আলুটিলা সেনাদের স্পাই নেটওয়ার্ক সৃষ্টির কৌশল

0

ডেস্ক রিপোর্ট॥ খাগড়াছড়ির জিরো মাইল ও আলুটিলা এলাকার হেডম্যান ও কার্বারীদেরকে সেনাবাহিনীর স্পাই হিসেবে ব্যবহারের জন্য তাদের হাতে মোবাইল সিম কার্ড তুলে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত বুধবার (২২ মার্চ) খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমান আলুটিলা ক্যাম্পে এক মিটিঙে ওই সিম তুলে দেন।

ঐ দিন জিরো মাইল ও আলুটিলা এলাকার ৪ মৌজার হেডম্যান ও ১৬ জন কার্বারীসহ মোট ২৫ জনকে আলুটিলা ক্যাম্পে ডাকা হয়। হেডম্যানরা হলেন ২০৪ নং আলুটিলা মৌজার হিরঞ্জয় ত্রিপুরা (তিনি মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও), ২০৫ নং তৈকাতাং মৌজার রামানন্দ ত্রিপুরা, ২৫৭ নং নুনছড়ি মৌজার ক্ষেত্র মোহন ত্রিপুরা ও ২৬৫ নং গোলাবাড়ি মৌজার থুইক্যচিং মারমা।

ছবি সৌজন্যে: প্রথম আলো
ছবি সৌজন্যে: প্রথম আলো

এছাড়া সাপমারা গ্রামের কার্বারী মধুমিতা ত্রিপুরা, মাইতি পাড়ার কার্বারী জ্যোতি ত্রিপুরা ও আলুটিলা গ্রামের কার্বারী অমরেন্দ্র ত্রিপুরাসহ ১৬ জন কার্বারীকে ক্যাম্পে হাজির হতে বলা হয়। অনেকে গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কাজ ফেলে ক্যাম্পে যেতে বাধ্য হয় বলে জানা গেছে।

এ সময় মীর মুশফিকুর রহমান তাদেরকে বলেন, ‘সম্প্রতি হাটহাজারীতে জনসংহতি সমিতির চাঁদাবাজ ১১ লক্ষ টাকাসহ ধরা পড়েছে। এখানেও সে ধরনের লোক আছে। তাদের ব্যাপারে আমাদেরকে তথ্য দিতে হবে।’

তথ্য দেয়ার জন্য সেনারা তাদের প্রত্যেককে সিম কার্ড দেয়। ক্যাম্প থেকে ফেরার পর অনেকে আর্মিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, এ কথাগুলো আমাদের বলার প্রয়োজন কী? আর সিম কেনার টাকা আমাদের নেই নাকি?

ক্যাম্পে আর্মিদের মিটিঙে অংশ নেয়া এক কার্বারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি জানতাম না কেন ডাকা হয়েছে। গিয়ে দেখি নানা আজে বাজে কথা শোনানো। তারপর আমাদের হাতে সিম কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে তাদেরকে যেন আমরা তথ্য দিই।’

কালিন্দ্র ত্রিপুরা নামে এলাকার এক ব্যক্তি এ ব্যাপারে মন্তব্য করে বলেন, ‘তথ্যের জন্য সিম কার্ড দেয়ার অর্থ হলো আর্মিরা সাধারণ লোকজনকে স্পাই বানাতে চাইছে এবং জনগণের মধ্যে বিভেদ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পাহাড়িদের মধ্যে একে অপরের ব্যাপারে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়ার জন্যই আর্মিরা সিম কার্ড দিয়েছে।’

তিনি আন্দাজে ওই সিমগুলো ব্যবহার না করার জন্য সকলকে পরামর্শ দেন। ‘কারণ ওই সিমগুলো কার নামে রেজিস্ট্রি করা তা তো আমরা জানি না। সেগুলো কোন দাগী সন্ত্রাসী বা খুনীর কাছ থেকে পাওয়া বা জব্দ করা সিমওতো হতে পারে। পরে আর্মিরা সন্ত্রাসীদের সে সিমগুলো তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে বলে প্রচার করে আইনগতভাবে হয়রানি করতে পারে। ’

তিনি অতীতে এ ধরনের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ‘কয়েক বছর আগে রামগড়ে আর্মিরা ৫-৬ জন ত্রিপুরা গ্রামবাসীকে বন্য প্রাণী শিকারের জন্য বন্দুক রাখার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু কিছু দিন পর তারা ওই বন্দুকসহ তাদেরকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়।’

আর্মিদের দেয়া ওই সিমগুলোও হেডম্যান কার্বারীদের বিপদের কারণ হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ত্রিপুরা স্টুডেস্টস ফোরামের সাবেক এক নেতা সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘হেডম্যান কার্বারীরা হলেন এলাকায় সন্মানীত ব্যক্তি। কিন্তু আর্মিরা তাদেরকে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করছে, তাদেরকে সেনা স্পাই হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। এতে তাদের মর্যাদার প্রতি চরম অপমান করা হয়েছে। কারণ স্পাইরা সমাজে সব সময় জাতীয় শত্রু হিসেবে ঘৃণিত, নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে থাকেন। কাজেই এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আর্মিরা হেডম্যান ও কার্বারীদের সাথে সাধারণ জনগণের দূরত্ব তৈরি করতে চাইছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘হেডম্যান কার্বারীরা আর্মিদের বেতনধারী চাকর বা গোলাম নয়। তারা এলাকায় ঐতিহ্যবাহী নেতা। জনগণের মধ্যে তাদের মান সম্মান ও ইজ্জত রয়েছে। কেউ চায় না লোকজন আড়ালে আবডালে তাদেরকে আর্মির স্পাই বলুক। আর্মিদের তথ্যের দরকার হলে তারা তাদের বেতনধারী ডিজিএফআই গোয়েন্দাদের ব্যবহার করতে পারে। এতে অনর্থক হেডম্যান কার্বারীদের জড়ানোর অর্থ কী?’
——————

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More