পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২৪তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সম্পন্ন : সভাপতি বিপুল, সা. সম্পাদক সুনয়ন

0

ঢাকা : বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর ২৪তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।

‘অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার উত্থান অবশ্যম্ভাবী’-এই স্লোগানে এবং ‘শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ও মনুষ্যেচিত বাঁচার তাগিদে ছাত্র সমাজের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলুন’- এই আহ্বানে গতকাল শুক্রবার (২ নভেম্বর ২০১৮) ঢাকায় পল্টনস্থ মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে পুরো দিনব্যাপী কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

কাউন্সিলে বিপুল চাকমাকে সভাপতি ও সুনয়ন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং অমল ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।

চার পর্বে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের তিনটি পর্বে  বিদায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সুনয়ন চাকমা ও সহ-সাধারণ সম্পাদক অংকন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় এবং বিভিন্ন জেলা উপজেলাসহ বিভিন্ন শাখাসমুহের নেতৃবৃন্দ। বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি বিপুল চাকমা সংগঠনের কেন্দ্রীয় রিপোর্ট পেশ করেন ।

‘‘আমরা করবো জয়’’ এই গান পরিবেশনের মাধ্যমে সকাল ১১টায় কাউন্সিল উদ্বোধন করা হয়। অধিবেশনের প্রথম পর্বের শুরুতে অধিকার আদায় লড়াইয়ের আত্মবলিদানকারী বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পিসিপি কেন্দ্রীয় সদস্য রিপন চাকমা। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ১ম শহীদ ভরদ্বাজ মুণি চাকমা, রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত  সাবেক পিসিপি কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ইউপিডিএফ’র অন্যতম সংগঠক শহীদ মিঠুন চাকমা, গত ১৮ আগস্ট ২০১৮ খাগড়াছড়ি স্বনির্ভর বাজার ও পেরাছড়া পৃথক দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত পিসিপি নেতা শহীদ তপন-এলটন চাকমা, যুব নেতা পলাশ চাকমাসহ ৪ সমর্থক-শুভাকাঙ্খীসহ সকল শহীদ নেতাকর্মী এবং  সমতলে মধুপুর অঞ্চলে পীরেন ¯œাল, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত মানুষের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল প্রয়াত ব্যক্তিবৃন্দ যথাক্রমে বীর মুক্তি যোদ্ধা ও সাংবাদিক রইসুল হক বাহার, ঔপন্যাসিক শওকত আলী ও প্রাণেশ সমাদ্দারকে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে শোক প্রস্তাব পাঠ করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

২য় পর্বে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন এবং শাখা প্রতিনিধিরা নিজ এলাকার সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন। ৩য় পর্বে সবার সম্মতিতে নতুন কমিটি নির্বাচন ও শপথ নামা পাঠ করা করা হয়।

শেষ পর্বে নতুন কমিটি সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা পরিচালনায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।

কাউন্সিলে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতির উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ওপর নিষ্ঠুরভাবে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। সেনা-প্রশাসনের নিপীড়নের হাত থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহও বাদ যাচ্ছে না। গত ২২ অক্টোবর গুইমারায় কুকিছড়ায় বর্বরভাবে সেনা কর্তৃক বৌদ্ধ বিহার ও বুদ্ধমূর্তি ভাংচুর, মহালছড়ি সেনা জোন কর্তৃক ২৩ অক্টোবর লক্ষী-নারায়ণ মন্দির ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ ও ৩০ অক্টোবর নান্যাচরে রত্মাঙ্কুরর বন বিহারে তল্লাশি চালানোর মাধ্যমে তাদের চরম ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষকে প্রকাশিত করেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে শাসকগোষ্ঠী, সেনা-প্রশাসন একের পর এক অপতৎপরতা, দমনপীড়ন চালাচ্ছে। একারণে সম্প্রতি রাঙামাটিতে সেনা কর্তৃক জনবসতিতে হামলা-গ্রেফতারসহ নানা ধরনের দমন-পীড়ন ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। টহল-তল্লাশি বৃদ্ধি করে জনগণকে হয়রানি করা হচ্ছে। সম্প্রতি রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে অন্যায়ভাবে বহুজনকে আটক-নির্যাতন করা হয়েছে। 

বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে দমিয়ে রাখার জন্য শাসকগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী অন্যতম অংশ সেনাপ্রশাসন তাদের নীলনক্সা বাস্তায়নের লক্ষ্যে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে গত বছর ১৫ নভেম্বর  খাগড়াছড়িতে নব্য মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয় সেনাপ্রশাসন  তাদের অন্যতম দোসর সংস্কারবাদী জেএসএস  ও মুখোশবাহিনীর সন্ত্রাসীর মাধ্যমে একের পর এক হত্যাকা- সংঘটিত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগনের ন্যায্য অধিকারের আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য শাসকগোষ্ঠী এ সমস্ত দালালদের ব্যবহার করছে। এই রক্ত পিপাসু খুনি সন্ত্রাসীদের দিয়ে ইউপিডিএফ এর সংগঠক মিঠুন চাকমা, অনল বিকাশ চাকমা, সুনীল বিকাশ ত্রিপুরাসহ সর্বশেষ স্বনির্ভরে  পিসিপি নেতা তপন, এল্টন ও যুব নেতা পলাশ চাকমাসহ ৭ জনকে হত্যা করা সম্ভব হলেও জনগণের প্রতিরোধে এই নীলনক্সা কখনো সফল হবে না বলে বক্তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

খুন গুম করে অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে পিসিপিকে এক কদমও সরানো যাবে না মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, তপন-এল্টন-পলাশদের হত্যা করা সম্ভব হলেও পিসিপি’র লড়াই কখনো থামাতে পারবে না শাসকগোষ্ঠী ও তার দালালরা। বরং এ ধরনের হত্যাকা-ের ফলে পিসিপি নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ ও প্রতিরোধের অদম্য স্পৃহাকে আরো বৃদ্ধি করেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ন্যায়ের জন্য যে কোন বীরত্বপূর্ণআত্মবলিদান মানুষের ক্ষোভ ওচেতনার মশালকে উদ্দীপ্ত করে, তপন-এল্টনদের আত্মহুতিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

বক্তারা ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, শাসকগোষ্ঠী ও তার দালালদের ছাত্র সমাজকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে অব্যাহতভাবে। কারণ তারা জানে ছাত্র সমাজকে বিভক্ত করতে পারলে তাদের হীন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সহজ হয়। এই ষড়যন্ত্র রুখতে বর্তমান ছাত্র সমাজের  ঐক্যবদ্ধ হওয়া অত্যান্ত জরুরী। তাই সমস্ত সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা বলেন, সমস্ত বাধা ছিন্ন করে পিসিপি’কে লড়াই সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হবে। সংগঠনের ও জনগণের অধিকার আদায়ের কাজের জন্য পিসিপি নেতাকর্মীদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। ন্যায্য অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায় না হওয়া পর্যন্ত পিসিপিকে কঠিন থেকে কঠিন কাজ ও লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

বিদায়ী সভাপতি বিনয়ন চাকমা বলেন, পিসিপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে গৌরবোজ্জল আন্দোলন করে চলেছে। সেই ধারাবাহিকতা নতুন কমিটিও চালিয়ে যেতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

নতন কমিটির সভাপতি বিপুল চাকমা বলেন, আজ আবারো আমাদের ওপর ছাত্র সমাজকে নেতৃত্ব দেয়ার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হলো। সেই দায়িত্ব যথাসাধ্যভাবে পালন করবো এই অঙ্গীকার আমরা করছি।

কাউন্সিলের ৩য় পর্বের শেষ দিকে সবার সম্মতিক্রমে নতুন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান বিদায়ী কমিটির সভাপতি বিনয়ন চাকমা।

শপথের পর পরই দাপ্তরিক ফাইল হস্তান্তরের মাধ্যমে বিদায়ী কমিটির সভপতি বিনয়ন চাকমা নতুন কমিটির সভাপতিকে দায়িত্ব বুঝে দেন এবং নতুন কমিটির সকল সদস্যদের সাথে করমর্দনের মাধ্যমে তাদের অভিনন্দন জানান। আর নতুন কমিটির সভাপতিও বিদায়ী কমিটির সভাপতি বিনয়ন চাকমাকে ফুল দিয়ে বিদায় জানান।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More