খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ৪ বছর আজ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি,সিএইচটিনিউজ.কম
আজ ২৩ ফেব্রুয়ারী খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ৪ বছর পূর্ণ হল। ২০১০ সালের এই দিনে সেটলার বাঙালিরা খাগড়াছড়ি শহরের মহাজন পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে ও সাতভেইয়া পাড়ায় হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও ব্যাপক লুটপাট চালায়।
সেদিন যেভাবে হামলার সূত্রপাত হয় : ১৯-২০ ফেব্রুয়ারী সাজেকে পাহাড়ি গ্রামে সেটলার হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও হত্যার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় ২৩ ফেব্রুয়ারী সড়ক অবরোধের ডাক দেয়। প্রথম দিকে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ পালিত হলেও দুপুরের দিকে খাগড়াছড়ি শহরের নারিকেল বাগান এলাকায় ইউপিডিএফের একটি মিছিলে পরিকল্পিতভাবে বাঙালিরা হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এরপরই হামলাকারী বাঙালিরা পাহাড়িদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা মহাজন পাড়া, কলেজ পাড়া, সাতভেইয়া পাড়া সহ কয়েকটি এলাকায় পাহাড়িদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও ব্যাপক লুটপাট চালায়। বাঙালিদের এ হামলায় মহাজন পাড়ায় অফিসহ ১৯টি, কলেজ পাড়ায় ৪টি, খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় ৩টি ও সাতভেইয়া পাড়ায় ৪১টি বাড়ি পুড়ে ছাই করে দেওয়া হয়। এছাড়া ৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও ভাংচুর এবং সাতভেইয়া পাড়ায় অপর ৪টি বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়।
হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের মতো। তারা হামলাকারীদের বাধা দেয়ার কোন চেষ্টা করেনি। অনেক ক্ষেত্রে হামলাকারীদেরই পুলিশ সহযোগিতা দেয়। দমকল বাহিনী আগুন নেভানোর জন্য ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে হামলাকারীরা তাতেও বাধা দেয়। ঘটনা কাভার করার জন্য দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের মধ্যে কয়েকজনকে আটকে রেখে মারধর করা হয়।
অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের রাজত্ব শেষ হওয়ার পরই কেবল প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। রাতে জারি করে কারফিউ। পরদিন সকালে খবংপুজ্জেসহ বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী পাহাড়িদের বাড়িঘরে তল্লাশি ও গ্রেফতার অভিযান চালায়। ডাক্তার, শিক্ষক, নারী-শিশু সহ প্রায় ৬০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে যৌথ বাহিনী আটক করে নিয়ে যায়। অনেককে মারধর করে। অপরদিকে হামলাকারীদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে আটক করলেও মুল পরিকল্পনাকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এ হামলার ঘটনা আজ ৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও হামলার মুল নায়ক ও পরিকল্পনকারীদের বিরুদ্ধে এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
হামলাকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বার বার একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর ৩ আগস্ট মাটিরাঙ্গার তাইন্দংয়ে পাহাড়ি গ্রামে হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। কাজেই, এ ধরনের হামলা বন্ধে প্রশাসনকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন পার্বত্য চট্টগ্রামের সচেতন মহল।