পার্বত্য চট্টগ্রামের ৮ সংগঠনের প্রতিনিধি দলের উখিয়ায় চাকমা গ্রামে সফর

0

সিএইচটিনিউজ.কম
Ukiaপার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনরত ৮ গণসগঠনের কনভেনিং কমিটির একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ থানার সীমান্তর্তী চাকমা গ্রামে সাংগঠনিক সফর করেছে। সফরকালে প্রতিনিধি দলটি বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সেখানে বসবাসকারী চাকমাদের সাথে কথা বলেন।

সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু চাকমার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি ২৫ আগস্ট সন্ধ্যায় উখিয়ার হরিখোলা গ্রামে পৌঁছে। পরদিন বেলা ২টার দিকে প্রতিনিধি দলটি হরিখোলা এলাকার বিটের হেডম্যান ক্যমংছিং চাকমা (কমল)-কে সাথে নিয়ে এলাকার মুরুব্বী এবং ছাত্র-যুবকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এতে এলাকার শিক্ষা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের সাথে পারস্পরিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দ আলোচনা করেন। সভায় ৮ সংগঠনের প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ওই এলাকার বাসিন্দা আনন্দময় চাকমা, কাঞ্চনময় চাকমা,সুজিত চাকমা (মাঝি) এবং হরিখোলা বিটের হেডম্যান ক্যমংছিং চাকমা (কমল)।

প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও কনভেনিং কমিটির সদস্য সচিব অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও কনভেনিং কমিটির সদস্য মাদ্রী চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও কনভেনিং কমিটির সদস্য থুইক্যচিং মারমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্য কাজলী ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক এসিংমং মারমা ও সদস্য শুভ চাক।

স্থানীয় যুবক ও মুরুব্বীরা প্রতিনিধি দলের সামনে এলাকার পশ্চাদপদতার কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জনগণের আর্থিক সংস্থানের অভাব দেখা দিয়েছে। এই এলাকার পুর্বপুরুষেরা সচতন না হওয়ার কারণে তাদের নামীয় জমিগুলো বাঙ্গালীদের কাছে বিক্রি করায় বর্তমানে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যারা শিক্ষিত হচ্ছে তারা বাঙ্গালীদের মুখাপেক্ষি হওয়ার কারণে বিভিন্ন মামলা মোকর্দ্দমায় জড়িয়ে পড়ছে। এতে তাদের ভিতরে ভূল বুঝাবুঝি বাড়ছে এবং সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে তারা তুলে ধরেন। তারা নিয়মিত যোগাযোগের সুবিধার্থে সেখানকার যুব সমাজকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রয়োজন রয়েছে বলে তারা মতামত দেন।

ব্রিটিশ আমল থেকে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলে চাকমারা বসবাস করে আসছে। একসময় তারা জুমচাষী ছিলো। জুম চাষ করার কারণে ব্রিটিশ সরকার তাদেরকে বন রক্ষার জন্য ভিলেজার হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং  প্রতি পরিবারকে ৫ কানি করে আবাদী ভূমি প্রদান করে। পাহাড়িরা যেহেতু পরিবেশের সাথে মিশে থাকে তাই তারা বন রক্ষা করতে পারবে বলে ব্রিটিশরা তাদের জন্য এই ব্যবস্থা করেছিলো। এই এলাকায় শিক্ষার অনগ্রসরতার কারণে অনেকে বাঙালিদের কাছ থেকে ৫০০ টাকায় জমি বিক্রি করেছে। এছাড়া তাদের নিজস্ব জমি জমা যা ছিলো তাও বর্তমানে বাঙালিরা দখল করে নিয়েছে। কোর্ট কাছারিতে মামলা করে রায় পাওয়ার পরও তারা নিজেদের জমিজমা উদ্ধার করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাকমারা।

ওয়াকখ্যং এলাকায় ১২টি বিট রয়েছে। এসব বিটে ১,০২৫ পরিবারের ৭ হাজারের অধিক জনসংখ্যা রয়েছে। প্রতি বিটে একজন করে হেডম্যান রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মৌজা প্রধানের মতো তারা ভূমির উপর দায়িত্ব পালন না করলেও বিটের বিভিন্ন বিষয়ে বিট অফিসার ও সরকারের বন বিভাগের সাথে সমন্বয়ে কাজ করার এক্তিয়ার তাদের রয়েছে।

এই এলাকায় বার্মার অনুকরণে বৌদ্ধমন্দির বানানো হয়। এখানে পুর্ব থেকে মন্দিরের ভিক্ষুরা হলো রাখাইন এবং মারমা জাতি গোষ্ঠীর। তাই এলাকার লোকজনের কোন সন্তান সন্ততি জন্ম হলে ভিক্ষুদের মাধ্যমে নাম রাখার কারণে তাদের নামগুলো মারমা জাতি গোষ্ঠীর অনুকরণে রাখা হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, এর আগেও ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও তদন্তে বেশ কয়েকবার ওই এলাকায় সফর করা হয়েছে। ২০০৪ সালে তারাবন্যা এলাকায় চাকমা গ্রামে বাঙ্গালীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন থেকে অলকেশ চাকমা, সোনালী চাকমা, দীপংকর চাকমা ও চরণসিং তঞ্চঙ্গ্যা  ওই এলাকায় সফর করেন। ২০০৬ সালে দিকে ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় সদস্য শান্তিদেব চাকমা ও ছোটন চাকমা ২য় বারের মতো উক্ত এলাকায় সাংগঠনিক সফর করেন।
২০০৮ সালে ৪ জন চাকমা যুবককে আটকের পর পুলিশ ক্রসফায়ারে হত্যার জন্য অদূরে নিয়ে গিয়ে পায়ে গুলি করে আহত করে। পরে এ ঘটনার প্রতিবাদে তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করা হলে তারা ছাড়া পান।
২০১২ সালে ওয়াকখ্যং এলাকায় চাকমা গ্রামে ডাকাতি করতে এসে মারধর এবং সন্তান সম্ভবা এক চাকমা নারীকে পেটে লাথি মেরে সন্তান প্রসবের ঘটনা তদন্তে সেখানে যান মিঠুন চাকমা, রিনা দেওয়ান ও চরণসিং তঞ্চঙ্গ্যা। এ ঘটনার প্রতিবাদে তারা কক্সবাজার সদরে এলাকাবাসীকে নিয়ে একটি মানববন্ধন করে।
————–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More