; যৌন সহিংসতার শিকার ২৪ জন পাহাড়ি নারী

0

ইউনাইডেট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর মানবাধিকার পরীবিক্ষণ সেল ২০১৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, গত বছর রাষ্ট্রীয় হেফাজতে ১ জন ও সেনা-সৃষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে ২ জন ইউপিডিএফ সদস্য-সমর্থক নিহত হয়েছেন, সাম্প্রদায়িক হামলায় প্রাণ হারান একজন বৃদ্ধা নারী, গ্রেফতার হয়েছেন ৯৫ জন ইউপিডিএফ সদস্য ও সমর্থক, যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৪ জন নারী, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে ১০টি, সেনা অপারেশনের সময় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নারী, শিশুসহ ১১ জন এবং ধর্মীয় পরিহানিসহ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকবার।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছর রাঙামাটির লংগদুতে সেনা-সেটলার কর্তৃক বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিনটি গ্রামে পাহাড়িদের ২৫০টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেটলারদের এ হামলায় ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা আগুনে পুড়ে মারা যায়।

এছাড়া খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সেটলাররা হামলা চালালে অর্ধশতাধিক পাহাড়ি আহত হয়। রামগড় উপজেলার তিনটি পাহাড়ি গ্রামেও সেটলার দ্বারা আরো এক সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়। এতে ১১টি বাড়ি ও ১টি দোকান ভাংচুর করা হয়।

উক্ত ঘটনাবলী ছাড়াও দুই বৌদ্ধ ভিক্ষুর উপর হামলাসহ গত বছর আরো অন্তত ৮টি সাধারণ হামলার ঘটনা ঘটেছে।

রিপোর্টে ইউপিডিএফের উপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, গত বছর ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভাকাক্সক্ষীসহ কমপক্ষে ৯৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে জনপ্রতিনিধি, গ্রামের কার্বারী, নারী ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীও রয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেককে নির্যাতনের পর ছেড়ে দেওয়া হয়, অনেকে জামিনে মুক্তি পান, তবে ইউপিডিএফ সংগঠক প্রদীপময় চাকমাসহ অনেকে এখনো কারাবন্দী রয়েছেন।

সেনাবাহিনীর অমানুষিক নির্যাতনে পিসিপি রাঙামাটির নানিয়াচর শাখার নেতা ও কলেজ ছাত্র রমেল চাকমা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া গত বছর জুড়েই খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ জনগণের ঘরবাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি-হয়রানি, নির্যাতন, সভা-সমাবেশে বাধা প্রদান-হামলা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান-বাড়ি ভাংচুর, ধর্মীয় কাজে বাধা দানের মতো ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ তল্লাশি চালানো হয় রাতে। নারী, শিশুসহ ১১ জন সেনাবাহিনী কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে ২জন নারী, ১জন শিশু ও ১জন গ্রামের কার্বারী রয়েছেন।

সেনাবাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধে বান্দরবানের লামায় ২ জন ম্রো শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া খাগড়াছড়ির রামগড়ে বিজিবি কর্তৃক এক পাহাড়ি গ্রামবাসীর নির্মাণাধীন বাড়ি ভেঙে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

নারীর ওপর সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, গত বছর নারী ধর্ষণ, খুন, ধর্ষণ চেষ্টা ও যৌন হেনস্থার শিকার হন ২৪ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হন ৭ জন, ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন ৯ জন, যৌন হেনস্থার শিকার হন ৩ জন এবং কলেজ ছাত্রীসহ খুন হন ৪ জন নারী ও হামলার শিকার হয় ১জন স্কুল ছাত্রী।

সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ১জন স্কুল ছাত্রী পুলিশ সদস্য কর্তৃক ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন, আর সেনা সদস্য কর্তৃক যৌন হেনস্থার শিকার হন ৩ জন নারী।

সেনা সৃষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনী কর্তৃক ইউপিডএফ’র এক সংগঠকসহ দুই জন খুন হয়েছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

