পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসন দিবস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিসিপি’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

0

ঢাকা : পাকিস্তান কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসনের ৬৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), ঢাকা শাখার উদ্যোগে গতকাল ১৯ আগস্ট শুক্রবার বিকাল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক কার্জন হল মাঠে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপি ঢাকা শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা। সভায় মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় সদস্য নতুন কুমার চাকমা। এছাড়াও আলোচনা করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক বরুণ চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী নিরূপা চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিনয়ন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা। সভা পরিচালনা করেন পিসিপি ঢাকা শাখার সাধারন সম্পাদক রিয়েল ত্রিপুরা।

সভায় ইউপিডিএফ নেতা নতুন কুমার চাকমা তাঁর বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসন দিবসের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, ‘১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন’ (১৮ জুলাই ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গৃহীত) মোতাবেক দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহ নিয়ে পাকিস্তান এবং  হিন্দু ও অমুসলিমদের নিয়ে ভারত রাষ্ট্র গঠিত হয়। সে সময়ে শতকরা ৯৮ ভাগের বেশি অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান রাষ্ট্রে যোগ দিতে চাই নি।DSC00030

দেশ ভাগের সময় তৎকালীন জনসমিতির সাধারণ সম্পাদক স্নেহ কুমার চাকমার নেতেৃত্বে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজধানী রাঙ্গামাটিতে ব্রিটেনের ইউনিয়ন জ্যাক-এর পরিবর্তে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। তৎকালীন ইংরেজ জেলা প্রশাসক কর্ণেল জি. এল. হাইড নিজেও উক্ত পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পতাকায় স্যালুট করেন। পরে কর্ণেল হাইড নিজের দপ্তরেও আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। অন্যদিকে বন্দরবান সদরে বোমাং রাজ পরিবারের উদ্যোগে উত্তোলিত হয় বার্মার পতাকা।

ভারত পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে বিভক্ত হওয়ার পর ১৭ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম অংশটি পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করে দিয়ে ম্যাপে প্রদর্শীত হলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পরবর্তীতে ২০ আগস্ট পাকিস্তানের বালুচ রেজিমেন্ট এক সশস্ত্র আগ্রাসন চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান থেকে নামিয়ে দেয় স্থানীয় অধিবাসীদের উত্তোলিত পতাকা। সূচনা হয় আগ্রাসী অপশক্তির দখলদারিত্বের নতুন ইতিহাস। এই দখলদারিত্বের মধ্যে দিয়ে ব্রিটিশদের পর পাকিস্তানি শাসকরা যে শোষণ-নির্যাতনের জোয়াল পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল তা আজ ৬৯ বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশ আমলেও জারি রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পতাকা উত্তোলন যে কোন সাধারণ নিছক একটি ঘটনা ছিল না তা ১৯ আগস্ট ডিসি বাংলোতে ডিসি কর্ণেল হাইড-এর উপস্থিতিতে চাকমা রাজাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকটিই তার প্রমাণ। উক্ত বৈঠক থেকে বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশনের প্রধান সিরিল র‌্যাডক্লিফ-এর পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভূক্তির সিদ্ধান্ত না মানার প্রস্তাব গৃহীত হয়। এসময় তিনি তৎকালীন জনসমিতির নেতৃত্ব পাকিস্তানের দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন নি বলেও মন্তব্য করেন।

ইউপিডিএফ নেতা ছাত্র ও যুব সমাজের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশ্বের বুকে সম্মান-মর্যাদার সহিত মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে অবশ্যই সকলকে সংগ্রামী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

আলোচনা সভায় ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন।
____________
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More