কাউখালী কলমপতি গণহত্যা দিবস উপলক্ষে তিন সংগঠনের উদ্যোগে বেতবুনিয়ায় আলোচনা সভা

0
কাউখালী(রাঙামাটি) প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি গণহত্যার ৩৩ বছর উপলক্ষে আজ ২৫ মার্চ সোমবার দুপুরে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উদ্যোগে কাউখালীর বেতবুনিয়াস্থ অফিসে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য রূপন মারমা। সভায় আলোচনা করেন ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মিঠুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রীনা দেওয়ান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সিমন চাকমা, সদস্য সুকান্ত চাকমা, কাউখালী এলাকার বিশিষ্ট মুরুব্বী প্রাক্তন জনপ্রতিনিধি সুখেন্দু বিকাশ চাকমা, মহিলা মেম্বার নিংবাইঞো মারমা, কাউখালী এলাকাবাসীর হ্লাঅংপ্রু মারমা, চিরঞ্জীব চাকমা। সভা পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চবি শাখার সদস্য রিটন চাকমা।

আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ কাউখালী হত্যাযজ্ঞকে পার্বত্য ইতিহাসের নির্মমতম হত্যাকান্ড বলে অভিহিত করেন। সর্বমোট ৩০০ জনের অধিক জুম্ম জনসাধারণ এই হামলায় খুন হন। প্রকাশ্যে মিটিঙে ডেকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে তাদের হত্যা করা হয়। এই হত্যাযজ্ঞে সরাসরি সেনাবাহিনী অংশ নিয়েছিলো। তৎ
কালীন সময়ে এই হত্যাকান্ড নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক নিন্দা-প্রতিবাদ হলে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু অন্য তদন্ত কমিটির মতো এই তদন্ত কমিটির রিপোর্টও সরকার প্রকাশ করেনি। খুন-হামলায় জড়িত সেনা কর্মকর্তা ও সেটলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই সরকার নেয়নি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে এখন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠেছে। জনগণ ৭১ সালে রাজাকার-আলবদর সহ দেশদ্রোহীদের কর্তৃক গণহত্যায় জড়িতদের উচিত শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। আজ বাংলাদেশেরই একটি এলাকায়
নির্মমতম এই হত্যাকান্ডের বিচারও সরকারকে করতে হবে বলে নেতৃবৃন্দ সভা থেকে দাবি জানান।

সভায় বিশিষ্টি মুরুব্বী সুখেন্দু বিকাশ চাকমা বলেন, অসচেতন অনেকে জুম্ম বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের লড়াইয়ের শক্তি পার্টি সৃষ্টি হবার কারণে আমরা অনেক কষ্ট ভোগ করছি। কিন্তু এই কথাটি আদতেই সত্য নয়। পার্টি সৃষ্টি হয়েছে বলেই আজ সরকার তথা শাসকগোষ্ঠী জুম্ম জনগণের উপর ব্যাপক নিপীড়ন চালাতে পারছে না।


জনপ্রতিনিধি নিংবাইঞো মারমা বলেন, আজো পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত হত্যাকান্ড চলছে। কাউখালীতে অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী থুমাচিঙ মারমাকে নির্মমভাবে ধর্ষন ও খুন করা হয়েছে গত ক’মাস আগে। জুম্ম জনগণের জায়গাজমি জোর করে কেড়ে নেয়ার ঘটনা অহরহই ঘটে থাকে। এখনো নিজের জায়গায় গাছ-বাঁশ কাটতে গেলেও ভয় হয়, হামলার হুমকী আসে, সেটলাররা বাধা দেয়।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের জু্ম্ম জনগণের মাঝে ঐক্য হোক তা চান না। গত ১২ মার্চ লুঙুদুতে জেএসএস(এমএন লারমা)-র কেন্দ্রীয় নেতা সুদীর্ঘ চাকমার মতো মেধাবী যুব নেতাকে খুন করে তিনি আরেকবার তা প্রমাণ করলেন। নেতৃবৃন্দ সন্তু লারমাকে বয়কট করে জুম্ম জনগণের মধ্যে বৃহত ঐক্য গঠন করা সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেন।
 

সভা শুরুর পূর্বে গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
  
উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালের ২৫ মার্চ কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আর সেটেলার কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে বর্বরতম এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিলো।

————

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More