ইউপিডিএফ’র প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

 

রিপোর্টে উল্লেখিত ঘটনাবলীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

ক. সাম্প্রদায়িক হামলা
(১) ২০১৭ সালে সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলায়। ২ জুন সংঘটিত উক্ত হামলায় তিনটিলা, বাত্যা পাড়া ও মানিকজোড় ছড়া এই তিনটি পাহাড়ি গ্রামে ২৫০টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

১ জুন খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল নামক স্থানে নুরুল ইসলাম নয়ন নামে লংগদুর এক ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকের লাশ পাওয়া যায়। লাশটি লংগদুতে নেওয়া হলে সেটলাররা সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়াতে শুরু করে। ২ জুন সকালে আওয়ামী যুব লীগের নেতৃত্বে সেটলার বাঙালিরা লাশ নিয়ে মিছিল বের করে। তারা মিছিল নিয়ে লংগদু সদরের দিকে যাবার সময় পাহাড়িদের গ্রামে হামলা চালায় ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদ ছিল এবং সেটলাররা যখন পাহাড়িদের গ্রামে হামলা চালাচ্ছিল তখন পিছনে সেনাবাহিনী সদস্যরা তাদের সহযোগিতা দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এ হামলায় গুণবালা চাকমা নামে ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা আগুনে পুড়ে মারা যায়।

সরকার বাড়ি তৈরি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা এখনো খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

(২) উক্ত ঘটনা ছাড়াও গত বছর ৩ জুন খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ও তার মুক্তির দাবিতে আয়োজিতি শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশে সেনা মদদে সেটলার বাঙালিরা হামলা চালায়। এতে নারী-পরুষসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়।

(৩) খাগড়াছড়ির রামগড়েও পাহাড়িদের গ্রামে সেটলার কর্তৃক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালে। ৩০ জুন রাতে রামগড় সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সোনাইআগা, তালতলী ও ব্রতচন্দ্র কার্বারী পাড়ায় সংঘটিত হামলায় কমপক্ষে ১১টি বাড়ি ও ১টি দোকান ভাঙচুর করা হয়। এতে একজন পাহাড়ি আহত হয়। সেটলাররা নিজেরা পটকাবাজি ফুটিয়ে ‘শান্তিবাহিনী এসেছে, শান্তিবাহিনী এসেছে’ বলে চিৎকার দিয়ে বিজিবি’র প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় এ হামলা চালায়। হামলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজ বসতভিটা থেকে পাহাড়িদের বিতাড়িত করা।

(৪) এছাড়াও ৩১ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেণীর এক পাহাড়ি ছাত্রীকে ইভটিজিং-এর প্রতিবাদ করায় সেটলার দুর্বৃত্তরা পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হামলা চালায়।

(৫) ২৭ মার্চ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর দুই ছাত্রকে সেটলাররা মারধর করলে পাহাড়ি ছাত্ররা এর প্রতিবাদ জানায়। পরে সেটলাররা সংঘবদ্ধ হয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে পাহাড়ি ছাত্রদের উপর হামলা করলে এতে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

(৬) ১৩ এপ্রিল বৈসাবি উৎসবের দিন খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে ছাদেকুল ইসলাম নামে এক মোটর সাইকেল চালকের লাশ পাওয়াকে কেন্দ্র করে সেটলাররা মিছিল সহকারে গিয়ে পাহাড়ি অধ্যুষিত গ্রমে হামলার চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা দুই পাহাড়িকে মারধর করে ও মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

(৭) ১৪ মে রাঙামাটিতে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিতে যাবার সময় সেটলার বাঙালিরা কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া কলেজ যাত্রী ছাউনির পাশে এক পাহাড়ির দোকানে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে দোকানের আসবাবপত্র ভাঙচুর, মালামাল তছনছ ও দুই ছাত্রকে মারধর করে।

