পাহাড়ধসে নিহতদের স্মরণে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ’র শোকসভা

0

খাগড়াছড়ি : রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলা ও চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে নিহতদের স্মরণে আজ শনিবার (১৭ জুন) বিকালে খাগড়াছড়িতে শোকসভা আয়োজন করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।

khagrachari,17.06.17

ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিট-এর উদ্যোগে স্বনির্ভরস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত শোকসভায় বক্তাগণ পাহাড়ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টিতে সরকারের জুম্মধ্বংসের নীতিই প্রধানত দায়ী হিসেবে উল্লেখ করে পার্বত্য জুম্ম জনগণকে ভূমিদস্যু ও পাহাড় জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সাহসী ভুমিকা রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন।

শোকসভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্র্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় সহসভাপতি বিপুল চাকমা।

শোকসভার প্রথমে পাহাড়ধসে প্রায় দেড়শ’র অধিক নিহতদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

khagrachari3

সভায় বক্তাগণ বলেন, পাহাড়ধসের কারণে শতাধিক নিহত হওয়ার ঘটনাকে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে ৮০-র দশকে সরকার ব্যাপক হারে সেটলার পুনর্বাসনের পর থেকেই মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাপকভাবে সৃষ্টি হচ্ছে। ভূমিদস্যু ও পাহাড় জবরদখলকারীদের লোভের কারণে আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় আদিঅধিবাসী জনগণ অস্তিত্ব সংকটের দ¦ারপ্রান্তে এসে উপনীত হয়েছে। সরকারের এই জুম্ম ধ্বংসের নীতির ফলে রাঙামাটি শহর এবং বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে অপরিকল্পিত বসতি গড়ে উঠেছে। অপরিকল্পিত বসতবাড়ি গড়ে তোলার সময় প্রশাসন কোনো ধরণের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উপরন্তু ভূমিদস্যুদের আগ্রাসী ভূমি জবরদখলের কাজকে বরাবরের মতোই সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে এসেছে সেনা ও সরকার প্রশাসন।

সভায় বক্তাগণ আরো বলেন, সরকার সচেতনভাবে এবং জেনেশুনেই জাতিসত্তার প্রকৃতিঘনিষ্ট জীবন বৈশিষ্ট্য ধ্বংস করে দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে তারা ব্যবসা ও লুন্ঠনের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করেছে। এজন্য তারা পাহাড়ের জীবনবৈচিত্র্যকে অগ্রাহ্য করে লাখ লাখ সেটলারকে দিয়ে পাহাড়ে আগ্রাসী থাবা বিস্তার করেছে। অবিলম্বে এই আগ্রাসী ভূমি জবরদখল বন্ধ করে পাহাড়ের জনগণকে প্রকৃতিঘনিষ্ট হয়ে থাকার অধিকার প্রদান করতে বক্তারা সরকারের প্রতি দাবি জানান।

একইসাথে বক্তাগণ বলেন, ব্যাপক ভূমিধসের ঘটনার পেছনে ‘জুম চাষ’কে দায়ী করে বিভিন্ন মিডিয়া ও গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। পাহাড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়া ও সাম্প্রতিককালে পাহাড়ধসের কারণে শত মানুষের মৃত্যু ও সম্পদহানির পেছনের মূল কারণকে সুপরিকল্পিতভাবে আড়াল করার প্রচেষ্টা হিসেবে এই জুমচাষের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।

khagrachari,2

জীবিকার অবলম্বন হিসেবে যারা জুমচাষ করে থাকেন তারা জুমভূমির কোনো ধরণের ক্ষতি না করেই জুমচাষ করে থাকেন উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, জুমচাষ বর্তমানে লাভজনক নয়, এবং একইসাথে জুমচাষ করে দীর্ঘমেয়াদে জীবন জীবিকার সংস্থান হয় না, তা সত্য। তবে জুমচাষের কারণে নয়, বরং সরকারের জুম্মধ্বংসের নীতির কারণেই আজ পাহাড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রাণহানিকর পাহাড়ধস সংঘটিত হচ্ছে।

শোক সভায় বক্তাগণ পাহাড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করতে সরকারকে জুম্ম ধ্বংসের নীতি পরিহার করতে আহ্বান জানান এবং একইসাথে যারা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাদেরকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানেরও দাবি জানান।

সভা থেকে বক্তারা পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, একটানা প্রবল বর্ষণের ফলে গত ১২ জুন মধ্যরাত থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত রাঙামাটি-বান্দরবান-খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামে ব্যাপক পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫০ জনের অধিক মাটিতে চাপা পড়ে নিহত হন এবং আহত হন আরও অনেকে। এছাড়া ঘরবাড়ি ও সহায়-সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

উক্ত ঘটনায় ইউপিডিএফ ১৫ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত তিন দিনের শোক পালনসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করে।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More