লক্ষীছড়ি সমাবেশে সেনাবহিনীর হামলা : প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রসহ আটক ৮
পিসিপি’র ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সুমন্ত চাকমার মুক্তির দাবিতে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ
খাগড়াছড়ি: সেনাবাহিনী কর্তৃক পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার নেতা সুমন্ত চাকমাকে আটকের প্রতিবাদ ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে ২০শে মে শনিবার খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
লক্ষীছড়ি: সকাল ১০টায় লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল বেড় করে পিসিপি। মিছিলটি সদরের বাদি পাড়া থেকে শুরু হয়ে লক্ষীছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের শুরুতে বক্তব্য রাখেন পিসিপি লক্ষীছড়ি উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক সম্পাদক নয়ন চাকমা এরপর লক্ষীছড়ি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক উজ্জল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন উপজেলা শাখার সভাপতি রেশমী মারমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ক্যামরন দেওয়ান।
ক্যামরন দেওয়ান বক্তব্য শুরু করেলে লক্ষীছড়ি সদর জোন থেকে সেনাবাহিনীর একদল সেনাবিাহিনীর সদস্য সমাবেশ বাধা প্রদান করেন এবং ব্যানার কেড়ে নিতে চেষ্টা করেন। এতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পিসিপি’র নেতা কর্মীরা সেনাবাহিনীর অগণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপে বিরোধীতা করলে সেনারা লাঠিচার্জ করা শুরু করে। এসময় ছাত্ররাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ছাত্রদের সাহসী প্রতিরোধের মূখে সেনাবাহিনীকে পিছু হটে এবং সমাবেশস্থল থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়।
এর কিছুক্ষণ পর আবার বিরাট একটি দল নিয়ে পুনরায় সমাবেশে হামলা ও গণগ্রেফতার চালায়। এতে বেশ কয়েক ছাত্র ও পথচারী আহত হয় এবং ১০ বছর বয়সী ছাত্র থেকে শুরু করে ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ পর্যন্ত ৮ জনকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আটককৃতরা হলেন বাদি পাড়া থেকে রাঙ্গাচোগা চাকমার ছেলে লক্ষীছড়ি সদর সরকারী প্রথামিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর ছাত্র সুপন চাকমা (১২) ও একই স্কুলের হাজাছড়ি গ্রামের তরুনি চাকমার ছেলে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র নিকেল চাকমা(১০), চেঙ্গী মূখ পাড়ার মৃত বলরাম চাকমার ছেলে হৃদয় বাবু চাকমা(৭০), একই গ্রামের মনকুমার চাকমার ছেলে দয়াল চাকমা(২০) ও নিরঞ্জয় চাকমার ছেলে মধু চাকমা(২৫), যতীন্দ্র কার্বারী পাড়া থেকে মদি চন্দ্র চাকমার ছেলে শিমুল চাকমা(২৫), বাদি পাড়া থেকে অনিল চাকমা(৪০) ও প্রবিন্দু চাকমার ছেলে ব্রত চাকমা(২২)।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক বেআইনি ধরপাড়ক ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। নিরপরাধ ছাত্র নেতাদের বাড়ি থেকে তুলে এনে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে সাজানো মিথ্যায় আসামী করা হচ্ছে। ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি হয়ে এমন পরিস্থিতিতে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-জনতা তা কখনো বরদাস্ত করবে না। সমাবেশ থেকে তারা পাহাড়ি জনগণের উপর সেনাবাহিনীর জাতিগত নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
রামগড়: একই দাবিতে ২০ মে শনিবার সকাল ১০টায় মিছিলটি রামগড় উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পিসিপি।মিছিলটি যৌথ খামার ছাত্রীছাউনী থেকে শুরু হয়ে বাজারে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ব্যানার কেড়ে নিতে চাই। এসময় এক পুলিশ সদস্য রাইফেল উঁচিয়ে গুলি করার ভয় দেখালে পিসিপির নেতা-কর্মীরা আরো বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। উদ্যোত রাইফেলের বাধা ভেঙ্গে মিছিলটি দুর্বার গতিতে বাজার ঘুরে আসে এবং আবার যৌথখামার ছাত্রীছাউনিতে এসে পিসিপি’র উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নরেশ ত্রিপুরার সংক্ষিপ্ত ব্যক্তব্য দিয়ে শেষ করে দেন।
গুইমারা: একই দিনে একই দাবিতে নবগঠিত গুইমারা উপজেলাতেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২ টায় গুইমারা সদরে বাইল্যাছড়ি তৈমাতাই ১ নং ব্রীজ থেকে মিছিল বের করতে চাইলে সেনাবাহিনী এসে বাধা প্রদান করে। পরে আবার দুপুর দেড়টায় দ্বিতীয়বার আবার ২নং ব্রিজ এলাকা থেকে মিছিল শুরু করে এবং বাইল্যাছড়ি সাইনর্বোড এলাকা পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন মাটিরাঙা উপজেলা পিসিপি সভাপতি নেপাল ত্রিপুরা ও গুইমারা উপজেলা শাখার সভাপতি অভি চাকমা।
পানছড়ি: উক্ত দাবিতে একই দিন জেলার পানছড়ি উপজেলাতেও বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে পিসিপি। মিছিলটি কলেজ গেইট থেকে শুরু করে বাস স্টেশন ঘুরে এসে কলেজ মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কল্যাণ জ্যোতি চাকমা, এলিশন চাকমা, উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুকিরন চাকমা ও সহ-সভাপতি কৃপায়ণ চাকমা ।
সমাবেশে সেনা সদস্যরা বাধা দিতে চেষ্টা চালায়। কিন্তু পিসিপি নেতৃবৃন্দের অনড় অবস্থানে থাকেন এবং সমাবেশ চালিয়ে যান। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সমাবেশস্থল ত্যাগে বাধ্য হয়।
সমাবেশ শেষে ফেরার পথে পানছড়ি সাব-জোনে সমাবেশে যোগ দিতে আসা ছাত্র ছাত্রিদের আটকিয়ে হয়রানি করা হয়। প্রতিবাদের মূখে পরে সবাইকে ছেড়ে দিতে বাধ্য জোন কতৃপক্ষ।
___________
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।