(৮) ৭ জুন সন্ধ্যার সময় আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য থৈম্রাচিং চৌধুরীর দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে তার আত্মীয়-স্বজনরা খাগড়াছড়ি থেকে রামগড়ে যাবার সময় বাস টার্মিনালে সেটলাররা তাদের উপর হামলা চালায়। এতে ৮ জন আহত হয়।

(৯) ৩১ জুলাই নবম শ্রেণীর এক পাহাড়ি ছাত্রীকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগের কর্মীরা গুইমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাহাড়ি ছাত্রদের উপর হামলা করে। গুইমারা উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাগর এবং আনন্দ, বিজয় ও আকাশের নেতৃত্বে এই হামলা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

(১০) এছাড়া ৬ সেপ্টেম্বর মাটিরাঙ্গায় এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর উপর সেটলার দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় এবং এলোপাথাড়ি মারধর করে। এর আগে ২৮ জুলাই খাগড়াছড়ি সদরে জনবল বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষের উপর লোহার রদ দিয়ে হামলা করে সেটলার দুর্বৃত্তরা।

খ. গ্রেফতার, নির্যাতন, হেফাজতী মৃত্যু, তল্লাশি-হয়রানি
গত বছর ইউপিডিএফ’র উপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হয়। ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক শুভাকাঙ্ক্ষাীসহ কমপক্ষে ৯৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমাসহ গ্রামের কার্বারী, নারী ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীও রয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেককে আটকের পর নির্যাতন ও হয়রানির পর ছেড়ে দেওয়া হয়, অনেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন আর ইউপিডিএফ সংগঠক প্রদীপময় চাকমাসহ অনেকে এখনো কারাবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।

গ্রেফতারের পর সেনাবাহিনীর অমানুষিক নির্যাতনে পিসিপি নেতা ও নান্যাচর কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমা মারা যায়। তাকে ৫ এপিল আটক করার পর নান্যাচর জোনে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেনারা মধ্য রাতেই তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ এপ্রিল সে মারা যায়।

চট্টগ্রাম থেকে তার লাশ বাড়িতে আনার পথে বুড়িঘাট থেকে সেনারা লাশটি ছিনিয়ে নিয়ে ২১ এপ্রিল সামাাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি ছাড়াই পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলে।

গত বছর জুড়েই খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী কর্তৃক সাধারণ মানুষের ঘরবাড়িতে তল্লাশি-হয়রানি, নির্যাতন, সভা-সমাবেশে বাধা প্রদান-হামলা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান-বাড়ি ভাংচুর, ধর্মীয় কাজে বাধা দানের মতো ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ তল্লাশি চালানো হয় রাতে। নারী, শিশুসহ ১১ জন সেনাবাহিনী কর্তৃক শারিরীক নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে ২জন নারী, ১জন শিশু ও ১জন গ্রামের কার্বারী রয়েছেন।

সেনাবাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধে বান্দরবানে লামায় ২ জন ম্রো শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া খাগড়াছড়ির রামগড়ে বিজিবি কর্তৃক এক পাহাড়ি গ্রামবাসীর নির্মাণাধীন বাড়ি ভেঙে দেয়ার ঘটনা ঘটে।

গ. ধর্মীয় পরিহানি
রাঙামাটির লংগদুতে থলচাপ অরণ্য কুটির নামে একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় কুটির সেনাবাহিনী কর্তৃক দরজা ভেঙে জুতাপায়ে প্রবেশ করে ধর্মীয় পরিহানি করা হয়। এছাড়া বরকল উপজেলা সদরে ভালুটিলা নামক স্থানে এলাকাবাসী একটি বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করতে চাইলে স্থানীয় বিজিবি কর্তৃক বাধা প্রদানের ঘটনা ঘটে।

ঘ. সভা-সমাবেশে বাধা দান
২০১৭ সালে ইউপিডিএফ’র সহযোগী সংগঠন ও জনগণের আয়োজিত বেশ কিছু কর্মসূচিতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ বাধা প্রদান করে ও হামলা চালায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-

