পাহাড়ি নারীর মর্যাদা রক্ষায় সেনাবাহিনীর বাধা : অপহরণ নাটক সৃষ্টি করে ৩ পাহাড়ি নারীকে আটক
গু্ইমারা : খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার সদর ইউনিয়নে সেনাবাহিনী ও পুলিশ অপহরণ নাটক সাজিয়ে ত্রিপুরা জাতিসত্তার অস্তিত্ব, মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষার প্রচেষ্টাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই ঘটনায় সেনাবাহিনী ৩ জন পাহাড়ি নারীকে আটক করে তাদের পুলিশে সোপর্দ করেছে। একইসাথে গ্রামপ্রধান, পাড়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ এলাকাবাসীকে সেনাক্যাম্পে আটক ও হয়রানী করেছে।
জানা গেছে, নয়না ত্রিপুরা নামে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক(?) পাহাড়ি নারী অবৈধ ও অসামাজিকভাবে এক সেটলার বাঙালি যুবকের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। পরে উক্ত ত্রিপুরা মেয়েটি সেটলার যুবকের সাথে পালিয়ে যাবার প্রচেষ্টা চালালে ত্রিপুরা জাতিসত্তার জনগণ পাহাড়ি নারীকে রক্ষায় মরীয়া প্রচেষ্টা চালায়। এই ঘটনাকে তাদের নিজ জাতির সম্ভ্রম, মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার উপর হুমকি বিবেচনা করে। পাহাড়ি নারীর মান মর্যাদা রক্ষার জন্য এলাকার যুবকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়।
তারা গতকাল শুক্রবার দুপুর দুইটায় উক্ত নারীকে উদ্ধারের জোর প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু সেনাবাহিনী এই ঘটনাকে ‘অপহরণ নাটক’ সাজিয়ে ভিন্নখাতে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে।
এই ঘটনার জেরে মাটিরাংগা সেনাবাহিনী বিভিন্ন এলাকার গ্রামপ্রধান, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, হেডম্যানসহ ত্রিপুরা জাতিসত্তার জনগণের উপর মানসিক নিপীড়ন ও হয়রানী শুরু করে। তাদেরকে ক্যাম্পে জোর করে নিয়ে ৫ ঘন্টা আটক করে রাখে।
সেনাবাহিনী মাটিরাঙ্গা জোনের জোনাল স্টাফ অফিসার মেজর ইমরুল কায়েস মেহেদী’র নেতৃত্ব সেনাবাহিনীর একটি দল সাইনবোর্ড, রাবার বাগান, তৈমাতাই ও বাইল্যাছড়ি এলাকার পাহাড়ি যুকদের উপর অত্যাচার ও হয়রানি শুরু করে।
যারা হয়রানীর শিকার হয়েছেন তারা হলেন, ১৯৯ নং বাইল্যাছড়ি মৌজা হেডম্যান ত্রিদীব নারায়ন ত্রিপুরা (৫০), গুইমারা সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে মেম্বার জ্যোতি ধামাই বসু (৪০), জরি চন্দ্র পাড়া গ্রাম প্রধান (কার্বারী) পঞ্চ কুমার ত্রিপুরা (৬০), চাইলাপ্রু কার্বারী পাড়ার নারী গ্রাম প্রধান লাউচিং মারমা (৩৫) ও ১ নং রাবার বাগান প্রকল্পের লিডার রন বিকাশ ত্রিপুরা (৪০)।
আটককৃত নারীরা হলেন, বাইল্যাছড়ি ১ নং রাবার বাগান থেকে সোনালী চাকমা (৩৫), কমলা দেবী চাকমা (৩০) ও গুইমারা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেনী ছাত্রী জেসীকা ত্রিপুরা (১৬)। তাদেরকে বর্তমানে মাটিরাঙ্গা থানায় পুলিশের হেফাজতে আটক করে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদেরকে ১ নং রাবার বাগান থেকে আটক করা হয়।
এই ঘটনায় পাহাড়ি জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সেনাবাহিনীর এই ধরণের কার্যকলাপ পাহাড়িদের জাতিসত্তার স্বাতন্ত্র্য ও অস্তিত্ব রক্ষার উপর তীব্র আঘাতরূপে তারা বিবেচনা করছেন।
তারা আরো জানান, একজন পাহাড়ি নারী সে যদি সমাজে বাহিরে খারাপ পথে চলা ফেরা করলে, অনৈতিক কাজে লিপ্ত হলে কিংবা সমাজের শৃঙ্খলা বহির্ভূত কোন কাজ করে থাকলে তাকে ভালো পথে ফিরে আনা, সমাজকে সু-শৃঙ্খল করে রাখা সে এলাকা বা তার সমাজে মানুষের দায়িত্ব থাকে। কিন্তু সে দায়িত্ব পালন করতে গেলে সেনা-প্রশাসন তাতে নানাভাবে বাধা প্রদান করে।
সেনা-প্রশাসনের এহেন কার্যকলাপক সুপরিকল্পিতভাবে জাতিসত্তার অস্তিত্ব, মমর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্য ধ্বংসের চক্রান্ত। এলাকাবাসী অন্যায়ভাবে বিনাকারণে আটক কৃত নিরীহ নারী ও ছাত্রীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান এবং নিজ জাতিসত্তার স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদা রক্ষায় আগামীতে কোনো ধরণের বাধা মেনে নেয়া হবে না বলে মন্তব্য ব্যক্ত করেন।
—————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।