আন্তর্জাতিক নারী দিবসে খাগড়াছড়িতে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি: “সেনা-সেটলার প্রত্যাহার করে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত কর” এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে খাগড়াছড়িতে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা এবং স্কুল-কলেজ থেকে সহস্রাধিক নারী ও ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন।
হিল উইমেন্স ফেডারেশেন (এইচডব্লিউএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ (পাচনাস) যৌথভাবে আজ ৮ মার্চ রবিবার সকাল ১০:৪৫টায় খাগড়াছড়ি শহরের টিটিসি মোড়ে এই সমাবেশের আয়োজন করে। এতে এইচডব্লিউএফ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক নতুন কুমার চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিটন চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কাজলী ত্রিপুরা, পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শ্যামলী ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি কণিকা দেওয়ান। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক শিখা চাকমা এবং শোক প্রস্তাব পাঠ ও সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাদ্রী চাকমা।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে নিরূপা চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতনের চিত্রকে উদ্বেগজনক আখ্যায়িত করে বলেন, ‘নারীরা আজ ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ নন। ইদানিং প্রায় প্রতিদিন ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। কোন বিবেকবান মানুষ এ অবস্থা মানতে পারে না, কিন্তু তারপরও সরকার এ ব্যাপারে চরম উদাসীনতা প্রদর্শন করছে।’
কল্পনা চাকমাকে অপহরণকারীদের শাস্তি না হওয়ায় এবং এ কোন ধর্ষণ ঘটনার বিচার না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর উপর যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন এবং নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন বন্ধে অপরাধী ধর্ষকদের শাস্তিসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
ইউপিডিএফের সংগঠক নতুন কুমার চাকমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীরা বিভিন্নভাবে অবহেলিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত। তাদের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের এবং সরকারের। কিন্তু উল্টো সরকার এবং রাষ্ট্র পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের নিরাপত্তা হরণের জন্য দায়ি।’
তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভাগ কর, শাসন কর নীতি প্রয়োগ করে’ পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসন শোষণ জারী রাখার অভিযোগ করে বলেন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসন ছাড়া এই অঞ্চলের জনগণের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘নারীদের প্রতি যে নির্যাতন চলছে তার বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। কল্পনা চাকমার অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস এবং সবিতা চাকমা, ভারতী চাকমা, উম্রাচিং মার্মার খুনিদের এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার ও শাস্তি না হওয়ায় দুর্বৃত্তরা বার বার পার পেয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মেয়েরা আগে চলাফেরায় স্বাধীনতা ভোগ করতো, কিন্তু বিশাল সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি ও সেটলারদের আগমনের কারণে এখন আর তাদের সে স্বাধীনতা নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্পের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যে পর্যটন পাহাড়িদেরকে নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করে সেই পর্যটন আমরা চাই না।
সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা বলেন, ‘সাজেকে উন্নয়নের নামে যে সমস্ত পর্যটন কেন্দ্র ও সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে তা আমাদের জন্য উন্নয়ন হতে পারে না। বরং তাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের জন্য খুবই ক্ষতি হচ্ছে। পর্যটনের কারণে আমরা একদিকে ভূমি হারাচ্ছি আর অন্যদিকে আমাদের মা-বোনদের নিরাপত্তা বাড়তি হুমকির মুখে পড়ছে।’
ঘিলেছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কাজলী ত্রিপুরা বলেন, ‘গত বছর ১৬ ডিসেম্বর রাংগামাটি জেলার নান্যাচর উপজেলায় বগাছড়ির কয়েকটি গ্রামে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।’ তিনি এ ধরনের হামলা থেকে বাঁচতে সংগঠিত হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি কণিকা দেওয়ান বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশন বিভিন্ন বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হিল উইমেন্স ফেডারেশন সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করেছে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল র্যালী বের করা হয়। র্যালীটি খাগড়াছড়ি শহর প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদ মাঠে এসে শেষ হয়।
——————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।