পটকা বাজি ফুটিয়ে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা হয় রামগড়ের তিনটি পাহাড়ি গ্রামে
রামগড় : গত ৩০ জুন শুক্রবার রাতে সেটলার বাঙালি কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে রামগড় উপজেলায় তিনটি পাহাড়ি গ্রামে সাম্প্রদায়িক আক্রমণের ঘটনা ঘটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই আক্রমণের কিছু সময় আগে রাত সোয়া দশটার দিকে রামগড় পৌরসভা ও সোনাই’আগা গ্রামের সীমানা বরাবর স্লুইশগেট এলাকায় ১৫/২০ জন সেটলার দুষ্কৃতকারী প্রথমে নিজেরা দু’টি পটকা বাজি ফুটায়। এরপর তারা নিজেরাই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয় এবং ‘শান্তিবাহিনী এসেছে, শান্তিবাহিনী হামলা করেছে বলে এলাকার সাধারণ সেটলারদের জড়ো করতে থাকে এবং উত্তেজিত করতে থাকে।
রামগড় সদর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মোঃ হোসাইন, সাবেক পৌর কমিশনার মোঃ জসীম, সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ নুরুন্নবী, মোঃ মিন্টু কোম্পানী এ সময় উত্তেজিত সেটলারদের নেতৃত্ব দেয় বলে জানা গেছে।
তাদের উস্কানীতে লামকু, কালাডেবা, চৌধুরী পাড়া থেকে শত শত সাধারণ সেটলার গ্রামবাসী একত্রিত হয়। এরপর তাদের মধ্যে গুজব ছড়ানো হয় যে, শান্তিবাহিনীরা ৪ জনকে গুলি করেছে, কয়েকজনকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এতে সাধারণ সেটলারদের উগ্রবাদী অংশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা নারায়ে তকবির আল্লাহু আকবর ও পাহাড়িদের ধর ধর বলে শ্লোগান দিতে দিতে লাঠিসোটা নিয়ে প্রথমে সোনাই আগা পাহাড়িদের গ্রামে প্রবেশ করে দোকানপাটে হামলা চালাতে থাকে। তারা হাম্প্র ত্রিপুরা নামে গ্রামের একজনকে মারপিট করে। এরপর পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে হামলাকারী সেটলাররা আবারো উত্তেজিত হয়ে তালতলী গ্রামের দিকে যায় এবং পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে আক্রমণ করে ও ভাংচুর চালায়। এ সময় তারা আবারো পটকা বাজি ফুটিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং ‘শান্তিবাহিনী ধর’ ‘শান্তিবাহিনী ধর’ বলে চিৎকার দিতে দিতে পার্শ্ববর্তী গ্রাম ব্রত চন্দ্র কার্বারী পাড়ায় ঢুকে পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে আক্রমণ করে। এ সময় সেখানে বিজিবি’র সদস্যরা উপস্থিত হলে তাদের উপস্থিতির মধ্যেই সেটলাররা চিৎকার দিয়ে জাম্বু ত্রিপুরাসহ কয়েকজনের বাড়িতে হামলা চালায়।
এ সময় সোনাই আগা, তালতলী ও ব্রত চন্দ্র কার্বারী পাড়ার পাহাড়ি সাধারণ জনগণের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। তারা তাদের বাড়িঘর থেকে পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। বেশ কয়েক পরিবারের লোকজন বাংলাদেশ সীমানা পার হয়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, সেটলারদের একটি অংশ এই ঘটনাটি গুজব ও সাজানো বুঝতে পেরে পরে নিজেদের বাড়িঘরে চলে যায়। তবে সেটলারদের উত্তেজিত উগ্র অংশটি উক্ত হামলা সংঘটিত করে। হামলার সময় সেখানে বিজিবি অবস্থান করলেও তারা উত্তেজিত সেটলারদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি।
আপাতত এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। পালিয়ে যাওয়া পাহাড়িরা অনেকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তবে ভারতে পালিয়ে যাওয়া কয়েকজন এখনো ফিরে আসেননি।
এদিকে, গতকাল শনিবার (১ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় সোনাইআগা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ব্রতচন্দ্র কার্বারী পাড়া, তালতলি ও সোনাইআগা গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং কালাডেবলা এলাকার সেটলার বাঙালিদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে রামগড় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ছেয়দ ফরহাদ, রামগড় থানার ওসি শরিফুল ইসলাম ৪৩ বিজিবি উপ অধিনায়ক মেজর হুমায়ন কবিরসহ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাদের, পৌর কাউন্সিলর আহসান উল্ল্যাহ, কাজী বসর, বিশ্ব ত্রিপুরা উপস্হিত ছিলেন।
তবে উক্ত সভায় পাহাড়ি গ্রামে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানা যায়নি।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।