সদ্য কারামুক্ত নিরূপা চাকমার সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় বক্তারা

‘পার্বত্য চট্টগ্রামের শিশুরা ফিলিস্তিনিদের মত বৈরী পরিবেশে গড়ে উঠছে’

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম
WP_20160108_096ঢাকা: সদ্য কারামুক্ত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু হল রুমে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

সংবর্ধনা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মাইকেল চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন নারী সংহতির শ্যামলী শীল, বাংলাদেশ ছাত্র যুব আন্দোলনের সহ:আহ্বায়ক আতিক অনিক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি আহ্বায়ক ইভা মজুমদার ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সিমন চাকমা। সভা পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা।

সংবর্ধনা সভায় নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলী শীল কারামুক্ত নিরূপা চাকমাকে অভিনন্দন জানান। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের দমন-পীড়নের তীব্র সমালোচনা করেন। পাহাড়ি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে শ্যামলী শীল বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের শিশুরা ফিলিস্তিনি শিশুদের মতো ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে বেড়ে উঠছে। ’

সভায় নিরূপা চাকমা নিজের কারাভোগের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। সেনা-পুলিশের অন্যায় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানান। জেল-জুলুম মামলা-হুলিয়া দিয়ে দুনিয়ার কোথাও বিপ্লবীদের দমিয়ে রাখা যায় নি অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামেও এর ব্যতিক্রম হবে না। ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য সংগ্রামে সংহতি প্রকাশ করতে গিয়ে জেল খাটায় ভয়ে দমে যাওয়া দূরের কথা, কারাগারে রুদ্ধ হওয়ায় তিনি গর্ববোধ করছেন বলেও জানান। পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই সংগ্রাম এগিয়ে নিতে তিনি আরও বেশী দায়িত্বশীল হয়ে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট থাকবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আয়োজক কমিটি ও উপস্থিত প্রগতিশীল ছাত্র ও নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে নিরূপাকে সংবর্ধনা জানানো হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৯ নভেম্বর ২০১৫, আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিনি সংহতি দিবসে খাগড়াছড়ি সদরের চেঙ্গী স্কোয়ারে ৮গণসংগঠনের আয়োজিত সমাবেশে মিছিল সহকারে যাবার পথে খেজুড়বাগান উপজেলা রাস্তায় সেনা-পুলিশ হামলা চালায়। এ সময় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা ও খাগড়াছড়ি জেলা দপ্তর সম্পাদিকা দ্বিতীয়া চাকমাকে আটক করে নিয়ে যায় এবং সমাবেশে যোগদানের লক্ষ্যে জড়ো হতে থাকা ছাত্র-যুবকদের লাঠিপেটা করে তাড়িয়ে দেয়। খবংপুজ্জ্যায় ঢুকে সেনা জওয়ানরা হুমকিমূলক টহল দিয়ে লোকজনকে সন্ত্রস্ত করে রাখে। চেঙ্গী নদীর পারেও সেনা জওয়ানরা লোকজনদের ধাওয়া করে। একই দিন মধুপুরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালায়। এদিন সেনা-পুলিশের হামলায় নারী ও স্কুল ছাত্রসহ ১৪ জনের অধিক জখম হয়।

নিরূপা চাকমা ও দ্বিতীয়া চাকমাকে আটকের পর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাজিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে। দীর্ঘ ১৮দিন কারাবাসের পর গত ১৭ ডিসেম্বর নিরূপা চাকমা ও দ্বিতীয়া চাকমা খাগড়াছড়ি জেল থেকে জামিনে মুক্ত হন। সেদিনই রেডস্কোয়ারে তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন ডিওয়াইএফ-পিসিপি ও এইচডব্লিউএফ-এর পক্ষ থেকে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে সংবর্ধনা দেয়া হয়। নিরূপা ও দ্বিতীয়া মুক্তি লাভ করায় সংগঠনের নেতা-কর্মীগণ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন সাংগঠনিক টিমে বিভক্ত হয়ে তারা সাংগঠনিক সফরে নেমেছে।

এদিকে মুক্তি লাভের পর পরই নিরূপা চাকমা চা-শ্রমিকদের বংশপরাম্পরার জমি বেদখলের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করতে দলবলসহ সিলেটের চুনারুঘাটে পৌঁছেন এবং সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এইচডব্লিউএফ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে নিয়োজিত সংগঠনসমূহ নিপীড়িত অধিকারহারা মানুষের পক্ষে সব সময়ই সোচ্চার রয়েছে।
——————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More