তাইন্দং হামলায় ক্ষতিগ্রস্তরা সংসদীয় কমিটির দেয়া ত্রাণ গ্রহণ করেনি

0
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়েনে পাহাড়ি গ্রামে সেটলার হামলার এক মাস পর এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় সংসদের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একটি প্রতিনিধি দল আজ ৪ সেপ্টেম্বর বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা মানববন্ধন করে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে মতবিনিময় করেন। এতে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে স্থানীয় ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক বকুল কান্তি চাকমা ও দেবব্রত চাকমা বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, ঘটনার ‘আজ এক মাস পার হয়ে গেলো কিন্তু সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পূনর্বাসন করার জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ত্রাণ যা দিচ্ছে তা অপ্রতুল।

তারা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা, যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানান।

প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার ঘরপোড়া ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি পরিবারকে ১ লাখ টাকা ও সকল ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য হাড়ি-পাতিল, কাপড়-চোপড় সহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী দিতে চাইলে পর্যাপ্ত না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা তা গ্রহণ করেনি। ফলে তারা ত্রাণ সামগ্রীগুলো ফেরত আনতে বাধ্য হন।

এ বিষয়ে তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ফণি ভূষণ চাকমা বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত হলো ৯০২ পরিবার। কিন্তু ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে ২০০ পরিবারকে, তা কোনো ভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।’

প্রতিনিধি দলের মধ্যে আরো ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রমুখ। এ সময় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মাসুদ করিম, পুলিশ সুপার শেখ মিজানুর রহমান সহ ইউএনডিপি’র একটি প্রতিনিধি দলও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ক্ষতিগ্রস্তরা হামলার বিচার ও ক্ষতিপূরণ সহ পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে তারা ৯দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিজস্ব গ্রাম প্রতিরক্ষা দল বা ভিডিপি গঠনের অনুমতি প্রদান করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীতে আনুপাতিক হারে পাহাড়িদের নিয়োগ দান, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ও স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে নিয়ে আসা সেটলার বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে জীবিকার নিশ্চয়তাসহ সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করা, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ৩ আগস্ট হামলার পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা ও হামলায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিরাপত্তা বাহিনীর উষ্কানীমূলক অপতপরতা বন্ধ করে বিজিবির যামিনীপাড়া জোন কমান্ডারসহ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট বিজিবি জোন কমান্ডারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, হামলায় পুড়ে দেওয়া ঘরবাড়ি ন্যুনতম ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে পুনঃনির্মাণসহ প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ন্যুনতম নগদ ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও ৫ বছরের জন্য রেশনিং-এর ব্যবস্থা করা, চুরি-করা বুদ্ধমূর্তি উদ্ধার ও ভেঙ্গে দেওয়া বুদ্ধমূর্তি যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান পূর্বক প্রতিস্থাপনসহ পাকা বৌদ্ধ মন্দির ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ছাত্রছাত্রীরা যাতে নিরাপদে স্কুলে যাতায়াত করতে পারে তার জন্য একটি জীপের ব্যবস্থা এবং পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকায় প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগসহ একটি জুনিয়র হাই স্কুল নির্মাণ, তাইন্দং-তবলছড়ি, মাটিরাঙ্গাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়িদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান, বসতভিটা-ভূমি বেদখল বন্ধ এবং পাহাড়িদের উপর সেটলার বাঙালিদের হামলা সম্পূর্ণ বন্ধ করা এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা ও ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা বন্ধের লক্ষ্যে অনিল বরণ চাকমা কর্তৃক মাটিরাঙ্গা থানায় দায়েরকৃত মামলাটি চট্টগ্রামে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা।

উল্লেখ্য, গত ৩ আগস্ট কামাল হোসেন নামে এক মোটর সাইকেল চালককে অপহরণের গুজব ছড়িয়ে সেটলাররা তাইন্দং ইউনিয়নে পাহাড়িদের বেশ কয়েকটি গ্রামে হামলা চালায়। এতে পাহাড়িদের ৩৪টি বাড়ি, একটি বৌদ্ধ বিহারের দেশনা ঘর ও একটি দোকান পুড়ে যায়। এছাড়া তিন শতাধিক বাড়িঘরে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। কয়েক হাজার লোক এলাকা ও ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

এ হামলার এক মাস অতিক্রান্ত হলেও যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনবাসনের ব্যবস্থা না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা এখনো খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More