ভূমি দস্যুদের প্রতি সিন্দুকছড়ি জোন কমান্ডারের নির্দেশ: মামলা দেয়ার দায়িত্ব তোমাদের, ধরার দায়িত্ব আমার

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। সিন্দুকছড়ি জোন কমান্ডার লে. ক. রাব্বী আহসান ভূমি দস্যু ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারসহ পাতাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ক্যাম্পে ডেকে নিরীহ পাহাড়ি গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

Land grabbibgএকটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (২৪ আগস্ট) লে. ক. রাব্বী আহসান রামগড়ের পাতাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর ও একই ইউপির মেম্বার রফিক ও এলাকায় ভূমি দস্যু হিসেবে পরিচিত ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারকে সিন্দুকছড়ি জোনে ডেকে পাঠান। তাদের সাথে তিনি দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন এবং পরে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘ম্রাইলাপ্রু কার্বারী পাড়া, পশ্চিম পিলাভাঙা ও পাগলা পাড়ার পাহাড়িদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার দায়িত্ব তোমাদের, আর তাদেরকে ধরার দায়িত্ব আমার।’

চরম পাহাড়ি বিদ্বেষী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক বলে পরিচিত উক্ত কমাণ্ডার কোন আইনে মামলা করতে হবে তাও বাৎলে দেন। ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করতে হবে,’ তিনি তাদেরকে বলেন।

ভূমি দস্যুদের সাথে এসব কথা বলার এক ফাঁকে রাব্বী ম্রাইলাপ্রু গ্রামের বাসিন্দা সাথোয়াই মারমাকে ফোন করে জানতে চান, ‘পাগলা পাড়া ও ম্রাইলাপ্রু পাড়ার জমি কীভাবে পাহাড়িদের হলো?’ তিনি ওই জমি বাঙালিদের বলে দাবি করেন।

তার প্রশ্নের উত্তরে সাথোয়াই জানান যে, উক্ত জমির মালিক পাহাড়িরা এবং তা অনেক আগে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘ওই জমি ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার তার দাবি করলে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার আহ্বায়ক ছিলেন আলমগীর চেয়ারম্যান (পাতাছড়ি ইউপি)। আমিও কমিটির সদস্য ছিলাম। বিরোধ নিষ্পত্তি কল্পে যে মিটিঙ হয় সেখানে আনোয়ার নিজে উপস্থিত না থেকে তার প্রতিনিধি ইদ্রিসকে পাঠান। ইদ্রিস কিছু কাগজপত্র নিয়ে আসেন। কিন্তু তার দলিলে উল্লেখিত জমির চৌহদ্দির সাথে বাস্তবে পাগলা পাড়া ও ম্রাইলাপ্রু পাড়ার জমির চৌহদ্দির কোন মিল ছিল না।’

সাথোয়াই এই কথা বলার পর রাব্বী ‘টুট, তুমি কিচ্ছু জান না’ বলে ফোন রেখে দেন।

উল্লেখ্য, নোয়াখালির বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার ম্রাইলাপ্রু কার্বারী পাড়ার আনুমানিক ৫০ একর জমি ও হাজী সাব নামে অপর এক ভূমি দস্যু তার পাশে পাগলা পাড়ার একই পরিমাণ (৫০ একর) জমি নিজেদের বলে দাবি করেন। কিন্তু এই দাবির স্বপক্ষে তাদের কোন দলিল নেই। অপরদিকে পাহাড়িরা উক্ত জমিতে বংশ পরম্পরায় বহু বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। সিন্দুকছড়ি জোন কমান্ডার উক্ত জমি পাহাড়িদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে উক্ত দুই ভূমি দস্যুকে দিয়ে দিতে নানা ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। এ জন্য প্রয়োজনে নিরীহ পাহাড়ি গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিতেও কুণ্ঠিত বোধ করছেন না তিনি।

লে. ক. রাব্বী আহসান চরম পাহাড়ি বিদ্বেষী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক বলে পরিচিত। তিনি জামাতে ইসলামীর ঘোর সমর্থক বলেও জানা গেছে।

গত বছর জুনে সিন্দুকছড়ি জোনে বদলী হয়ে আসার পর থেকে তিনি পাহাড়িদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। রাতে বিরাতে গ্রাম ঘেরাও করে পাহাড়িদেও ঘরবাড়ি তল্লাশী করা, লোকজনকে নানাভাবে হয়রানি করা, ধরে নিয়ে ক্যাম্পে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো, মিথ্যা মামলা দেয়া, ভয়ভীতি প্রদর্শন করা ইত্যাদি হলো তার প্রতিদিনের কাজ। এ নিয়ে রামগড় ও মানিকছড়িতে পাহাড়িদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সম্প্রতি তিনি হাফছড়ি ও মরা ডুলুতে পাহাড়িদের জমি কেড়ে নিয়ে বাঙালিদের দেয়ার অপচেষ্টা চালান। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। উত্তেজনার এক পর্যায়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও এসপিসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। জানা যায়, এ সময় কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা রাব্বী আহসানকে টেলিফোনে  বলতে বাধ্য হন, ‘জমি বণ্টনের দায়িত্ব আপনারও নয়, আমারও নয়, জমি বণ্টনের দায়িত্ব সরকারের।’

