Sign in
Sign in
Recover your password.
A password will be e-mailed to you.
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিএইচটিনিউজ.কম
‘পাহাড়িদের অব্যক্ত কান্না’ শিরোনামে আবিদ রহমান মেলবোর্ন থেকে আমাদের সময় পত্রিকায় লেখা এক নিবন্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের সেটলারদেরকে বঙ্গোপসাগর জুড়ে জেগে ওঠা চরে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল প্রকাশিত উক্ত নিবন্ধে তিনি লেখেন, ‘পাহাড় হবে পাহাড়ি অধিবাসীদের। বর্তমান পরিস্থিতি বলে, সেখান থেকে বাঙালি সেটেলারদের সরিয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই। অনেকেই বলবেন, সবাই তো দোষী নন। অন্যায় হতে দেখে প্রতিবাদ না করাটাও কিন্তু সমান অপরাধ। অন্যকে নির্যাতিত হতে দেখা নিশ্চুপ যারা তারাও সেই অপরাধে অপরাধী। হাজারো চর জাগছে বঙ্গোপসাগরজুড়ে। এসব ‘হি-ম্যান‘দের সেখানে পুনর্বাসিত করা হোক অনতিবিলম্বে।’
পুরো লেখাটি পড়ুন:http://www.amadershomoy2.com/content/2012/10/03/news0820.htm
পাহাড়িদের অব্যক্ত কান্না
আবিদ রহমান * মেলবোর্ন থেকে :
সংখ্যালঘু হওয়ার ‘ডিসএডভান্টেজ‘টা প্রবাসী মাত্রই জানেন। সামগ্রিক প্রতিবেশ ও পারিপার্শ্ব বেদনাদায়ক বৈরী না-হলেও মানসিকভাবে নিজেরাই কেমন যেন গুটিয়ে থাকি! এক ধরনের হীনম্মন্যতা এসে ভর করে চিন্তা-ভাবনায়, চলনে-বলনে। সব সময় ‘আতঙ্কে‘ থাকি না-জানি কোনো সীমারেখা অগোচরে অতিক্রম করে ফেলি। রাস্তায়-মার্কেটে বাংলায় কথাবার্তা বললে অনেকের সন্ত্মানেরা বিব্রত হয়। মাথায় টুপি দিলে তো একসঙ্গে হাঁটতেও ইচ্ছুক হয় না।
অথচ এই প্রবাস আমাদের স্বাগতম জানিয়ে রেখেছে উষ্ণ আন্ত্মরিকতার চাদরে। আমাদের ভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মচর্চ্চাকে আমাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে সম্মান্নিত করেছে। ওয়ান-ইলেভেন আর বিভিন্ন উগ্র মৌলবাদী হুঙ্কারে ইদানীং অবশ্য অবিশ্বাসটা বেশ জেঁকে বসেছে। কারণ, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে আমাদের অনেকে অন্য ধর্মাবলম্বীদের শত্রু ঘোষণা দিয়েই চলছেন। কোনো পেশায় জড়িত না-হয়েও ওই শ্রেণীর বেশির ভাগ আবার ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ‘জাকাত‘ বা দানে সংসার চালিয়ে ফতোয়া দেন, ‘বিধর্মীদের‘ দেশে এসব ‘জায়েজ‘।
সম্প্র্রতিককালে রামুসহ বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে ঘটে যাওয়া ‘ঘটনা-দুর্ঘটনা‘ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ায় সরব একদল মানুষের উপস্থিতি ল্য করা যাচ্ছে। কেউ কেউ এর মধ্যে খুঁজছেন দলীয় রাজনীতি, কেউবা মৌলবাদ বা ধর্মান্ধতা। আসলে কী বিষয়টি সেরকম কিছু? স্মৃতি যদি বিশ্বাসঘাতকতা না করে, ঘটনাটি প্রথম মিডিয়ায় তুলে আনেন বন্ুবর সালিম সামাদ। তখনো আজকের ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশন সাপ্তাহিক। বেশ মাশুল গুনেছিলেন সালিম ভাই।
ব্যক্তিগত কথোপকথনে জেনেছিলাম, প্রকাশিত তথ্যাবলি ছিল ‘টিপ অব এন আইসবর্গ‘। নিজেদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য লাখো শহীদের রক্ত বিসর্জনে বাঙালি ও বাংলাদেশ এক মুহূর্তের জন্য দ্বিধান্বিত ও কুণ্ঠিত হয়নি। পাকিদের দাবিয়ে রাখার নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল বাঙালিরা। কিন্তু নিজেদের ‘ব্যাক ইয়ার্ডে‘ বাঙালিরা একই সঙ্গে পাহাড়ি নৃগোষ্ঠী বা আদিবাসী বা উপজাতিদের মৌলিক স্বাতন্ত্রের অধিকারটুকু দিতে বারবার অগ্রাহ্য করেছে। স্বাধিকার তো ‘দিলিস্ন দুরূহ‘। পাকি শাসনামলে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ নির্মাণের অজুহাতে লাখো পাহাড়িকে ভূমিহীন করা হয়েছিল। পুনর্বাসনের অভাবে, অন্ন-বস্ত্র ও বাসস্থানের সংকটে এসব পাহাড়িরা হয়ে উঠেছিলেন মাওবাদী ও ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সশস্ত্র ক্রীড়নকে। শান্ত্মির পাহাড়ে জ্বলে উঠেছিল অশান্ত্মির দাবানল। স্বাধীন বাংলাদেশেও পাহাড়িদের দুরবস্থার হেরফের হয়নি।
পঁচাত্তরোত্তর শাসনামলে পাহাড়ি অঞ্চলে শুরু হয় বাঙালিদের ‘রিসেটেলমেন্ট‘। ভূমিহীন, নদী ভাঙা একদল মানুষের সঙ্গে সেখানে গিয়ে হাজির হয় একদল ‘দস্যু‘। একটুকরো জমি কিনে নোয়াখালীর করিম, চাঁদপুরের রহিম, বরিশালের জাব্বার নিজস্ব বাহিনীর তাণ্ডবে দখল নেন হাজারো একর। দলীয় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ও সাইনবোর্ডের আড়ালে চলে নানা ধরনের প্রকাশের অযোগ্য দুষ্কর্ম। স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রশাসনিক ও মাতব্বরি মতা হাসিল করে বসে উড়ে এসে জুড়ে বসা বাঙালিরা। বলাই বাহুল্য, রহস্যজনক কারণে সরকারি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়ত সম্পূর্ণ নীরব কিংবা বাঙালিদের পাবলম্বী হয়েছিলেন। পাহাড়িরা ঝামেলা এড়াতে আরো গভীর জঙ্গলে চলে যেতে থাকে পেতৃক ভিটার মায়া ছেড়ে। এখন আর যাওয়ার জায়গাটুকুও নেই। কারণ, পিঠের দেয়ালে এসে ঠেকেছে ভিন দেশের সীমান্ত্ম। কমবেশি প্রায় প্রতিটি পাহাড়ি নারীর কোলজুড়ে আছে বাঙালি লালসার স্মারক! পাহাড়ি জনগোষ্ঠী আজ কেবল নিজ গৃহেই পরবাসী নন, প্রকারান্ত্মে বন্দি ও নির্যাতিত। সালিম সামাদের সুবাদে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা একদল উচ্চশিতি পাহাড়ি অধিবাসীদের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখি। তাদের নিজস্ব গ্রুপ পেজে প্রকাশিত সচিত্র ও সপ্রমাণ তথ্যাবলি কখনোই বাংলাদেশের কোনো মিডিয়ায় প্রকাশ সম্ভব নয়। হত্যা-গুম-ধর্ষণ-নির্যাতনের তুলনায় বৌদ্ধ মূর্তি ও মন্দির ভাঙার ঘটনাটা নেহাতই শান্ত্মিময়! কারণ, ধর্ম থাকে মানুষের অন্ত্মরের গহিন গভীরে। কোনো উপসানালয় ভেঙে মানুষের ধর্ম, বিশ্বাস বিনষ্ট করা যায় না, যদিও ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রবল একটা ধাক্কা দেওয়া হয়। যদি হত তাহলে কমিউনিস্ট রাশিয়া ও চীন থেকে মানুষের ধর্ম বিশ্বাসের শেকড় বহু আগেই উপড়ে ফেলা যেত। রাশিয়া ভেঙে যাওয়ার পর মুসলমান ও খ্রিষ্টানেরা ঠিকই আবার প্রকাশ্য হয়েছে।
আজ রামুসহ অন্যান্য এলাকার ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সরব, কারণ সামনে ভোট। এসবই ভোটের রাজনীতির জন্য লোক দেখানো কুম্ভীরাশ্রু। শেখ হাসিনার ‘পার্বত্য চুক্তি‘ ভিন্ন অন্য কোনো ইতিবাচক রাজনৈতিক উদ্যোগ গেল চলিস্নশ বছরে নজরে আসেনি। শেখ হাসিনার সেই চুক্তি বাস্ত্মবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও দেখি না। গঠনমূলক সমালোচনা তো পরের ব্যাপার। পাহাড় হবে পাহাড়ি অধিবাসীদের। বর্তমান পরিস্থিতি বলে, সেখান থেকে বাঙালি সেটেলারদের সরিয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই। অনেকেই বলবেন, সবাই তো দোষী নন। অন্যায় হতে দেখে প্রতিবাদ না করাটাও কিন্তু সমান অপরাধ। অন্যকে নির্যাতিত হতে দেখা নিশ্চুপ যারা তারাও সেই অপরাধে অপরাধী। হাজারো চর জাগছে বঙ্গোপসাগরজুড়ে। এসব ‘হি-ম্যান‘দের সেখানে পুনর্বাসিত করা হোক অনতিবিলম্বে। প্রকৃত দোষীদের বিচার হবে, এসব বাগাড়ম্বর হুমকিতে আস্থা রাখার পর্যায় বহু আগেই পেরিয়ে গেছে। পাহাড় আর পাহাড়িদের অব্যক্ত কান্না মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপে থাকা আমাদের আর সহ্য হতে চায় না। সবারই একটা ধৈর্যের সীমা থাকে।