৮ মে রমেল চাকমার হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে আয়োজিত গণমানববন্ধনে সেনাবাহিনী বাধা দেয় ও হামলা চালায়। এতে ১৮ জন আহত হয়।

২০ মে খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে সেনাবাহিনী বাধা দেয় ও দু’দফায় হামলা চালিয়ে ভ-ুল করে দেয়। এতে ৮ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জোন থেকে ৭ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ১ জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

২২ মে রাঙামাটির নান্যাচরে বৌদ্ধ ধর্মীয় কুটির ভাংচুরের প্রতিবাদে জনসাধারণের আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচিতে সেনাবাহিনী হামলা চালায়। এতে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত ও ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

৩ জুন দীঘিনালায় লংগদু হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত পিসিপি’র মিছিলে সেনাবাহিনীর হামলা চালায়। এতে ২ পিসিসি কর্মীকে আটক করা হয়।

৭ জুন খাগড়াছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন’র আয়োজিত শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশে অংশগ্রহণকারী নারীদের উপর বিজিবি-পুলিশ কর্তৃক হামলা চালায়। এতে ২১ জন নারীকে আটক করা হয়।

৩০ জুন সংবিধানের বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাসের ৬ বছরপূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়ির রামগড়ে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে বিজিবি বাধা প্রদান করে।

২৩ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অগণতান্ত্রিক সার্কুলার বাতিলের দাবিতে খাগড়াছড়ির গুইমারায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আয়োজিত মিছিলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ হামলা চালায়। তারা মিছিলকারীদের উপর রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয় এবং ২ জন পিসিপি কর্মীকে আটক করা হয়।

রাজনৈতিক কর্মসূচি ছাড়াও খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও মাটিরাংগায় পাহাড়িদের সামাজিক উৎসব বৈসাবি উপলক্ষে আয়োজিত র‌্যালি এবং পানছড়িতে গণপিকনিকের মতো সামাজিক কর্মসূচিতেও বাধা প্রদান ও হামলার ঘটনা ঘটে।

ঙ. নারীর ওপর সহিংসতা
গত বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে কমপক্ষে ২৪ জন নারী ধর্ষণ, খুন, ধর্ষণ চেষ্টা, যৌন হেনস্থা ও হামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হন ৭ জন, এক কলেজ ছাত্রীসহ খুন হয়েছেন ৪ জন, ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন ৯ জন, যৌন হেনস্থার শিকার হন ৩ জন নারী এবং হামলার শিকার হয়েছেন ১জন স্কুল ছাত্রী। সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে পুলিশ সদস্য কর্তৃক একজন স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন। আর সেনা সদস্য কর্তৃক যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন ৩ জন নারী।

উল্লেখ্য, কলেজ ছাত্রী ইতি চাকমা খুনের প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে এর দায় পাহাড়ি ছাত্রদের উপর চাপানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনার আসামি হিসেবে দুই কলেজ ছাত্রকে আটকের ঘটনা ঘটেছে।

. সেনা-সৃষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনী কর্তৃক খুন-সন্ত্রাস
পার্বত্য চট্টগ্রামে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় ইউপিডিএফ(গণতান্ত্রিক) নাম দিয়ে একটি “নব্য মুখোশ বাহিনী” গঠন করা হয়। গঠনের পর পরই এই বাহিনীকে রাঙামাটির নান্যাচরে নিয়ে গিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে নিয়োজিত করা হয়। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় সন্ত্রাসীরা গত ৫ ডিসেম্বর নান্যাচরে সাবেক ইউপি সদস্য অনাদি রঞ্জন চাকমা ও ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ইউপিডিএফ’র সংগঠক অনল বিকাশ চাকমাকে গুলি করে খুন করে। এছাড়া সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সহযোগীতায় সন্ত্রাসীরা নান্যাচর ও খাগড়াছড়িতে বেশ কয়েকটি অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। #

—————————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More