কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি

0
রাঙামাটি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
 
কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন এবং কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস ও তার দোসরদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন।কল্পনা চাকমা অপহরণের ১৭তম বার্ষিকীতে আজ ১২ জুন বুধবার রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি ও কুদুকছড়িতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।

*কুদুকছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিক্ষোভ মিছিল
কল্পনা অপহরণ দিবস উপলক্ষে আজ ১২ জুন বুধবার সকাল ১১টায় বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে হিল উইমেন্স ফেডারেশন এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে। সকাল ১১টায় বাঘাইছড়ি উপজেলা মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি থানা শাখার সভাপতি লিলিকা চাকমা। এতে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য  রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রীনা দেওয়ান, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি থানা শাখার সভাপতি নিউটন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা কমিটির সহ সভাপতি অঙ্গদ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি মুক্তসোনা চাকমা ও সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির নেতা জ্যোতিলাল চাকমা প্রমুখ।
 
বক্তারা বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের ১৭ বছর অতিবাহিত হলে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে সরকার এখনো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উপরন্তু অপহরণকারীদের রক্ষা করতে সরকার ও প্রশাসন তদন্তের নামে নানা তালবাহানা করে যাচ্ছে।
 
বক্তারা পুলিশ সুপারকে দিয়ে কল্পনা অপহরণ ঘটনা তদন্তে আদালতের দেয়া আদেশ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এটা সরকারের প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। স্বাধীন নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত  ছাড়া কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার সঠিক বিচার পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

* বাঘাইছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশের একাংশ
 
বক্তারা বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের সঠিক বিচার না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে।বক্তারা তালবাহানা না করে অবিলম্বে কল্পনা চাকমা’র চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস ও তার দোসরদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্বরে এসে শেষ হয়।

এদিকে রাঙামাটির কুদুকছড়িতেও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কণিকা দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শান্তি প্রভা চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ এর সদস্য কাজলী ত্রিপুরা প্রমখ। রিনা চাকমা এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে কাজলী ত্রিপুরা তাঁর বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীরা যদি জেগে না উঠেন তাহলে আমরা কিছু করতে পারবো না। তিনি গতকাল ১১ জুন নান্যচর জোন কমান্ডারের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী কর্তৃক নিরীহ গ্রামবাসীর উপর হামলা ও আটকের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

শান্তি প্রভা চাকমা বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে যতদিন কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রকৃত তদন্ত্ম করা হবে না ততদিন আমাদের লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। আজ যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তারা যদি আমাদের নিরাপত্তা বিধান করতেন তাহলে আমাদের সভা সমাবেশের জন্য রাজপথে নামতে হতো না।

সভাপতির বক্তব্যে কণিকা দেওয়ান বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেনাবাহিনী পাহাড়ি সমাজের দীর্ঘদিনের রীতি, প্রথাকে বুথের তলায় পিষ্ট করে পাহাড়ি সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে। গতকাল কুদুকছড়িতে সেনাবাহিনী কর্তৃক নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর নির্যাতনের ঘটনাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, একটি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর নান্যচর জোন কমান্ডারের নেতৃত্বে কুতুকছড়ি এলাকায় তান্ডব চালিয়ে নিরীহ মা-বোনদের মারপিট করে। শুধু তাই নয়, তারা পাভেল চাকমা, পূর্ণলাল চাকমাসহ ৪ জনকে প্রচণ্ড মারধর করে গুরুতর অবস্থায় নান্যচর থানায় সোর্পদ করেছে। তারা এখন থানার হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তিনি অবিলম্বে আটককৃত গ্রামবাসীদের নিঃশর্ত মুক্তি, কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনা তদন্তে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন এবং চিহ্নিত অপহরণকালী লে. ফেরদৌস সহ তার দোসরদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল কুদুকছড়ি বাজার প্রদক্ষিণ করে।
—-

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More