তাইন্দং-এ পাহাড়ি গ্রামে সেটলার হামলার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ

0
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম

তাইন্দং-এ সেটলার হামলার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ-এর বিক্ষোভ
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং-এ পাহাড়ি গ্রামে সেটলার হামলা, লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও খুনের প্রতিবাদে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট আজ ৪ আগস্ট রবিবার খাগড়াছড়ি সদর সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।বিকাল সাড়ে ৩টায় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নারাঙহিয়া, উপজেলা, চেঙ্গী স্কোয়ার হয়ে শাপলা চত্বরের দিকে যেতে চাইলে মহাজন পাড়ার সূর্যশিখা ক্লাবের সামনে পুলিশ বাধা দিলে সেখানেই রাস্তার উপর এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কণিকা দেওয়ান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য জিকো ত্রিপুরা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সিমন চাকমা। সমাবেশ পরিচালনা করেন ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক চরণসিং তঞ্চঙ্গ্যা।

বক্তারা তাইন্দং-এ পাহাড়ি গ্রামে সেটলারদের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সেটলাররা পরিকল্পিতভাবে অপহরণ নাটক সাজিয়ে পাহাড়ি গ্রামে হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযাগ,ভাংচুর, ব্যাপক লুটপাট ও খুনের ঘটনা সংঘটিত করেছে।বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, কয়েক ঘন্টা ধরে সেটলাররা এ বর্বরোচিত হামলা চালালেও প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে এবং বিজিবি সদস্যরা সেটলারদের বাধা প্রদান না করে তাদের সহযোগিতা দিয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, বছরের পর বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের উপর চরম অত্যাচার নির্যাতন চালানো হলেও পাহাড়িরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ১৯৯২ সালে লোগাং গণহত্যাসহ এ যাবত পাহাড়িদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলার কোন বিচার না হওয়ায় তাইন্দং এর মতো ঘটনা বার বার ঘটেই চলেছে। নেতৃবৃন্দ তাইন্দং এ হামলার সাথে জড়িত সেটলারদের গ্রেফতার পরে যথোপযুক্ত শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের ক্ষতিপূরণ, তাদের জানমালের নিরাপত্তার গ্যারান্টি প্রদান ও ভারতে আশ্রিতদের সম্মানের সাথে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

সমাবেশ থেকে বক্তারা তাইন্দং হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল সোমবার খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে, এ হামলার প্রতিবাদে মহালছড়িতে পাহাড়িরা সমাবেশ করতে গেলে প্রশাসন বাধা দেয় ও মহালছড়ি সদর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। এরপরও দুপুর দেড়টায় সিন্দুকছড়ি-রাঙামাটি সড়কের চৌমুহনীতে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক সর্বানন্দ চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ঊষাময় খীসা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মহালছড়ি কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি জুনি মারমা প্রমুখ। নিদর্শন খীসা সমাবেশ পরিচালনা করেন।

বক্তারা তাইন্দং-এ সেটলার হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, পাহাড়িদের জায়গা-জমি বেদখল করতে অত্যন্ত  সুপরিকল্পিতভাবে সেটলাররা এ হামলা চালিয়েছে।

বক্তারা অবিলম্বে পাহাড়িদের গ্রামে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তি, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তারা আগামীকাল ইউপিডিএফ’র ডাকা সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের সমর্থন জানিয়ে এ কর্মসূচি সফল করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

অপরদিকে, মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সোনারতন চাকমা প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারিকে মত প্রকাশ ও সমাবেশ করার স্বাধীনতা হরণ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি তাইন্দং এ পাহাড়িদের বসতিতে সেটলার বাঙালিদের হামলার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।

এছাড়া  এ হামলার প্রতিবাদে দিঘীনালায়ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ইউপিডিএফ অফিসের সামনে  থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে থানা বাজার উপজেলা কমপ্লেক্স, লারমা স্কোয়ার, বাস টার্মিনাল ঘুরে কলেজ গেইট সংলগ্ন চৌমুহনীতে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

                            <> দিঘীনালায় ইউপিডিএফ-এর বিক্ষোভ <>
ইউপিডিএফ দীঘিনালার সংগঠক কিশোর চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দিঘীনালা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক সুজন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ দীঘিনালা কলেজ শাখার সাধারন সম্পাদক রুপেশ চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দিঘীনালা উপজেলা শাখার সদস্য জীবন চাকমা। সমাবেশ পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ দীঘিনালা ডিগ্রী কলেজ শাখার সহ-সাধারন সম্পাদক খোকন ত্রিপুরা।

সমাবেশ বক্তারা অবিলম্বে হামালকারীদের গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং সীমান্ত পার হয়ে যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে তাদের সম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা করার দাবি জানান।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More