খাগড়াছড়িতে শহীদ রূপক চাকমার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
খাগড়াছড়ি : বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে গতকাল বৃহষ্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭) খাগড়াছড়ি জেলা সদর নারাঙহিয়াস্থ রেড স্কোয়ারে শহীদ রূপক চাকমার স্মৃতিভাস্কর্য’র পাদদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় সকালে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বিকালে স্মরণসভা এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে পিসিপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ইউপিডিএফ-এর অন্যতম সংগঠক শহীদ রূপক চাকমা’র ১৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
গতকাল সকাল ৭টায় স্মৃতিভাষ্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক মাইকেল চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটি অর্থ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরা ও খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য ঝিনুক চাকমা। শহীদ পরিবারে পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শোকাঞ্জলি জানান তার পিতা বিমলেন্দু চাকমা। এছাড়াও পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রূপক চাকমা স্মৃতি ট্রাস্টের বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী বৃন্দ।
পরে বিকাল সাড়ে ৫টায় একই স্থানে স্মরণ সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণ সভায় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা’র সভাপতিত্বে ও খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক জেসিম চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর সংগঠক মিঠুন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী রেশমি মারমা প্রমূখ।
স্মরণ সভা শেষে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন শহীদ রূপক চাকমা’র পিতা শ্রদ্ধেয় বিমলেন্দু চাকমা।
স্মরণ সভায় বক্তারা বলেন, শহীদের কোন মৃত্যু নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শত শহীদের মাঝে রূপক চাকমা শুধু একটি নাম নয়, তিনি একটি চেতনা ও আদর্শের নাম। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজের লড়াকু সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’র একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করেছিলেন। উত্তরসূরী সহযোদ্ধাদের কাছে তিনি শিক্ষনীয়-অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। লেখাপড়ার পাঠ শেষ করে নিজের ব্যক্তিগত উন্নতি-আত্মপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে তিনি মশগুল থাকেন নি। জাতি-জনগণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার বন্ধুর লড়াই সংগ্রামকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন।
তারা বলেন, জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর মধ্যে চলমান ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের মাঝে হারিয়ে যাওয়া শতজনের মাঝে তিনিও একজন; কিন্তু তিনি নিজের গুণাবলী দ্বারা অনুসরণীয় শহীদ। তাঁর আত্মত্যাগ আমরা ভূলব না।
ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা স্মরণ সভায় বলেন, “রূপক চাকমা শুধুমাত্র একটি নাম নয়, তিনি আমাদের আদর্শ ও চেতনা। আমাদের শুধু শহীদদের স্মরণ করলেই হবে না, কাজের মধ্যে দিয়ে শহীদদের মুক্তির আকাঙ্খা ও আদর্শকে বাস্তব রূপ দিতে হবে।
তিনি বলেন, সংঘাতময় পরিস্থিতি শত প্রতিকূলতার মধ্যে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতে গিয়ে রূপক চাকমা শহীদ হন। হুয়াঙ-বোই-ও-বা লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁরও অবদান ছিল। শিক্ষা ও চেতনার বিকাশের আন্দোলনে নেতৃত্ব সারির মধ্যে তিনি অন্যতম একজন নেতা ছিলেন। পিসিপির সাথে জড়িত হয়ে তিনি ছাত্রদের সংগঠিত করতে অবদান রেখেছিলেন। শহীদ রূপক চাকমাকে নিয়ে আমি গর্বিত।”
তাঁর আত্মবলিদান থেকে শিক্ষা নিয়ে সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিপীড়িত জুম্ম জনতার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তীর ধনুক মার্কায় ইউপিডিএফ-এর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণাকালে পানছড়ি উপজেলার মধুমঙ্গল পাড়ায় সন্তু লারমার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন। তাঁর সাথে সহকর্মী মোহন চাকমা ও সুজিত চাকমা গুরুতরভাবে আহত হন। তিনি ২০০০ সালের ২১-২২ মে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে পিসিপি’র সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের একমাত্র লড়াকু সংগঠন ইউপিডিএফ-এ যোগদান করে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।