খাগড়াছড়িতে পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সম্মেলনে বক্তারা: ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসন’ ছাড়া আমাদের আর কোন বিকল্প নেই

0

সিএইচটিনিউজ.কম
PCP 21th central council1, 15.07.14খাগড়াছড়ি: বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর দু’দিন ব্যাপী (১৫-১৬ জুলাই ২০১৪) ২১তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সভায় বক্তারা বলেছেন “সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ এদেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহর উপর উগ্রবাঙ্গালী জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। ছলে-বলে, কৌশলে আমাদের ভূমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রম কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাই পূর্ণস্বায়ত্বশাসন ছাড়া আমদের আর কোন বিকল্প নেই।”

“বাঙালি জাতীয়তা আরোপ, বংশ পরম্পরার বাস্তুভিটা বেদখল, মা-বোনের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি বরদাস্ত করব না; আসুন, ’৮৯ এর গণজাগরণের চেতনায় পুনরুজ্জীবিত হই”, “ছাত্র সমাজকে বিভক্ত করে দমন-পীড়ন জারি রাখার সরকারি নীল নক্সা ভেস্তে দিই; পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে বিজয় সুনিশ্চিত করতে প্রত্যেকে হই যোগ্য সৈনিক” এই আহ্বানে  আজ ১৫ জুলাই মঙ্গলবার সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙখিয়াস্থ সাংস্কৃতিক ইউস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে দু’দিন ব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী সভায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বিলাস চাকমার পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাদ্রী চাকমা। এছাড়া ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা সমন্বয়ক প্রদীপন খীসাও এতে উপস্থিত ছিলেন। পিসিপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিনয়ন চাকমা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

সভা শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য অংকন চাকমা। শোক প্রস্তাব পাঠের পর শহীদদের সম্মানে ২ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান-রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি ও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শাখা কমিটি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দুই শতাধিক প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশগ্রহণ করেন।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে পর পিসিপি’র রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানে যেসব শহীদদের প্রতি বিশেষ সম্মান শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ তাদের পরিবারবর্গের প্রতিনিধিদের নিকট শহীদ সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেয়া সম্ভব হয়নি তাদের ক্রেস্ট প্রদান এবং কারামুক্তদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। শহীদ সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহন করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি শহীদ রূপক চাকমার পিতা বিমলেন্দু চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি শহীদ সমীরণ চাকমার বড়ভাই কালাধন চাকমা, মহালছড়ি ছাত্র নেতা শহীদ নীতিষ চাকমার পিতা সুভাষ চাকমা, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ সাইদিঅং মারমা পিতা কংক্য মারমা ও মাতা আক্রাশে মারমা, কাউখালীর  সাবেক ছাত্র নেতা শহীদ প্রীতি বিকাশ চাকমার ছোট ভাই নিক্সন চাকমা এবং শহীদ রতœ সেন চাকমার ছোট বোন স্বপ্না চাকমা।

উদ্বোধনী সভায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা বলেন, সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এদেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহর উপর উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। PCP 21th central council2, 15.07.14ছলে-বলে, কৌশলে আমাদের ভূমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রম কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাই পূর্ণস্বায়ত্বশাসন ছাড়া আামদের আর কোন বিকল্প নেই। তিনি নিপীড়িত-নির্যাতিত জনগণের প্রকৃত বেঁচে থাকার প্রকৃত অধিকার পূর্ণস্বায়ত্বশাসন আদায়ের লক্ষ্যে লড়াই-সংগ্রাম বেগবান করার জন্য সম্মেলনে সমবেত পিসিপি নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অংগ্য মারমা বলেন, এমন এক পরিস্থিতিতে পিসিপি’র এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন পার্বত্য চট্টগ্রামে ভুমি বেদখল, নারী ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা মাত্রা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সম্মেলনে শহীদ সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়ার মাধ্যমে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি পিসিপি’র নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে  ’৮৯ এর চেতনায় আপোষহীন সংগ্রামী ধারায় এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নব্বইয়ের দশকে যেভাবে ছাত্র-গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল সেভাবেই আগামী দিনেও পার্বত্য চট্টগ্রামের সবত্র ছাত্র-গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়ন-নির্যাতন, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে গর্জে উঠতে হবে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাদ্রী চাকমা বলেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ আগামী দিনের লড়াই-সংগ্রামে আরো বলিষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবে। যে কোন আন্যায় নির্যাতনের বিরুদ্ধে পিসিপি আগের চেয়ে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমা বলেন, সরকার সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়নের নামে হাজার হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছে। এই প্রস্তাবনার অংশ হিসাবে বান্দরবানে সেংগুম মৌজায় ৯৯৭ একর ও বিজিবি ব্যাটালিয়নের নামে পাইন্দু মৌজায় ২৫ একর ও রোয়াংছড়ির উচহ্লা ভান্তের রামজাদির পাশে ১৯ একর এবং দিঘীনালা বাবুছড়া যতœ মোহন কার্বারী পাড়ায় ২১ পরিবার উচ্ছেদ করে ২৫ একরের অধিক  জায়গা অধিগ্রহনের পাঁয়তারা করে চলেছে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এই সব সরকারী সেনা-প্রশাসনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনকে সাথে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করেছে এবং আগামীতে এসব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।

তিনি সন্তু লারমাকে সমালোচনা করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এত নিপীড়ন-নির্যাতন জারি থাকার পরও সন্তু লারমা ও তার দল এবং তাদের তথাকথিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নামধারী সংগঠনগুলোর কোন প্রতিবাদ দেখা যায় না। কিন্তু গত ১৪ জুলাই সন্তু লারমা ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে যে ১৭ দফা দাবি তুলে ধরেন সেখানে ইউপিডিএফের কার্যক্রম নির্মুল করার দাবিও রয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত নির্যাতিত জনগণের পক্ষে নয়, তিনি এখন সরকারের সেবাদাসে পরিণত হয়েছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থতিতে জনগণের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্র সমাজেক নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সকল অন্যায়-অত্যাচার রুখে দিতে হবে। তিনি শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনসহ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে অন্দোলন সংগ্রাম বেগবান করার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে আগামীকাল ১৬ জুলাই দু’দিন ব্যাপী এ সম্মেলনে শেষ হবে বলে পিসিপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিনয়ন চাকমা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
———

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More