খাগড়াছড়িতে লোগাঙ গণহত্যার ১৯তম বার্ষিকী পালিত : পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি

0

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে খাগড়াছড়ি ও পানছড়িতে লোগাঙ গণহত্যার ১৯তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে।

খাগড়াছড়ি : সকাল ১১:৩০টার সময় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মহাজন পাড়া থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে স্বনির্ভর বাজারে গিয়ে ইউপিডিএফ-এর কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি আপ্রুসি মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুবীর চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রীনা দেওয়ান। পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অংকন চাকমা।

বক্তারা বলেন, লোগাঙ গণহত্যার ১৯ বছর অতিক্রান্ত হলেও গণহত্যার সাথে জড়িতদের আজ পর্যন্ত কোন বিচার করা হযনি৷ বরং যে স্থানে গণহত্যা সংঘটিত করা হয়েছে সেখানে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সেটলারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, সরকার তথা শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের খেলায় মত্ত রয়েছে৷ পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে বাঙালি বসতি সমপ্রসারণের লক্ষে সরকার কাজ করে চলেছে। যার করণে প্রতিনিয়ত পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করা হচ্ছে, পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে সর্বশান্ত করা হচ্ছে৷ অন্যদিকে মিছিল-মিটিঙ ও সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখে গণতান্ত্রিক অধিকারকে রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে৷ বক্তারা সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের প্রকৃত পরিচয় মুছে দিয়ে উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ইত্যাদি নামে চিত্রায়িত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বক্তারা অবিলম্বে লোগাঙ গণহত্যা সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশ, সংবিধানে সকল জাতি ও জাতিসত্তার স্বীকৃতি, পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা, সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার পূর্বক সেনা শাসন অবসানের জোর দাবি জানান।

পানছড়ি : পানছড়িতে সকাল ১০টায় লোগাঙ-এর আমতলি মাঠে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি থানা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিমল চাকমা। অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ সভাপতি চন্দ্রদেব চাকমা, সহ সাধারণ সম্পাদক সমীরণ চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি থানা শাখার আহ্বায়ক নিকোলাস চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ সভাপতি চন্দনী চাকমা ও রাঙামাটি জেলা শাখার আহ্বায়ক যুথিকা চাকমা এবং মাচ্যছড়া গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বী কমল চন্দ্র চাকমা।

সমাবেশ শুরুর আগে লোগাঙ গণহত্যার শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

বক্তারা অবিলম্বে লোগাং গণহত্যার সাথে জড়িত দোষীদের বিচার সহ পাবত্য চট্টগ্রাম থেকে সেটলার বাঙালিদের সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসন ও সেনাবাহিনী প্রত্যাহার পূর্বক সেনাশাসনের অবসানের দাবি জানান।

এছাড়াও লোগাঙ গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খাগড়াছড়িতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। খাগড়াছড়ি জেলা সদরের নারাঙহিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি আপ্রুসি মারমা, সংস্কৃতি নয়া সেতুর নেতা মুকুল মল্লিক ও বিপ্লবী ছাত্র সংঘের নেতা আশীষ শর্মা।

উল্লেখ্য যে, ১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার লোগাঙে সেনাবাহিনী ও সেটলার বাঙালিদের বর্বরোচিত হামলায় বহু পাহাড়ি নিহত ও কয়েকশ ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More