ঢাকায় ইউপিডিএফের সংবাদ সম্মেলন : ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা

0

dsc011903

ঢাকা : পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার রাজনেতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) আজ রবিবার (২০ নভেম্বর) সকালে ঢাকায় রিপোর্টার্স ইউনিটি হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বর্জন, বগাছড়িতে ধ্বংসযজ্ঞ হামলাকারী পাকিস্তানপন্থী সেনা-আমলা-সেটলার সর্দারদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিশেষ ব্যাজ পরিধান কর্মসূচিসহ ধারাবাহিক কিছু কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া সংবাদ সম্মেলন থেকে ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমাসহ আটক সকল নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, দমনমূলক ১১ নির্দেশনা প্রত্যাহার ও ‘অপারেশন উত্তরণ’ তুলে নেয়াসহ ৫ দফা দাবি জানানো হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ভাষা-ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জাতিসত্তা-সম্প্রদায়ের ওপর অব্যাহত ধরপাকড়, আক্রমণ বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ-উপসনালয় ধ্বংস-ভূমি বেদখল এবং দমন-পীড়নের প্রতিবাদে ইউপিডিএফ উক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যুনতম নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে বলা হয়েছে- আমরা উচিত কথাও বলতে পারছি না। সরকার আমাদেরকে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে কিনা সেটাই আমাদের প্রশ্ন জাগে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, দেশে ‘পঞ্চদশ সংশোধনী আইন’ করার ফলে আমাদের জাতিসত্তার স্বীকৃতি কেড়ে নেয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘অপারেশন উত্তরণ’ জারি রয়েছে, ফলে সেনাবাহিনীর খবরদারি রয়েছে আগের মতোই।এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক দমনমূলক বিতর্কিত ‘১১দফা নির্দেশনা’ জারি কার্যত পার্বত্য চট্টগ্রামে ফৌজী শাসনকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। আমরা এখন রাস্তায় নামতেও পারি না। অন্যায়ভাবে সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে দিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ইউপিডিএফ তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের তথ্য প্রদান করা হয়। এতে বলা হয় গত ১৩ নভেম্বর খাগড়াছড়ি পৌর এলাকার সন্নিকটে পেরাছড়া হাইস্কুলের পাশের একটি খোলা জায়গা থেকে ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য ও খাগড়াছড়ি ইউনিট-এরপ্রধান সংগঠক উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমাসহ ৬ জনইউপিডিএফ নেতা-কর্মীকে ওয়ারেন্ট ছাড়া আটক করে সেনাবাহিনী। আটক অবস্থায় সেনা সদস্যরা তাদের সাথে অশোভন ব্যবহার করে, অকথ্য শারীরিক নির্যাতন চালায়, হাতে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে পুলিশের নিকট সোপর্দ করার আগে অত্যন্ত অসম্মানজনকভাবে ছবি উঠায়। লোকসমাজে তাদের হেয়প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে সে ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়, পত্রিকায় ছাপানোর বন্দোবস্ত করে।

গত ২৩ অক্টোবর পিসিপি সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমাকে গ্রেফতার অসুস্থ মা’কে চিকিৎসার্থে চট্টগ্রাম নেবার পথে পানছড়ি থানার সামনে বিপুল চাকমা’কে আটক করা হয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় নিজ চক্ষে পুত্রের সাথে অশোভন ব্যবহার ও গ্রেফতারের মানসিক ধকল সইতে না পেরে পরের দিন ২৪ অক্টোবর বিপুলের মা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন। ঘটনাটি এতটাই হৃদয় বিদারক যে, দাহক্রিয়ার দিন নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কয়েক জন চোখের জ¦ল ধরে রাখতে পারেন নি। পিসিপি নেতা বিপুলের প্রতি এ অবিচার সমাজে নাড়া দেয়। সামাজিক মিডিয়ায় ব্যাপক নিন্দার ঝড় ওঠে। দেশের গণতান্ত্রিক বিবেক এ সময় সরব হয়, প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখে।

