কল্পনা চাকমা অপহরণের ১৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সিএইচটিনিউজ.কম
কল্পনা চাকমা অপহরণের ১৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন। আজ ১৪ জুন, মঙ্গলবার, বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি নিরূপা চকামা। অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সংগঠক মিঠুন চাকমা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক সামিউল আলম, বিপ্লবী ছাত্র সংঘের আহ্বায়ক আশীষ শর্মা ও ল্যাম্পপোষ্টের সাধারণ সম্পাদক আফরোজা খাতুন। এছাড়া উর্দুভাষী সংগঠক মুশতাক আহম্মেদ সমাবেশে সংহতি জানান।সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মাদ্রী চাকমা ও সমাবেশ পরিচালনা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রীনা দেওয়ান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, কল্পনা অপহরণের পর ১৫বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। দেশে বিভিন্ন সরকার রদ-বদল হয়েছে। কিন্তু কোন সরকারই কল্পনা অপহরণের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের উদ্যোগ নেয়নি এবং চিহ্নিতঅপহরণকারী লে: ফেরদৌস সহ তার সহযোগীদের শাস্তির ব্যবস্থা করেনি৷ বর্তমান সরকারও তার কোন ব্যতিক্রম নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ও সেটলার কর্তৃক নারী নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয় উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের মতো সামরিকায়িত অঞ্চলে নারীরাই সবচেয়ে বেশী নির্যাতনের শিকার হয়৷ কল্পনা চাকমা অপহরণ তাই কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। এটা হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর ওপর উগ্র বাঙালী জাতীয়তাবাদী শাসক গোষ্ঠির আধিপত্য বজায় রাখার নীতিরই নগ্ন ও বর্বরতম বহিঃপ্রকাশ।
কল্পনা চাকমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নারীদের প্রতিবাদে ও প্রতিরোধের আন্দোলনকে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী নির্যাতন ও সংখ্যালঘু জাতিগুলোর উপর সকল ধরনের নির্যাতন কিছুতেই সহ্য করা হবে না। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সকল নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যেখানে নারী নির্যাতন সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগাম সহ সারা দেশের নারী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
বক্তারা অবিলম্বে কল্পনা চাকমা অপহরণের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ ও চিহ্নিতঅপহরণকারী লে: ফেরদৌস সহ তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ও সেটলার কর্তৃক নারী নির্যাতন বন্ধ করা ও নারী নির্যাতনের সকল ঘটনার বিচার করে দোষীদের শাস্তি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে সকল ধরনের নারী নির্যাতন বন্ধ করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারপূর্বক তথাকথিত অপারেশন উত্তরণ বাতিল করা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুনর্বাসিত সেটলারদের সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসন ও তাদেরকে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল ও বেদখলকৃত ভুমি ফিরিয়ে দিয়ে সংবিধানে প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দান ও জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও রাঙামাটি থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ১০ নেতা-কর্মীকে অপহরণের ঘটনার সাথে জড়িত সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেসকাব চত্বর ঘুরে শেষ হয়।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৭ঘন্টা আগে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি থানাধীন কজইছড়ি আর্মি ক্যাম্পের তত্কালীন কমান্ডার লে: ফেরদৌস কর্তৃক কল্পনা চাকমা বাঘাইছড়ির নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন।