বগাছড়িতে পাহাড়ি গ্রামে সেটলার হামলা-অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন
সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙামাটি: রাঙামাটি জেলার নানিয়াচর উপজেলার বগাছড়িতে পাহাড়িদের বসতবাড়ি, দোকান ও বৌদ্ধ মন্দিরে সেটলার বাঙালিদের হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের গ্রেফতারসহ ৫ দফা দাবিতে আজ বুধবার ১৭ ডিসেম্বর নানিয়াচর সদরসহ ৪টি স্থানে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নানিয়াচর ভূমি রক্ষা কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি যৌথভাবে ঘিলাছড়ি থেকে মানিকছড়ি খামার পাড়া, বেতছড়ি থেকে ১৭ মাইল, নানিয়াচর টিএন্ডটি থেকে নানিয়াচর বাজার পর্যন্ত এবং ঘটনাস্থল বগাছড়িতে এই মানবন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করে।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গের সদস্যরাসহ হাজার হাজার নারী পুরুষ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলা উক্ত মানববন্ধনে অংশ নেন। এ সময় নান্যাচর সদরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নানিয়াচর ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুশীল জীবন চাকমা, কুদুকছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা শাখার নেত্রী মন্টি চাকমা ও খামার পাড়ায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা।
বক্তারা গত ১৬ ডিসেম্বর নানিয়াচরের বগাছড়ির পাহাড়ি গ্রামে সেটলার বাঙালিদের বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘হামলাকারীরা সেনাবাহিনীর সহায়তায় পাহাড়িদের ৫০টি বাড়ি ও ৭টি দোকান জ্বালিয়ে দেয়, বৌদ্ধ বিহারে ও ক্লাবে হামলা চালিয়ে বুদ্ধমূর্তি ও টাকা পয়সা লুটপাট করে নিয়ে যায়। সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্যও হামলায় অংশ নেয় এবং পেট্রোল ঢেলে দিয়ে একটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এ সময় হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ ৩ জনকে মারধর করা হয়।
উক্ত হামলায় আনুমানিক ২ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে দাবি করে তারা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাহাড়িরাই পাহাড়ে জমির মালিক হবেন বলে ঘোষণা দিলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত পাহাড়িদের জমি বেদখলের ঘটনা ঘটছে। বেতছড়িতে পাহাড়িদের শত শত একর জমি জোরপূর্বক দখল করে সেটলাররা আনারসসহ বিভিন্ন ফলের বাগান করছে। আর তাদের এই কাজে প্রত্যক্ষ মদদ ও সহযোগিতা দিচ্ছে স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা।
বক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ভূমি বেদখল বন্ধ না হলে এবং পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকার ফিরিয়ে দেয়া না হলে এ ধরনের হামলা বার বার ঘটতে থাকবে। তারা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার, ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান, লুণ্ঠিত বুদ্ধমূর্তি উদ্ধার, বগাছড়িতে ভূমি বেদখল বন্ধ করা ও সেখান থেকে বহিরাগত সেটলারদের প্রত্যাহারের দাবি জানান।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের সড়ক অবরোধ ও হামলাকারীদের যানবাহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বয়কটের আন্দোলন চলবে বলে তারা উল্লেখ করেন।
এছাড়া আগামীকাল ১৮ ডিসেম্বর ঘিলাছড়ি, কুদুকছড়ি ও বেতছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ১৯ ডিসেম্বর নান্যাচরে টিএনও বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হবে।
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।