২ নভেম্বর বিনয়ন ও অনিল চাকমাকে প্রেস কনফারেন্স থেকে আটক ও ফেইস বুকে ষড়যন্ত্র পিসিপি নেতা বিপুল চাকমা’র মুক্তির দাবিতে খাগড়াছড়ি ইউপিডিএফ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন-করা অবস্থায় সেনা সদস্যরা পিসিপি’র সহ:সভাপতি বিনয়ন চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক অনিল চাকমা’কে গ্রেফতার করে। ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে নির্যাতন চালায়।

এছাড়া গত ১১ জুলাই খাগড়াছড়িতে নিজ বাসা থেকে ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমাকে, গত ২৭ আগস্ট গুইমারা থেকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সদস্য ও ইউপিডিএফ সংগঠক ক্যহ্লাচিং মারমা, গত ২৯ সেপ্টেম্বর পানছড়ি থেকে ৯জন কলেজ ছাত্র মিথ্যা মামলায় আটক করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী ও প্রশাসন কর্তৃক গণতান্ত্রিক সভা-সমাবেশের ওপর বাধা প্রদানের তথ্য তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এতদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে দমন-পীড়ন চলছে, যৌক্তিক নিয়মে তা পার্বত্য চট্টগ্রাম গণ্ডি পেরিয়ে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর-হবিগঞ্জের মাধবপুর-মনতলা; সুনামগঞ্জের ছাতক বাজার; মৌলভীবাজারের কমলপুর, রাজশাহীদিনাজপুর গাইবান্ধায় সম্প্রসারিত হয়েছে। এর বাইরেও রামু-কক্সবাজারসহ আরো বহু ঘটনা ঘটেছে, এগুলো সাম্প্রতিক বলে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ৫ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে-
১। অবিলম্বে উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমাসহ আটক ইউপিডিএফ নেতা-কর্মী-সমর্থক ও নিরপরাধ সাধারণ লোকদের নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে সকল ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ধরপাকড় বন্ধ করতে হবে। আটকের সময় নেয়া পার্টি মেসের টাকা-মালামাল ফেরত প্রদান করতে হবে।
২। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দমনমূলক ‘১১দফা নির্দেশনা’ প্রত্যাহার ও ‘অপারেশন উত্তরণ’ তুলে নিতে হবে।
৩। রাঙ্গামাটি এসপি কর্তৃক পেশকৃত কল্পনা অপহরণ তদন্ত রিপোট বাতিল ঘোষণাপূর্বক তদন্ত কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু করতে হবে এবং চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌসসহ তার দোসরদের গ্রেফতার করতে হবে।
৪। গাইবান্দায় সান্তাল জাতিসত্তার ওপর হামলাকারীদের বিচার এবং সান্তালদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে।
৫। ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ বিভিন্ন স্থানে হিন্দু বসতিতে অগ্নিসংযোগ-লুটপাট, মন্দির ও মূর্তি ভাঙচুরের হোতাদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ইউপিডিএফ নেতা উজ্জ্বল স্মৃতিসহ অন্যায়ভাবে বন্দী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে মৌলিক নাগরিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি হিসেবে কাল ব্যাজ ধারণ; মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট, প্রতীকী অনশন, অফিস আদালত বর্জন, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বর্জন ও স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলন থেকে নির্ধারিত কিছু কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। এগুলো হচ্ছে- * ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিন সংহতি দিবসে আলোচনা, *১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে আলোচনা সভা ও র‌্যালি, *১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভা এবং *১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বর্জন : বগাছড়িতে ধ্বংসযজ্ঞ হামলাকারী পাকিস্তানপন্থী সেনা-আমলা-সেটলার সর্দারদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিশেষ ব্যাজ পরিধান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউপিডিএফ ঢাকা ইউনিটের সংগঠক মাইকেল চাকমা। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন,  ইউপিডিএফএর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রিপন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বিপুল চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি মন্টি চাকমা।
—————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More