কল্পনা চাকমা অপহরণের ২১ বছর
কুদুকছড়িতে ৫ নারী সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও কল্পনা অপহরণকারীদের কুশপুত্তলিকা দাহ
রাঙামাটি : কল্পনা চাকমা অপহরণের ২১ বছর উপলক্ষে রাঙামাটির কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার দোসরদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশনসহ ৫ নারী সংগঠন।
সোমবার (১২ জুন) সকাল ১০টায় রাঙামাটির কুদুকছড়ি বাজারস্থ বড় মহাপুরুম স্কুল গেইট প্রাঙ্গনে প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন জায়গা থেকে শত শত নারী স্বতঃস্ফুর্তভাবে উক্ত সমাবেশে যোগ দেয়।
কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার দোসরদের শাস্তি, স্বনির্ভর খবংপুজ্জ্যায় বিজিবি-পুলিশের হামলার প্রতিবাদ এবং লংগদুতে পাহাড়ি বসতিতে অগ্নিসংযোগ-লুটপাট-৭০ বছরের বৃদ্ধাকে খুনের বিচারের দাবিতে আয়োজিত উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাবেক সভাপতি শান্তি প্রভা চাকমা। সমাবেশে উপস্থিত থেকে সংহতি প্রকাশ করেন নারী আত্মরক্ষা কমিটির আহব্বায়ক এন্টি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক ধর্মশিং চাকমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য নিকন চাকমা।
নিরূপা চাকমা অভিযোগ করে বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের আজ ২১ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু সরকার এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার কিংবা বিচার করেনি। উপরন্তু অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য তদন্ত ও শুনানীর নামে নানা টালবাহানা করে চলেছে। কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার না হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে মিটিং-মিছিল-সমাবেশের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। গত ৭ জুন খাগড়াছড়িতে কল্পনা চাকমা অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে এইচডব্লিউএফের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ-বিজিবি ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় প্রকাশ্যে নারীদের উপর শ্লীলতাহানি এবং কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতারের পর মিথ্যা মামলায় জেলে দেয়ার ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, বিজিবি-পুলিশের হামলা, শত বাধা-বিপত্তি, মামলা ও জেল-হাজতে প্রেরণ করে আমাদের দমানো যাবে না। সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী সমাজ ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর।
তিনি সরকার-সেনা-সেটলারদের জুম্ম ধ্বংসের হীন চক্রান্ত রুখে দিতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের নিপীড়িত জনগণকে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
কাজলী ত্রিপুরা অভিযোগ করে বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার অপহরণকারীদের চিহ্নিত করা হলেও সরকার তাদের গ্রেফতার করছে না। বরং লে. ফেরদৌসকে প্রমোশন দিয়ে মেজর পদে পদায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, কল্পনা অপহরণ মামলায় ৩৯ জন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। কিন্তু নানা অজুহাত দেখিয়ে তারা সঠিক, বস্তুনিষ্ট ও সুষ্ঠু তদন্ত রিপোর্ট তারা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কল্পনা চাকমার হসিদতো তারা দিতেই পারেননি, উপরন্তুঅপরাধীদের বাঁচানোই ছিল তাদের প্রতিবেদনের মূল লক্ষ্য। অথচ লে. ফেরদৌসসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হলে কল্পনা চাকমার হদিস পাওয়া যেতো।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস, পিসি সালেহ আহমেদ ও ভিডিপি সদস্য নুরুল হকের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তারা অবিলম্বে খাগড়াছড়ির স্বনির্ভরে শান্তপূর্ণ মিছিলে বিজিবি-পুলিশের হামলার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি এবং লংগদুতে পাহাড়ি বসতিতে অগ্নিসংযোগ, লূটপাটসহ ৭০ বছরের বৃদ্ধা গুনবালা চাকমা’র খুনীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের জোর দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস ও তার দোসরদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন ৫ নারী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।
——————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।