তিন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য চেয়ে খাগড়াছড়ি ব্রিগেড অফিসের চিঠি
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি॥ শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ইউপিডিএফ-সহ তিন জুম্ম রাজনৈতিক দলের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি ব্রিগেড অফিস থেকে গতকাল জেলার সকল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি করে ফরম পাঠানো হয়েছে।
‘শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং জনসংখ্যা সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্যাদি’ শিরোনামে উক্ত ফরমের একটি কপি এই প্রতিবেদকের হস্তগত হয়েছে। এতে বিদ্যালয়ের নাম, ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা (পাহাড়ি-বাঙালি অনুপাতসহ), শিক্ষকের সংখ্যা (পাহাড়ি-বাঙালি অনুপাতসহ), ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ধর্মযাজকের সংখ্যা, এলাকার জনগণের মধ্যে ইউপিডিএফ, জেএসএস(মূল) ও জেএসএস(সংস্কার) -এর সমর্থিত সংখ্যার শতকরা হার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে।
উক্ত ফরম পাওয়ার পর স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মন্তব্যে সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষক, সরকারের চাকুরী করি, ছেলেমেয়েদের ক্লাশ নিই। আমাদের কাজ গোয়েন্দাবৃত্তি নয়। তাই জনগণের মধ্যে কত পার্সেন্ট ইউপিডিএফ, আর কত পার্সেন্ট জেএসএস সন্তু গ্রুপ বা সংস্কার গ্রুপ তা আমরা জানবো কী করে?’
তিনি আরো বলেন, ‘আর্মিরা যে সকল তথ্য জানতে চেয়েছে তার বেশীর ভাগ অংশ সরকারের তথ্য অধিদপ্তর, পরিসংখ্যান বিভাগ ও শিক্ষা বিভাগ থেকে জানা যাবে। আর যেগুলো রাজনৈতিক দল সংক্রান্ত সেগুলো জানার জন্য তাদের গোয়েন্দা বিভাগই যথেষ্ট। এ সব তথ্য পাওয়ার জন্য তাদের বেতনধারী গোয়েন্দা রয়েছে।’
তিনি প্রশ্ন করেন তাদের নিজস্ব প্রশিক্ষিত গোয়েন্দার মাধ্যমে এ সব কাজ না করে আমাদের মাধ্যমে কেন? আমরা এসব কাজের জন্য উপযুক্ত নই। এ কাজের জন্য আমাদের কোন ট্রেনিং নেই।
কলেজিয়েট স্কুলের অন্য একজন শিক্ষক বলেন, আমরা আর্মিদের চাকুরী করি না, সরকারের চাকুরী করি। সরকারের অনুমতি ছাড়া আমরা এসব কাজ করতে পারবো না।
জেলা শিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, সেনা প্রশাসন জেলা শিক্ষা বিভাগকে পাশ কাটিয়ে এটা করতে পারে না। শিক্ষকরা আর্মিদের এসব তথ্য দিতে বা তাদের কাজ করে দিতে বাধ্য নয়। কারণ শিক্ষকরা আর্মিদের হুকুমের গোলাম নয়।
তাছাড়া শিক্ষকদের অনেক কাজ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, তাদের কাজ ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো এবং এ জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য নিজেদেরও পড়াশোনা করতে হয়। সুতরাং এসব তথ্য সংগ্রহের জন্য, লোকজনের উপর গোয়েন্দাবৃত্তি করার সময় তাদের কোথায়?
আর্মিদের তিনি দেশের আইন কানুন ও ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ আখ্যায়িত করে বলেন, আর্মিদের কখন কী খেয়াল চেপে বসে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
ব্রিগেডের উক্ত ফরম সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলা হলে ইউপিডিএফ নেতা সচিব চাকমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সেনা শাসন রয়েছে, আর্মিরাই যে এখানে সর্বেসর্বা তা ওই ফরম থেকে স্পষ্ট। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষকরা কার নির্দেশে চলবে, তারা কি সিভিল প্রশাসনের কথা মত চলবে, নাকি আর্মিদের কথায় চলবে? দ্বিতীয়ত, শিক্ষকদের হুকুম করা বা নির্দেশ করার এক্তিয়ার কি আর্মিদের আছে? পার্বত্য চট্টগ্রামে আসলে কয়টি কর্তৃপক্ষ? কার কথায় এখানে প্রশাসন চলবে? এই প্রশাসনিক অরাজকতার শীঘ্রই অবসান দরকার। তবে আমার বিশ্বাস, পার্বত্য চট্টগ্রামে যতদিন সেনা শাসন থাকবে, ততদিন এই জটিলতা ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা চলতে থাকবে।’
নিচে পাঠকদের জ্ঞাতার্থে ফরমটির স্ক্যান কপি সংযুক্ত করা হলো।
———————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।