পাহাড় ও সমতলে নারী নির্যাতন বন্ধসহ বিলাইছড়িতে ২ বোন ধর্ষণ-যৌন নির্যাতনকারী সেনা সদস্যদের শাস্তির দাবিতে
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ঢাকায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সমাবেশ
ঢাকা : আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন। বিক্ষোভ সমাবেশে আজ মাটিরাংগাতে সেটলার কর্তৃক পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণ এবং নারী দিবসের কর্মসূচীতে গুইমারায় নারীদের ওপর সেনা-পুলিশের হামলা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের তিন নেতা-কর্মীকে আটকের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। গুইমারায় নারী দিবসের কর্মসূচীতে সেনা-পুলিশের হামলায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি দ্বিতীয়া চাকমাসহ বেশ কয়েকজন নারী সংগঠনের নেতা-কর্মী আহত হয় বলেও সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে আজ ৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ১১ টায় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলটি পল্টন মোড় হয়ে ঘুরে এসে পুনরায় প্রেসক্লাবের সামনে শেষ হয়।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরুপা চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিনয়ন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দপ্তর সম্পাদক রিপন চাকমা । সমাবেশটি পরিচালনা করেন এইচডব্লিউএফের সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা। এছাড়াও সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী নারী মুক্তির আহবায়ক নাসিমা নাজনীন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সারাদেশে অব্যাহতভাবে নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে। নারীরা প্রতিনিয়ত খুন-ধর্ষণ-যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। খোদ রাষ্ট্রীয় বাহিনী সদস্যদের দ্বারাও ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে চলেছে। সেনা কর্তৃক কল্পনা চাকমা অপহরণ, ক্যান্টনমেন্টে তনু ধর্ষণ-হত্যা এবং সম্প্রতি সেনা সদস্য কর্তৃক দুই মারমা বোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার কোন ঘটনায় দোষীদের এখনো সাজা হয় নি। নারী সুরক্ষায় সরকারের ব্যর্থতা এবং নারী নির্যাতনকারীদের যথাযথ বিচার না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে দিন দিন নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সেটলার দ্বারা প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। হাতে-বাজারে-রাস্তাঘাটে এমনকি নিজের বাড়িতেও নিরাপদ নয়, হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্নভাবে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানীর শিকার হতে হয় নারীদের। থুইমা চিং-সুজাতা-বালাতি-ইতিসহ অনেককে সেটলার দ্বারা ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হতে হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কর্মসূচীতে হামলার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বক্তারা বলেন, আজকে গুইমারায় নারীদের ওপর হামলা করে সেনাপ্রশাসন কার্য্ত আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে অবজ্ঞা করেছে। এই থেকে সহজে অনুমেয় পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী সমাজ কি ধরণের নিপীড়নের পরিবেশে বসবাস করছে।
বক্তারা আরো বলেন, পাহাড়ে সেনাপ্রশাসন পাকবাহিনীর দমনের নীতিকে অনুসরন করছে। সেনাপ্রশাসন হত্যা ধর্ষণ, ধরপাকড়-নির্যাতন করে প্রতিনিয়ত মানবধিকারকে ভূলন্ঠিত করে চলেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। অস্ত্রগুজে দিয়ে গ্রেফতার করে স্বার্থান্বেষী সেনাচক্র রীতিমতো প্রমোশন বাণিজ্য করছে। তারা বলেন, পাকবাহিনী যেমনি এদেশে রাজাকার সৃষ্টি করেছে, তেমনি সেনাপ্রশাসন ‘নব্যমুখোশ’ বাহিনী সৃষ্টি করেছে। রাজাকারের মতো মতো নব্য মুখোশদেরও করুন পরিণতি বরণ করতে হবে।
সমাবেশ থেকে পাহাড় ও সমতলে নারী নির্যাতন বন্ধসহ বিলাইছড়িতে ২ বোন ধর্ষণ-যৌন নির্যাতনকারী সেনা সদস্যদের শাস্তির জোর দাবি জানান বক্তারা।
—————————-
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।