মাল্যা গণহত্যা দিবস আজ

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম
রাঙামাটি: আজ ২ ফেব্রুয়ারী মাল্যা01-Mallya-Massacre-1992 গণহত্যা দিবস। ১৯৯২ সালের এই দিনে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার মাল্যা নামক স্থানে এ গণহত্যা সংঘটিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন কতৃক প্রকাশিত ‘জীবন আমাদের নয়’ রিপোর্টে এ গণহত্যা সম্পর্কে বলা হয়েছে, “২ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২ মাল্যা নামক স্থানে (লংগদু উপজেলা) একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে দু’টি বোমা বিস্ফোরিত হয়। লঞ্চটি মারিশ্যা (বাঘাইছড়ি উপজেলা) থেকে রাঙামাটি যাচ্ছিল। মাল্যা এখন সমতল থেকে আগত বাঙালী অভিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। বিস্ফোরণের ফলে একজন যাত্রী নিহত এবং লঞ্চের চালক মারাত্মক আহত হয়। বেঁচে যাওয়া লোকগুলো সাঁতরিয়ে কূলে ওঠেন। কিন্তু সশস্ত্র বাঙালী বসতিস্থাপনকারীরা তাদের অপেক্ষায় ছিল এবং তারা নারী পুরুষ শিশু নির্বিশেষে জুম্ম যাত্রীদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে ৩০ জন মারা যায়। ১৪টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বাকীগুলো পানিতে ডুবে যায়। আহতদের কয়েকজনকে সামরিক হাসপাতালে নিতে হয়।”

আরো জানা যায় সেদিন বাঘাইছড়ি এলাকার সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক অসদাচরণের প্রতিবাদ করার জন্য ঐ লঞ্চে একটি জুম্ম দলের প্রতিনিধি রাঙ্গামাটি ও ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। জনৈক মশিউর রহমান নামের এক ক্যাপ্টেন বিশ্বমিত্র চাকমা নামে একজন কলেজ ছাত্র ও বোধিমিত্র ভিক্ষু নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল। এবং কয়েকজন ছাত্রীর সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছিল। এছাড়াও সেনাবহিনী তিনটি বৌদ্ধ বিহার অপবিত্র করে দেয়।

ঘটনার দিন সেনাবাহিনীর দু’জন সদস্য দুরছড়ি বাজার থেকে দু’টি কেরোসিন টিনসহ ঐ লঞ্চে উঠে। কিছুদুর আসার পর কেরোসিনের টিন দু’টো রেখে উভয়ে লঞ্চ থেকে নেমে পড়ে। একই দিনে সেনাবাহিনী সহযোগীতায় পরিকল্পিতভাবে সেটলার বাঙালীদেরকে দা, বল্লম ও বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত করে মাইনি এবং দুরছড়ি বাজারের মধ্যবর্তী লংগদু উপজেলাধীন মাল্যা নামক স্থানে জড়ো করে রাখে। লঞ্চটি ঠিক সে স্থানের পৌঁছলে সেনা সদস্যদের রেখে যাওয়া কেরোসিন টিনগুলো বিস্ফোরিত হয়। সাথে সাথে লঞ্চের যাত্রীরা প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে পানিতে ঝাঁপ দেয়। পাহাড়ি যাত্রীরা সাঁতরিয়ে কূলে উঠার চেষ্টা করলে অসহায় পাহাড়িদের উপর সেটলার বাঙালীরা আক্রমণ চালায়।

বোমা বিস্ফোরণে যারা হতাহত হয়েছিল তারা ছিল সবাই পাহাড়ি। আর যারা সেটলারদের হামলার শিকার হয়েছিল তারাও সবাই পাহাড়ি। কোন সেটলার বাঙালী উক্ত ঘটনায় হতাহত হননি। সেদিন সেনাবহিনী গণহত্যার অজুহাত সৃষ্টির অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে বোমাবিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে এযাবতকালে প্রায় ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এর প্রত্যেকটি ঘটনায় সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনার আজ পর্যন্ত কোন সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করা হয়নি। ফলে তথাকথিত নিরাপত্তার নামে পাহাড়ে নিয়োজিত সেনা সদস্য কতৃক বেপরোয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েই চলছে। সরকারের উচিত পাহাড়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সাংবিধানিক ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত গনহত্যাসহ সকল মানবাধিকার লঙ্ঘন জনিত ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More