পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার কাউন্সিল সম্পন্ন
খাগড়াছড়ি : “পূর্ণস্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র সমাধান, শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধ হোন! ” এই শ্লোগানে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ১৫তম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।
আজ রবিবার (৯ অক্টোবর) সকাল ৯টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের ১ম অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় ও জেলা সভাপতি রতন স্মৃতি চাকমার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক তপন চাকমা। এতে আরো বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় সদস্য নতুন কুমার চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পলাশ চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মেনাকী চাকমা প্রমূখ।
শোক প্রস্তাব পাঠ করেন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক জহেল চাকমা।
অধিবেশনের শুরুতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি গভীর সম্মান, শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় আন্দোলন করতে গিয়ে পঙ্গুত্ব বরণকারী বীরদের প্রতিও সম্মান জানানো হয়।
কাউন্সিল অধিবেশনে ইউপিডিএফ নেতা নতুন কুমার চাকমা বলেন, “পিসিপি মানেই আন্দোলন সংগ্রাম, জাতির ভবিষ্যৎ। পিসিপি ছাড়া অধিকারের কথা চিন্তা করা যায় না।” বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর পরিচালিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্ররা আত্মকেন্দ্রিকভাবে গড়ে উঠে এবং মুষ্টিমেয় সংখ্যক সুবিধা ভোগ করে। বাকিরা বঞ্চিত হয়, বেকার থাকে। ছাত্ররা আন্দোলনমুখী, সংস্কৃতিবান না হলে দেশ, সমাজ ও জাতিকে অগ্রসর করা সম্ভব নয়। আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি হিসেবে বাঁচতে চাইলে আত্মকেন্দ্রিকতা পরিহার করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে।
বিপুল চাকমা বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র পাহাড়ে ভূমি বেদখল, নারী ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। পর্যটনের প্রতি আকৃষ্ট হলে তরুণরা সংগ্রাম বিমুখ হবে, অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়বে। থাইল্যান্ডের পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সামাজিক অবক্ষয় তার একটি অন্যতম উদাহরণ।
তিনি আরো বলেন, বাণিজ্যিক শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্রদের সংগ্রামী হতে শেখায় না। শেখায় আপনি বাঁচলে বাপের নাম টাইপের সংস্কৃতি। প্রতিষ্ঠান হিসেবে খাগড়াছড়ি ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ অন্যতম উদাহরণ।
তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল জাতিসত্তার ছাত্রসমাজের ভেতরে সংকীর্ণ জাতিয়তাবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক চেতনা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। অবাক করার বিষয় হল পাহাড়ি ছাত্র পরিষদকে “চাকমা ছাত্র পরিষদ” হিসেবে আখ্যা দেয়া হচ্ছে। পিসিপি সকল জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তৎপর। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের প্রতিনিধিত্ব করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বিকল্প কোন সংগঠন হতে পারে না। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্রসমাজকে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের গ-ি থেকে বের হয়ে বৃহত্তর পরিসরে সংগ্রাম করার আহ্বান জানান।
রতনস্মৃতি চাকমা বলেন, শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে পিসিপি’র রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামের ঐতিহ্য রয়েছে। পিসিপি রাজনৈতিক অধিকারের পাশাপাশি শিক্ষার আন্দোলনে সোচ্চার রয়েছে।
বক্তারা অবিলম্বে জেলা পরিষদে শিক্ষক নিয়োগে দূর্নীতি বন্ধ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ১১ দফা নির্দেশনা বাতিল, উন্নয়নের নামে পর্যটন-সেনা স্থাপনা নির্মাণ বন্ধসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের দাবি জানান।
মেনাকী চাকমা বলেন, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার আলুটিলা পর্যটন জোন স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র-যুব-নারীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে সোনায়ন চাকমাকে সভাপতি, অমল ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক ও রুপেশ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নতুন কমিটিকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।
পুরাতন কমিটিকে বিলুপ্তি ঘোষণা ও নতুন কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান ১৪তম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার বিদায়ী কমিটির সভাপতি রতন স্মৃতি চাকমা।
———————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।