বান্দরবানে যৌথবাহিনীর অভিযানে মিয়ানমার সীমান্ত ও গহীন অরণ্যে ৫৯ টি পপিক্ষেত ধ্বংস
বান্দরবান প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
বান্দরবানে থানছি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর নিষিদ্ধ পপিক্ষেত ধংসের অভিযান চলছে। বান্দরবানের গহীন অরণ্যের প্রায় ৪০কিলোমিটার সীমান্ত এলাকাজুড়ে এ অভিয়ান শুরু হয় গত ২২ জানুয়ারি। ১৫ দিনের এ অভিযানে দুর্গম ও যোগাযোগ বিচ্ছিন গহীন অরণ্যে আবিস্কৃত ৫৯টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পপিক্ষেত ইতিমধ্যেই ধংস করে দিয়েছে যৌথবাহিনীর কর্মকর্তা ও জোয়ান-সদস্যরা। বিক্ষিপ্তভাবে আবাদকৃত ও ধংস করা পপিক্ষেতের আয়তন প্রায় ১৪ একর।
গতকাল রোববার সারাদিনই বেশক’টি পপি ক্ষেতের ধংসযজ্ঞ সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি মেজর জেনারেল সাব্বির আহমদ। এ সময় তাঁর সংগে ছিলেন বান্দরবান সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাঈদ সিদ্দিকী, বিজিবি’র চট্টগ্রাম রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ,বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লা, চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ষ্টেশন কমান্ডার কর্ণেল.সাইফ, জিওসি’র জেনারেল ষ্টাফ অফিসার লে.কর্ণেল সাজ্জাদ, ষ্টাফ অফিসার মেজর ফয়সাল, জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলাম,পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য্য এবং ৬ জন সাংবাদিক।
যৌথবাহিনীর অধিনায়ক ও আলীকদম সেনা জোনের কমান্ডিং অফিসার লে.কর্ণেল মো.আলমগীর কবির জানান, বান্দরবান জেলা শহর থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দুরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের গহীন অরণ্যে দুর্বৃত্তদের আবাদ করা ৫৯টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিষিদ্ধ পপিক্ষেত ধংস করে দেয় সেনাবাহিনী, বিজিবি,পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। পপিক্ষেত আবিস্কার ও ধংস অভিযানে ১০ জন সেনা ও বিজিবি কর্মকর্তাসহ প্রায় ২৫০জন জোয়ান-সদস্য অংশ নেয় বলেও তিনি জানান।
গহীন অরণ্য বুলুঝিরিতে পপিক্ষেত ধংসের সময় সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল সাব্বির আহমদ এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নিষিদ্ধ পপিচাষের সংবাদ
পাওয়া মাত্রই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অকুস্থলে ছুটে যান এবং ধংস করে দেয় পপিক্ষেতের স্থাপনা। তিনি পপিচাষীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্যে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান। এরিয়া কমান্ডারের সফরসংগী পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লা ও জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বিপদগামী পপিচাষীদের কর্মসংস্থান ও ভূমিসহ পুনর্বাসনের জন্যে একটি বিশেষ প্রকল্প সরকারের উচ্চ মহলে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে গহীন অরণ্যে পপিচাষ বন্ধ হয়ে যাবে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আরও জানান, দুর্গম বড়মদক এলাকায় পপিচাষ বিরোধী সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০১২ সালে একটি সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গম এলাকার কিছু সংখ্যক পাহাড়ি পরিবার দারিদ্রতার কারণে ও দুর্বৃত্তদের চাপের মুখে নিষিদ্ধ পপিচাষ করে আসছে বলেও জানান।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ১৯৮২ সাল থেকেই বান্দরবানের থানছি, আলীকদম ও রুমা উপজেলার সীমান্ত ও গহীন অরণ্যের পানির প্রবাহ সুবিধা রয়েছে এমন স্থানসমুহে বিক্ষিপ্তভাবে পপিচাষ করা হয় প্রতিবছর এ সময়। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ তৎপরতায় ফুল ও ফল আসার সময়ই পপিক্ষেত ধংস করে দেয়া হয়। গতবছরের তুলনায় এ বছর পপিচাষ কমেছে এবং এবার ১৫দিনের টানা অভিযানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ৫৯টি পপিক্ষেত ধংস করে দেয়া হয় বলেও নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।