অপহরণ হত্যার নাটক সৃষ্টি করে জুম্ম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে- জুম্ম শরনার্থী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : রাঙামাটির লুঙুদু উপজেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে আজ শনিবার(০৩ জুন, ২০১৭) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতি অভিযোগ করে বলেছে, অপহরণ-হত্যার নাটক সাজিয়ে জুম্ম জনগণকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুলের স্বাক্ষরে পাঠানো বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ঘটনার উদাহরণ প্রদান করে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই অভিযোগ করেন। সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয় লুঙুদু উপজেলার যে স্থানসমূহে গত ০২ জুন সেটলাররা হামলা করে জুম্ম জনগণের শতশত ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে সেই স্থানে ১৯৮৯ সালের ৪ মে একবার ৩২ জন জুম্মকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, আহত হয় শতশত এবং ৫ শত ঘরবাড়িতে সেটলাররা লুটপাট চালায়।
গত ২০১৩ সালের ৩ আগস্ট খাগড়াছড়ির তাইন্দঙে কামাল হোসেন নামে এক সেটলার অপহরণ নাটক সাজায়। এরপর পরিকল্পনা অনুসারে ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী অধ্যুষিত গ্রাম বগাপাড়া, সর্বেশ্বর পাড়া ও মনোদাশ পাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে সেটলাররা লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও মারধর করে। বিজিবি ও পুলিশ তখন নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করেছিল। এছাড়া মাটিরাঙ্গার উক্ত স্থানে ১৯৮১ ও ১৯৮৬ সালে এভাবে অপহরণ নাটক সাজিয়ে জুম্ম জনগণের ঘরবাড়ি অগ্নিসংযোগ করা হয় জায়গা জমি বেদখল করা হয় বলে বিবৃতিতে সংগঠনটি অভিযোগ করেছে।
২০০৯ সালের ১৫ আগস্ট মাটিরাঙ্গার তাইন্দঙে মো. সোহাগ নামে একজনকে তিনজন সেটলার নিজেরা হত্যা করে পাহাড়িরা হত্যা করেছে বলে প্রচার চালিয়ে পাহাড়িদের উপর হামলার চক্রান্ত চালায়। পরে হত্যাকারীদের এই চক্রান্ত ফাঁস হলে সেবার পাহাড়ি জনগণ হামলা থেকে রক্ষা পায়। তাছাড়া ২০১৪ সালের ৬ মে মটর সাইকেল চালক শাহ আলম নামে একজন কয়েকজন সেটলার কর্তৃক খুন হন। এই ঘটনার পরে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বাঙালি সেটলার ছাত্র পরিষদ মিছিল করে। কিন্তু পরে হত্যাকারী সেটলাররা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ২০১৩ সালের ২১ জুন দিঘীনালার কবাখাীল নিবাসী মটর সাইকেল চালক চান মিয়া খাগড়াছড়ি-দিঘীনালা সড়কের ৬ মাইল এলাকায় খুন হন। পরে মটর সাইকেল সাতক্ষীরা জেলায় পাওয়া যায়।
উপরোক্ত বিভিন্ন ঘটনার কথা উল্লেখ করে সংগঠন অভিযোগ করে যে, এরকম বহু ঘটনার প্রমাণ রয়েছে, যেখানে কোনো সেটলার বাঙালি মারা গেলে জুম্মরা হত্যা করেছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। এরপর কোনো ধরণের তথ্য প্রমাণ ছাড়াই জুম্মদের অভিযুক্ত করে ঘটনার সাথে সাথেই জুম্মদের আক্রমণ লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণ ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। নিজেরাই দুর্ঘটনা সংঘটিত কওে জুম্মদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য সাজিয়ে বিক্ষোভ মিছিল, হরতাল, সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন প্রভৃতি পালন করা হয় বলে সংগঠন তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করে।
এছাড়া সংগঠন উক্ত বিবৃতিতে এই সকল ঘটনা সংঘটিত হবার পরে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তারা তাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জুম্মরা অপরাধী বলে তথ্য প্রেরণ করে বলে অভিযোগ করেন।
বিবৃতিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও নিরাপত্তা আনয়নের লক্ষে লুঙুদু হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের যথোপযুক্ত শাস্তি, মৃত ব্যক্তির জন্য ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অপারেশন উত্তরণ প্রত্যাহার, সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন, জুম্মদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা ও জুম্ম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র ও নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধসহ ১০ দফা দাবিনামা উপস্থাপন করেন।
——————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।