পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এদিন : বান্দরবানে ১৪৪ ধারা লংঘন
১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ দক্ষিণ পার্বত্য চট্টগ্রাম অর্থাৎ বান্দরবান সদরে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সেনা-প্রশাসন ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জারিকৃত অবৈধ ১৪৪ ধারা লংঘন করে। গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রামের উত্তাল দিনগুলোতে নিজ অঞ্চলে অন্যায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার মাধ্যমে ‘আন্দোলনবিমুখ’ এ অপবাদ ঘুচিয়ে বান্দরবানের ছাত্র-যুবসমাজ এদিন নিজেদের দৃঢ়তা ও সংগ্রামী মনোবল প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়। দক্ষিণ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংগ্রামের দিনলিপিতে দিবসটি বিশেষভাবে স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ।
পিসিপি’র জেলা সম্মেলন বানচাল করে দিতে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী একই দিন একই সময়ে ও একই স্থানে সমাবেশ আহ্বান করে। গায়ে-পড়ে ঝগড়া বাধানোর অপরাধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে প্রশাসন পক্ষপাতমূলকভাবে চিহ্নিত উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীটির মনোবাঞ্চনা অনুসারে অন্যায় ১৪৪ ধারা জারি করে। শহরের কেন্দ্রস্থলে “পাহাড়ি ছাত্র পরিষদকে কবর দেয়া গেল”–শিরণামে বিশাল ব্যানার টাঙ্গিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীটি দক্ষিণ পার্বত্য চট্টগ্রামে পিসিপি’র কার্যক্রম নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা দেয়। সংগঠনের অস্তিত্ব ও আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার স্বার্থে ১৪৪ ধারা লংঘন ছাড়া পিসিপি’র সামনে কোন বিকল্প ছিল না। আগামীতেও সরকার-প্রশাসন যদি ছাত্র-যুবসমাজের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রমূলক কোন কিছু করে, তাহলে ছাত্র-যুবসমাজ অতীতের মত আবার গর্জে উঠবে, ষড়যন্ত্রকারী গণদুশমনদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে ইতস্তত করবে না।
উল্লেখ্য, পিসিপি’র ১৪৪ ধারা লংঘন, বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক সফল সমাবেশ ও লড়াইয়ে দৃঢ়তা শুধু সরকার-সেনাবাহিনী নয়, খোদ সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির আপোষকামী চক্রটিও তাকে হুমকি হিসেবে ধরে নেয়। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল ১৯৯৫ সালের ১৫ জুন, ঐদিন ধুধুকছড়ায় প্রকাশ্য জনসভায় ‘জঙ্গী আন্দোলন করে স্বায়ত্তশাসন আদায় হয় না’ বলে সন্তু লারমা পিসিপি’র বিষোদগার করেন। বান্দরবানে ১৪৪ ধারা লংঘনকেও সন্তু লারমা অযৌক্তিক বলে সমালোচনা করেছিলেন। পিসিপি’কে দ্বিধা বিভক্ত করতে মেতে ওঠেন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে। সংগঠন থেকে বিতাড়িত একশ্রেণীর ধান্দাবাজদের অর্থ-সুযোগ সুবিধা ও নানাভাবে মদদ দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পিসিপি’র ব্যানারে খাড়া করেন ভিন্ন একটি সংগঠন। যার পরিণামে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজে বিভেদ বিভ্রান্তি দেখা দেয়, যার ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ ঘটছে এখন। তবে, এর অবসান হবে একদিন না একদিন। অতীতের বীরত্ব ও সাফল্য গাঁথা থেকে প্রেরণা ও শক্তি নিয়ে প্রতিবাদী ছাত্র-যুবশক্তি আবার ঘুড়ে দাঁড়াবে, সমবেত হবে একই পতাকাতলে! নব্বইয়ের দশকের মত জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে অতন্দ্র প্রহরীর মত আন্দোলনকামী ছাত্র-যুবসমাজ আবার জেগে উঠবে!
——————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।