পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এদিন : সাজেকে সেটলার হামলা

0

সিএইচটিনিউজ.কম

২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল সেটলারদের অগ্নিসংযোগে পুড়ে যাওয়া একটি ঘর। ফাইল ছবি
২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল সেটলারদের অগ্নিসংযোগে পুড়ে যাওয়া একটি ঘর। ফাইল ছবি

সাজেকে সেটলার হামলা :
২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে ৪টি পাহাড়ি গ্রামে সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় বাঙালি সেটলাররা হামলা চালায়। হামলাকারীরা পাহাড়িদের ৪টি গ্রামে (পূর্ব পাড়া, গঙ্গারাম মুখ, রেতকাবা মুখ ও ডানে বাইবা ছড়া) হামলা ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এতে ৭৭টি বাড়ি, ১টি গীর্জা ও ১টি ইউনিসেফ স্কুল পড়ে ছাই হয়ে যায়।

সেদিন রাত পৌনে দশটার দিকে আনুমানিক ২০০ জন সেটলার সংঘবদ্ধ হয়ে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রথমে ডানে বাইবা ছড়া গ্রামে হামলা চালায়। এরপর একে একে পূর্ব পাড়া, রেতকাবা, ও গঙ্গারামে গিয়ে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।

হামলাকারী সেটলাররা বাড়িঘরে আগুন দেয়ার আগে ব্যাপক লুটপাট চালায়। বাড়ির আসবাবপত্র, হাড়ি-পাতিলসহ বহনযোগ্য যা কিছু পেয়েছে সবই লুট করে নিয়ে যায়।

সেটলারদের এ হামলায় পূর্ব পাড়ায় ২৮টি, গঙ্গারা মুখ গ্রামে ১১টি, রেতকাবা মুখ গ্রামে ৫টি ও ডানে বাইবা ছড়া গ্রামে ৩৩টি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

হামলা সম্পর্কে পূর্ব পাড়ার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভিকটিম বলেন, …”সেদিন সন্ধ্যা থেকেই বাঙালিরা কাচালং ব্রিজের পাড়ে অবস্থান নিতে থাকে। দীঘিনালা থেকে ৪টা চাঁন্দের গাড়িতে সেটলারদেরকে নিয়ে আসা হয়েছিল। রাত ৯টার দিকে বাঘাইহাট বাজারে দাঁড়িয়ে এলাকার পাহাড়িদের উদ্দেশ্যে মাইকে সিও (কমাণ্ডিং অফিসার) স্যার বলতে থাকেন, ‘তোমরা বাজারে আসো। ভয় পাওয়া কিছু নেই, আসে আলোচনায় বসি।’ এসব কথা যখন সিও বলছিলেন তখন তার জীপে করেই আনা লোকজন আমাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঘটনার দিন বিকেলেই এলাকার নারী শিশুদেরকে পাহাড়ের উপরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। যারা গ্রামে ছিলো তাদেরকে সিও ডেকে নিয়ে এক জায়গায় জড়ো করেন এবং অন্যপাশে ফাঁকা করে ফেলা বাড়িগুলোতে সেনা তদারকিতে আগুন ধরিয়ে দেয় বাঙালিরা। আগুন দেখে দৌঁড়ে গিয়ে দেখি একদিকে ঘরদোর লুটপাট হচ্ছে, আরেকদিকে যা অবশিষ্ট থাকছে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।”….(সাজেক পরিদর্শক দলের সরেজমিন প্রতিবেদন, পৃষ্ঠা-৭)।

এ হামলার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে ২০১০ সালে ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি সাজেকে দ্বিতীয় বার হামলা চালানো হয়। এতে ১২টি গ্রামের চার শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে সেনাবাহিনীর গুলিতে বুদ্ধপুদি চাকমা ও লক্ষ্মী বিজয় চাকমা নিহত হয়।

সাজেকে  হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়িদের ভোগ-দখলীয় জায়গা বেদখল করা। সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় তারা এ হামলা চালিয়েছিল।

এ হামলার আজ ৭ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু হামলা ও বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগের সাথে জড়িতদের কোন বিচার বা শাস্তি হয়নি। এই বিচারহীনতার কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বার বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
——————–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More