এলাকার অনেকে মনে করেন, রাব্বী পাহাড়ি ও বাঙালিদেও মধ্যে সাম্প্রদায়িত দাঙ্গা বাঁধিয়ে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে তাদের জমি বেদখল করতে চান। মরা ডুলুতে বাঙালি লোকালয় থেকে বহু দূরে পাহাড়িদের জমিতে তিন বাঙালি পরিবারকে ঘর তুলে বসবাস করতে বাধ্য করে তিনি এ লক্ষ্য হাসিল করতে চেয়েছিলেন। অবৈধ ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়ার পর কতিপয় সেটলার মিছিলও করেছিল, তবে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নিতে পারেনি।

জোন কমান্ডার রাব্বী পানি বণ্টনেও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন। এ নিয়েও এলাকায় তার বিরুদ্ধে বেশ ক্ষোভ রয়েছে। জানা যায়, গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে সিন্দুকছড়ি জোনের জন্য একটি গভীর নলকূপ বসানো হয়। পানির লেয়ার জোনের আশে পাশে কোথাও পাওয়া যায় না বলে নলকূপটি সিন্দুকছড়ি হাই স্কুলের জায়গায় বসানো হয়। তখন সিন্দুকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যা সুইনুপ্রু মারমা বাধ সাধলে (কারণ গভীর নলকূপ হলে অগভীর নলকূলে আর পানি পাওয়া যাবে না) রাব্বী প্রতিশ্রুতি দেন যে, স্কুলে ও আশেপাশের গ্রামগুলোতেও জোনের গভীর নলকূপের পানি সরবরাহ করা হবে। কিন্তু নলকূপটি বসানোর পর তিনি জোনে পানি নিয়ে যান, স্কুলে ও বাঙালি সেটলার গ্রামগুলোতেও দেন, কিন্তু দুই পরিবার ছাড়া পাহাড়িদের গ্রামগুলোকে বঞ্চিত করেন। অথচ টিভিতে দেখানো হয় পাহাড়িরা গভীর নলকূপের পানি নিয়ে যাচ্ছে।

ইউপিডিএফের উপর রয়েছে রাব্বী সাহেবের চরম ক্ষোভ। কারণ তিনি মনে করেন ইউপিডিএফের কারণেই তার ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বার বার ব্যর্থ হয়। তিনি এপ্রিল ও জুনে দুইবার ওই এলাকায় কর্মরত ইউপিডিএফ সংগঠক অপু ত্রিপুরার বিরুদ্ধে পোস্টার বের করেন। পোস্টারে তাকে ধরিয়ে দিতে পারলে প্রথমে ১০ হাজার ও পওে ২০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন। ইউপিডিএফ সংগঠক দবনের বিরুদ্ধেও একইভাবে পোস্টার করা হয়। এছাড়া তিনি ইউপিডিএফের সদস্য চিনুকে ফোনে হুমকী দিয়ে বলেন, ‘প্রয়োজনে বাঘাইছড়ির মতো ঘটনা এখানেও (রামগড়ে) করা হবে।’ (কথিত সন্ত্রাসীদের সাথে বন্দুক যুদ্ধ)।

গোপন একটি সূত্রে জানা গেছে, রাব্বী হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান উশ্যে প্রু মারমা, পাতাছড়া ইউপি মেম্বার মানেন্দ্র চাকমা ও পাগলা পাড়ার বাসিন্দা সাথোয়াই মারমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করছেন।

সেটলারদের একটি সূত্র মতে, যে কয়জন সেনা কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হবে তার তালিকায় রাব্বী আহসানও রয়েছেন। এটা ঠেকানোর জন্য তিনি কর্মতৎপরতা দেখাচ্ছেন এবং সম্প্রতি বাঘাইছড়িতে কথিত সন্ত্রাসীদের সাথে বন্দুক যুদ্ধের পর অস্ত্র উদ্ধারের মতো একটি ঘটনা ঘটাতে চাচ্ছেন। কারণ ওই ঘটনার পরই নাকি বাঘাইহাট জোনের সিওর বাধ্যতামূলক অবসরের সরকারী সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যায়।
———————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More