পিসিপি’র কাউখালী থানা শাখার ৮ম কাউন্সিল সম্পন্ন: ১৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠিত
কাউখালী(রাঙামাটি) প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
“সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হোন, মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকারের সংগ্রামকে বেগবান করুন ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আজ ৭ অক্টোবর শুক্রবার বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলার কাউখালী থানা শাখার ৮ম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। কাউন্সিল অধিবেশন শেষে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি গঠন উপলক্ষে সকাল ১১টায় কাউখালী উপজেলার কচুখালীতে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ম্যাকলিন চাকমার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা, রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বাবলু চাকমা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আহ্বায়ক সুকৃতি চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক শিমন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার আহ্বায়ক যুথিকা চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার মাদ্রী চাকমা ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর কাউখালী ইউনিটের প্রতিনিধি অনি বিকাশ চাকমা৷ সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য রিপন চাকমা ও উপস্থাপনা করেন উথোয়াই মারমা।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামকে নস্যাত্ করে দেয়ার লক্ষ্যে সরকার নানাভাবে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চালাচ্ছে। সেনা-বিডিআর ক্যাম্প সম্প্রসারণ, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সেনা-আমলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে ও প্ররোচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখলের তত্পরতা চলছে। ভূমি দস্যু, জাতীয় সম্পদ পাচারের সহযোগী সেনা কর্মকর্তা-আমলা-লুটেরাগোষ্ঠী নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। বক্তারা সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে জাতিসত্তার কোন স্বীকৃতি নেই। বাংলাদেশ কখনই এক জাতির দেশ নয়, এটি একটি বহুজাতি অধ্যুষিত ও বহুভাষিক রাষ্ট্র। বাঙালি জাতি সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং প্রধান জাতি হলেও এদেশে ৪৫টির অধিক সংখ্যালঘু জাতির অস্তিত্ব রয়েছে।‘৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ প্রতিটি জাতিই দেশ গড়ার কাজে ভূমিকা রাখছে। অথচ মহাজোট সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালী‘ এই বাক্যাংশ যুক্ত করে বাঙালি ভিন্ন বাংলাদেশের অন্য জাতি ও ভাষাভাষী জনগণের উপর বাঙালি জাতীয়ত চাপিয়ে দিয়েছে।
বক্তারা বলেন, প্রত্যেক জাতির নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার রয়েছে। কিন্তু সরকার এ অধিকারের স্বীকৃতি দিচ্ছে না। সরকার সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের ভাষাগুলোর বিকাশ ঘটানো দূরের কথা, বরং সেগুলো ধ্বংস করার জন্য ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। বক্তারা মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকারসহ নিজ জাতিসত্তার স্বীকৃতি লাভের জন্য ছাত্র সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
বক্তারা অবিলম্বে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল বন্ধ করা ও পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি, সেনাবাহিনী প্রত্যাহারপূর্বক সেনাশাসনের অবসান ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে কচুখালী থেকে এক র্যালী বের করা হয়।র্যালীটি পোয়া পাড়া বাজার ঘুরে আবার কচুখালীতে গিয়ে শেষ হয়।
এরপর বিকাল ৩টায় বেতবুনিয়ায় অবস্থিত ইউপিডিএফ কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে ম্যাকলিন চাকমাকে সভাপতি, উথোয়াই মারমাকে সাধারণ সম্পাদক ও স্বপন তঞ্চঙ্গ্যাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কাউখালী থানা শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা এ কমিটির ঘোষণা দেন। কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত সকলের বিপুল করতালি মধ্যে দিয়ে এ কমিটি পাশ হয়। কমিটি পাশের পর থুইক্যসিং মারমা নতুন কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান।