খাগড়াছড়িতে ৭ সংগঠনের যৌথ সম্মেলন অনুষ্ঠিত : আন্দোলন জোরদার করতে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
“পূর্ণস্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র সমাধান, অধিকারহারা নিপীড়িত জনগণের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে সংগঠন” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে খাগড়াছড়িতে ৭ সংগঠনের যৌথ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরস্থ ঠিকাদার সমিতি ভবনের হলরুমে আজ ২৮ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সহ সভাপতি শান্তিদেব চাকমা। অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি নিরূপা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ক্যহাচিং মারমা, ঘিলাছড়ি নারী সমাজের আহ্বায়ক সুমিতা চাকমা, সাজেক নারী সমাজের আহ্বায়ক নিরূপা চাকমা, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক জ্ঞানেন্দু চাকমা, প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ডের পক্ষ থেকে আনন্দময় চাকমা ও স্নেহ ত্রিপুরা। সম্মেলন পরিচালনা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কণিকা দেওয়ান।
যৌথ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলো হলো গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, সাজেক নারী সমাজ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, ঘিলাছড়ি নারী সমাজ ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ড। সম্মেলনে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলা থেকে উক্ত সংগঠনগুলোর শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলন থেকে ইউএনডিপি‘র অর্থায়নে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আগামী ৫-১০ ডিসেম্বর ঢাকায় আয়োজিত ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১১‘ আয়োজনে নিন্দা জানিয়ে অনতিবিলম্বে তা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
যৌথ সম্মেলন থেকে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলপূর্বক সংখ্যালঘু জাতি সমূহের স্ব স্ব জাতির স্বীকৃতি প্রদান, খাগড়াছড়ির সেমুতাঙ গ্যাস স্থানীয় চাহিদা না মিটিয়ে বাইরে পাচারের উদ্যোগ-আয়োজন বন্ধ করা, নিরপরাধ সাধারণ মানুষ নিধনযজ্ঞে লিপ্ত সন্তু লারমা গ্রুপের প্রতি সরকার-সেনা মদদদান বন্ধ করা, লক্ষ্মীছড়ি এলাকায় উপদ্রব সৃষ্টিকারী বোরকা পার্টির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ এবং দুর্বৃত্তদের সাথে যোগসাজশকারী দুর্নীতিগ্রস্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ, বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের প্রশ্রয়ে চলমান যাত্রা-জুয়া-হাউজি-ডাব্বুয়্যা ইত্যাদি সামাজিক অবক্ষয়মূলক কার্যকলাপ বন্ধ করা, রাঙামাটিতে ডিসি বাংলো হতে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সড়কটি এইচটি ইমামের নামে করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা, নারী নির্যাতনে অভিযুক্ত সেনা ও সেটলারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টিতে সেনা উস্কানি ও সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখল বন্ধ করতে সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে গণতান্ত্রিক সভা-সমাবেশের ওপর আরোপিত বিধি নিষেধ তুলে নেয়ার দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত সমাধানের লক্ষ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশানের বিকল্প কোন সমাধান হতে পারে না।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহের পরিচয় মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে। এ ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের অংশ হিসেবে ঢাকায় তথাকথিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতি উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য বক্তারা সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণেরই পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সরকার পার্বত্যবাসীকে বঞ্চিত রেখে সেমুতাঙ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত গ্যাস বাইরে পাচারের উদ্যোগ নিয়েছে। বক্তারা সেমুতাঙের গ্যাস পার্বত্যবাসীর চাহিদা পূরণ না করে বাইরে পাচার করা হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের প্রকৃত মুক্তির আন্দোলন জোরদার করতে অবিলম্বে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করার জন্য সন্তু লারমার প্রতি আহ্বান জানান।
সম্মেলন থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমাকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ৭ সংগঠন সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়।
এছাড়া সম্মেলনেপার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন সহ বিভিন্ন ঘটনাবলীর স্থির চিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।